চলচ্চিত্রের একসময়ের সুদর্শন ও জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন আজিম

বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একসময়ের অন্যতম সুদর্শন ও জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন আজিম। পরবর্তিতে হয়েছেন চলচ্চিত্র প্রযোজক ও পরিচালক। নায়ক আজিম-এর মৃত্যুবার্ষিকী আজ। তিনি ১৯ বছর আগে, ২০০৩ সালের ২৬ মার্চ, ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৬ বছর। প্রয়াত এই চলচ্চিত্র ব্যক্তিত্বের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। চিত্রনায়ক আজিম (নূরুল আজিম খালেদ রউফ) ১৯৩৭ সালের ২৩ জুলাই, সিলেটের হবিগঞ্জে, জন্মগ্রহণ করেন। পৈত্রিক বাড়ি নোয়াখালীতে। তাঁর পিতার বদলির চাকুরির কারণে, দেশের বিভিন্ন জেলার বিভিন্ন জায়গায় তাঁর ছোটবেলা কেটেছে। পরে এসে ঢাকার হাটখোলার ভবগতী ব্যানার্জী রোডে, তাঁরা স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। এহতেশাম-এর বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘রাজধানীর বুকে’র (১৯৬০) সুরকার ছিলেন রবীন ঘোষ। আর রবীন ঘোষ ছিলেন আজিম-এর বন্ধু। সেই সুবাদেই আজিম ‘রাজধানীর বুকে’ ছবি’র শুটিং দেখতে যান এবং ওই চলচ্চিত্রে একটি সংলাপহীন চরিত্রে অভিনয় করেন। এরপর আরেক বিখ্যাত চলচ্চিত্র ‘হারানো দিন’-এ (১৯৬১) ছোট একটি চরিত্রে অভিনয় করেন, এভাবেই আজিম-এর চলচ্চিত্রে আগমন ঘটে। চিত্রনায়ক আজিম অভিনীত চলচ্চিত্রসমূহের মধ্যে- পয়সে, পায়েল, নতুন সুর, বেয়াকুফ, আওর গাম নেহি, মেঘ ভাংগা রোদ, সাগর, মালা, ভাওয়াল রাজা সন্ন্যাসী, আপন দুলাল, ডাকবাবু, আয়না ও অবশিষ্ট, আবির্ভাব, আযান (উত্তরণ), সাইফুল মুলক্ বদিউজ্জামাল, নয়নতারা, আমির সওদাগর ও ভেলুয়া সুন্দরী, সাত ভাই চম্পা, তানসেন, ছোট সাহেব, জংলীফুল, জংলী মেয়ে, মধুমালা, রাখাল বন্ধু, দোজখ, চেনা অচেনা, কুলি, শহীদ তিতুমীর, অরুণ বরুণ কিরণমালা, শীত বসন্ত, সন্তান, পাতাল পুরীর রাজকন্যা, পারুলের সংসার, অবাঞ্চিত, সূর্য ওঠার আগে, পদ্মা নদীর মাঝি, পিয়াসা, বেদের মেয়ে, আমার বউ, স্বর্ণকমল, রং বদলায়, নাগিনীর প্রেম, ভানুমতী, লাভ ইন জঙ্গল, নায়িকা, সুখ-দুখ, উৎস্বর্গ, গাঁয়ের বধূ, স্মৃতিটুকু থাক, মিশরকুমারী, টাকার খেলা, লাভ ইন সিমলা, আগুনের আলো, দোস্ত দুশমন, সঙ্গিনী, জীবন মরন, লাভ ইন সিংগাপুর, দোস্তী, চন্দ্রলেখা, সকাল সন্ধ্যা, সুখে থাকো, বদলা, অনুরোধ, গাদ্দার, জনি, বারুদ, নান্টু ঘটক, আকাশ কুসুম, রাজবন্দী, রাজিয়া সুলতানা, ঘরের বউ, তিনকন্যা, হাতকড়া, নাগরাণী, রকি, ফুলশয্যা, রাজবন্দী, আসমান জমিন, ভেজাচোখ, লোভ-লালসা, ধর্ম আমার মা, পরিবার, অগ্নিপুরুষ, আদিল, জ্যোতি, লালু মাস্তান, কালিয়া, কাজের বেটি রহিমা, বাংলার নায়ক, অন্যতম । চলচ্চিত্র ছাড়াও আজিম টেলিভিশন নাটকেও অভিনয় করেছেন। টিভি নাটকে অভিনয় করে নাট্যশিল্পী হিসেবেও পেয়েছেন জনপ্রিয়তা। হয়েছেন প্রসংশিত। আজিম চলচ্চিত্র পরিচালক, প্রযোজক, পরিবেশকও ছিলেন। নিজের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালীতে একটি সিনেমা হলও নির্মাণ করেছিলেন তিনি। প্রযোজক-পরিচালক হিসেবে তাঁর নির্মিত ছবিগুলো হলো- চেনা অচেনা, টাকার খেলা, জীবন মরন, প্রতিনিধি, বদলা, গাদ্দার, দেবর ভাবী, প্রভৃতি। ব্যক্তিজীবনে আজিম তাঁর সহশিল্পী একসময়ের জনপ্রিয় চিত্রনায়িকা সুজাতাকে বিবাহ করেন। তাঁর একমাত্র পুত্রসন্তান, ফয়সাল আজিম। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের একসময়ের অন্যতম সুদর্শন ও জনপ্রিয় নায়ক ছিলেন আজিম। তিনি প্রায় ৫০টির মতো ছবিতে রোমান্টিক নায়ক হিসেবে অভিনয় করেছেন। ষাটেরদশকে ঢাকার চলচ্চিত্রে নায়ক হিসেবে তিনি জনপ্রিয়তার শীর্ষে ছিলেন। তখন খুবই জনপ্রিয় ছিল আজিম-সুজাতা জুটি। এই জুটি ছিল তখনাকার যুবক-যুবতিদের হৃদস্পন্দন সৃষ্টিকারী জুটি। এই জুটির সাফল্যগাথা এখন রীতিমত কিংবদন্তীতুল্য। নায়ক আজিম পরবর্তিতে চরিত্রাভিনেতারূপে আত্মপ্রকাশ করেন এবং একজন সুঅভিনেতা হিসেবে আবির্ভূত হন।বিভিন্ন ছবিতে ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে রূপদান করেন এবং দর্শকপ্রিয়তা অর্জনে সক্ষম হন। চলচ্চিত্রাঙ্গনের মানুষের কাছে, খুব ভালো মনের মানুষ হিসেবে সুপরিচিত ছিলেন আজিম। শুনেছি ঢাকার চলচ্চিত্রে অনেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছেন তাঁর স্নেহে-সান্নিধ্যে । চলচ্চিত্রবান্ধব মানুষ হিসেবে পেয়েছেন সকলের ভালোবাসা ও শ্রদ্ধা। যদিও প্রাতিষ্ঠানিক কোনো পুরস্কার/স্বীকৃতি তিনি পাননি। তবে পেয়েছেন, চলচ্চিত্র সংশ্লিষ্ট ও সিনেমাপ্রেমী মানুষদের অকুণ্ঠ ভালোবাসা। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রের ইতিহাসে চিত্রনায়ক আজিম- চির অমলিন।
আজাদ আবুল কাশেম