কালোজাম : রক্তে কোলেস্টেরল কমায় হার্টকে সুস্থ রাখে

আমরা অনেকেই এই ফলটির সাথে পরিচিত। ফলটি দেখতে কালো হলেও এর অনেক ভালো ভালো গুণ আছে। জাম একটি মরশুমি ফল। এই ফল জুন ও জুলাই মাসে প্রচুর পরিমানে পাওয়া যায়। এই ফল বিভিন্ন দেশে বিভিন্ন নামে পরিচিত। আমাদের পরিচিত ও সহজলভ্য বিভিন্ন ফলের মধ্যে এই ফলটির অনেক ঔষধি গুণ আছে। যা শুনলে আপনারা চমকে যাবেন। আর কখনও এটি না খেয়ে হাতছাড়া করতে চাইবেন না। কালোজামের উপকারীতাগুলি এখন জেনে নেওয়া যাক।
স্মৃতিশক্তি প্রখর করে। বয়স বাড়ার সাথে সাথে আমাদের স্মৃতিশক্তি কমতে থাকে। জামে থাকা গ্লুকোজ স্মৃতিশক্তি প্রখর করতে সাহায্য করে।
শরীরে শক্তি জোগায়। জামে গ্লুকোজ, ডেক্সট্রোজ, ফ্রুকটোজ থাকে যা শরীরকে কাজ করতে শক্তি জোগায়। হিমোগ্লোবিন বাড়ায়। জামে প্রচুর পরিমাণে আয়রন থাকে। আর আয়রন থাকার ফলে রক্তে হিমোগ্লোবিন বেড়ে যায়। যারা রক্তাপ্লতায় ভোগেন তাদের জন্য জাম খুবই উপকারী। এই ফল ইমিউনিটি বাড়াতে সাহায্য করে। কালোজামে প্রচুর পরিমানে ভিটামিন A ও C থাকে। জামে উচ্চ মাত্রায় ভিটামিন C থাকার ফলে ইমিউনিটি বাড়ায়। দাঁত ও মাড়ি ভালো রাখে। জাম হলো অ্যান্টি ম্যালেরিয়াল ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল।
এতে অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল প্রপার্টি থাকার ফলে দাঁত ও মাড়ি ভালো রাখে এবং মুখের দুর্গন্ধ দূর করে। জাম হজম করতে সাহায্য করে।
জাম হজমে সহায়তা করে আর হজমের কারণে হওয়া আলসার প্রতিরোধেও সাহায্য করে।
জাম ওজন কমাতে সাহায্য করে।
কালোজাম সর্দি-কাশি কমাতে সাহায্য করে। যারা খুব সর্দি-কাশিতে ভোগেন তাঁদের অবশ্যই কালোজাম খাওয়া উচিত। কালোজাম হার্টকে ভালো রাখে। রক্তে কোলেস্টেরল কমায় ফলে হার্ট সুস্থ থাকে। আর হার্টঅ্যাটাকের সম্ভাবনাও কমে যায়। এটি শরীরে দূষিত কার্বনডাই-অক্সাইডের মাত্রা কমায়। রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সাহায্য করে। মানসিক স্বাস্থ্য ঠিক রাখে। মস্তিষ্কে রক্ত সঞ্চালন বাড়ায়। এর ফলে মস্তিষ্ক দ্রুত চলতে থাকে। এছাড়া স্ট্রেস কমায়।
গর্ভবতী মায়েদের জন্য কালোজাম খুবই উপকারী। জামে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি থাকে। গর্ভাবস্থায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা হল প্রি একলামশিয়া। রক্তচাপ বেড়ে যাওয়া, পা ফুলে যাওয়া, জল আসা, প্রস্রাবে অ্যালবুমিন নির্গত হওয়া ইত্যাদি প্রি একলামশিয়ার লক্ষণ। ভিটামিন সি প্রি একলামশিয়া প্রতিরোধে অত্যন্ত কার্যকরি। এছাড়া গর্ভাবস্থায় শিশুর সুষ্ঠ বিকাশে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে ভিটামিন সি। পটাশিয়ামের অভাব দূর করে। গর্ভাবস্থায় পায়ে টান লাগা, খিঁচুনি এবং উচ্চ রক্তচাপের সমস্যায় ভুগে থাকেন অনেকই। শরীরে পটাশিয়ামের ঘাটতির ফলে এসব লক্ষ্মণ দেখা দেয়। জাম খেলে এসব থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। জামের মতো এর বীজও খুব উপকারী। জামে উপস্থিত জাম্বোলাইন ও জাম্বোসাইন রক্তে শর্করার মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। জামের বীজও রক্তে ইনসুলিনের মাত্রা কমাতে সাহায্য করে। জামের বীজ শুকিয়ে গুঁড়ো করে সকাল খালি পেটে খেলে ডায়েবিটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে। অধিকাংশ ডায়েবিটিস ওষুধ তৈরিতে জামের বীজ কাজে লাগে।
গ্রীষ্মকালীন অন্যান্য ফলের মধ্যে জাম অত্যন্ত উপকারী। আমাদের দেশে দু-ধরনের জাম পাওয়া যায়। বড় জাম ও ছোটো জাম। অন্যান্য মরশুমি ফলের তুলনায় এর স্থায়িত্বকাল কম হলেও এতে প্রচুর পুষ্টিগুণ আছে। তাই যে কটা দিন পওয়া যায় অবশ্যই সবার খাওয়া উচিত।
গোপাল দেবনাথ