২ মার্চ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পতাকা প্রদর্শনের পর, ছাত্র ছাত্রীরাও সেই পতাকা তৈরি শুরু করে

বিএলএফের বীর মুক্তিযোদ্ধা, ঢাকা সিটির গেরিলা কমান্ডার, কামরুল আলম খান খসরু নিজেই লিখেছেন পতাকা তৈরির ঘটনা। “শিবনারায়ণ দাস অতি বিশ্বস্ততার সঙ্গে ড্রইংটি মধ্যরাতে এনে সিরাজ ভাইয়ের হাতে দেন। পতাকাটি তৈরি করে এনে দেওয়ার জন্য দরকার পড়ে সাহসী ও বিচক্ষণ এক কর্মীর। সেই মধ্যরাতে আমাকে ডেকে আনা হয় ইকবাল হলের ১১৬ নম্বর কক্ষে। সিরাজ ভাই আমাকে কাপড় সংগ্রহ করে দর্জি দিয়ে সেলাই করে ড্রইংমতো পতাকা তৈরি করার দায়িত্ব অর্পণ করেন। আমি তখন মার্শাল ল কোর্ট কর্তৃক ১৪ বছরের দণ্ডাদেশ মাথায় নিয়ে সাবধানতার সঙ্গে চলাফেরা করছি। বঙ্গবন্ধু বহু চেষ্টা করেও আমাদের (আমি, মন্টু ও সেলিম) দণ্ডাদেশ বাতিল করতে পারছিলেন না। সিরাজ ভাই আমাকে বলেন, ‘যেখান থেকে পারিস এই ড্রইং অনুযায়ী একটি পতাকা তৈরি করে নিয়ে আয়, রাত ফুরাবার আগেই।’
আমি নিউমার্কেট এলাকা সংলগ্ন বস্তির (এখন সেখানে বড় মার্কেট) এক অবাঙালি দর্জির দোকানে গিয়ে দরজা নক করে বলি, আমার একটি পতাকা তৈরি করতে হবে, দরজা খোলো। তাকে ড্রইংটি দেখিয়ে বলি, এমন একটি পতাকা তৈরি করে দিতে হবে; তাড়াতাড়ি চাই। আমি তার দোকানে লাল, সবুজ, সোনালি রঙের কাপড়ের বান্ডিল খুঁজতে থাকি, কিন্তু পাইনি। অবাঙালি দর্জি বলে, এই রঙের কাপড় পাওয়া যেতে পারে খালেক দর্জির দোকানে। খালেক দর্জির দোকানটি আবার বলাকা ভবনের তিন তলায় ছাত্রলীগ অফিসের পাশে। আমি অবাঙালি দর্জিকে খালেকের দোকানে গিয়ে আমার কথা বলে ড্রইংমতো পতাকা তৈরি করে আনতে বলি। দর্জি রওনা হওয়ার পর শঙ্কায় পড়ি- ড্রইং হাতে নিয়ে দর্জি গিয়ে পাকিস্তানি আর্মিদের ডেকে না আনে! কারণ তখনকার পরিস্থিতি এমন ছিল যে, কাউকে বিশ্বাস করা যেত না। আমি নিউমার্কেটের ছাদে থাকার সময়েই মেশিনে কাপড় সেলাই করার আওয়াজ ভেসে আসে। আমি পতাকার জন্য অপেক্ষা করতে থাকি। দর্জি এসে বলে, নেন খসরু ভাই। খালেকের কাছে কাপড় ছিল। ও বানিয়েও দিল।
আমি পতাকাটি খুলে এক ঝলক দেখে তা ভাঁজ করে গেঞ্জির মধ্যে ঢুকিয়ে গন্তব্যে রওনা হই। রেললাইন এবং হলের প্রাচীর টপকে পৌঁছাই ইকবাল হলের পশ্চিম দিকের গেটের কাছে (এখন সেখানে এক্সটেনশন বিল্ডিং)। রাত তখন শেষ প্রহর। আমি হলে প্রবেশ করে দেখি, ছাত্রলীগ নেতারা রুদ্ধশ্বাসে আমার জন্য অপেক্ষা করছেন। সিরাজ ভাইয়ের হাতে পতাকাটি তুলে দিলে তিনি আমায় জড়িয়ে ধরে বলেন- আমি জানি, তুই পারবি। তখন সবাই বলল, খসরুর নামও ইতিহাসে লেখা থাকবে।”
মুজতবা সউদ