আবদুল আলীমের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা

তিনি কিংবদন্তী। তিনি আবদুল আলীম। অর্থাভাবে যিনি কোন ওস্তাদজীর কাছে গান শিখতে পারেন নি। কিন্তু যিনি সৃস্টি করেছেন, তিনি তাঁকে দিয়েছিলেন অবিস্মরণীয় এক সুরেলা কন্ঠ। যার মাধ্যমে আবদুল আলীম বাংলা লোক সংগীতকে নিয়ে গেছেন অবিশ্বাস্য এক উচ্চতায়। ভাববাদী দর্শন এবং যাপিত জীবন যেখানে একাকার হয়ে গিয়েছিল। পাশাপাশি ছিলো চলচ্চিত্রের গান। ছোট বেলায় অন্যের গাওয়া গান শুনে তা আয়ত্ব করে নিতেন আবদুল আলীম। তারপর গাইতেন বিভিন্ন পালা পার্বণে, অনুষ্ঠানে। তাঁর দরাজ কন্ঠে মুগ্ধ হয়ে থাকতো শ্রোতারা। তাঁর গান শুনে ওস্তাদ সৈয়দ গোলাম আলী যোগাযোগ করিয়ে দেন গ্রামোফোন কোম্পানির সঙ্গে। ১৯৪৩ সালে মাত্র ১৩ বছর বয়সে আবদুল আলীমের কন্ঠের গান রেকর্ড হয়। যা বিস্ময়কর। সে জন্য ওস্তাদ সৈয়দ গোলাম আলীকে গুরু হিসেবে সম্মান করতেন আবদুল আলীম। পরবর্তীতে কোলকাতায় তিনি আমাদের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম এবং লোক সংগীতের আরেক মহীরুহ আব্বাসউদ্দীনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট হন। সেখানেই লোক সংগীতের পাশাপাশি শাস্ত্রীয় সঙ্গীতের তালীম নেন, বেদারউদ্দিন আহমদ, ওস্তাদ মোহাম্মদ খসরু, মমতাজ আলী খান, আবদুল লতিফ, কানাইলাল শীল, আবদুল হালিম চৌধুরী প্রমুখ সংগীতগুরুর কাছে। দেশ বিভাগের পর ঢাকায় এসে তিনি রেডিওর স্টাফ আর্টিস হিসেবে যোগ দেন। এ দেশের প্রথম সবাক বাংলা ছবি ‘মুখ ও মুখোশ’ থেকেই শুরু হয় তাঁর চলচ্চিত্রে গান গাওয়া। এ দেশের এবং বিদেশে বসবাসরত সকল বাংলা ভাষাভাষী মানুষের মনে নিজের ভালোবাসার আসনটা যেন স্থায়ী করে নিয়েছেন আবদুল আলীম। পেয়েছেন মরণোত্তর ‘একুশে পদক’ এবং ‘স্বাধীনতা পদক’। বাংলা লোক সংগীতের অমর কন্ঠশিল্পী আব্দুল আলীম ১৯৭৪ সালের ৫ সেপ্টেম্বর প্রয়াত হন। শ্রদ্ধা, শ্রদ্ধা এবং শ্রদ্ধা তাঁর স্মৃতির প্রতি।
মুজতবা সউদ