সুভাষ দত্ত: তারকা গড়ার কারিগর কিংবা প্রতিকূলের মাঝি

বলা হয়, সিনেমার ‘ক্যাপ্টেন অব দ্য শিপ’ হলেন নির্মাতা। সে হিসেবে সিনেমা ইন্ডাস্ট্রির মূল কারিগরও নির্মাতারাই। এর মধ্যে কিছু নির্মাতা বাণিজ্যিক সাফল্য মাথায় রেখে মাসালা সিনেমা বানান, আর কারও লক্ষ্য ক্যামেরার সামনে শৈল্পিক রূপে দেশ-সমাজ-মানুষের গল্প তুলে ধরা। ভণিতা না করে বললে সুভাষ দত্ত দ্বিতীয় ঘরানার নির্মাতা। তবে শুধু এই পরিচয়ে তাকে সীমাবদ্ধ করা যায় না। ঢালিউড ইন্ডাস্ট্রিতে তার প্রভাব মোটেও কম ছিলো না। তারকা আবিষ্কারের অন্যতম কারিগর ছিলেন তিনি। তার হাত ধরেই রূপালি জগতে এসেছেন, খ্যাতি পেয়েছেন অনেক তারকা। এই তালিকায় কবরী, সুচন্দা, ইলিয়াস কাঞ্চন, উজ্জ্বলসহ অনেকের নামই রয়েছে। সুভাষ দত্তের জন্ম ১৯৩০ সালের ৯ ফেব্রুয়ারি, দিনাজপুরে। ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন দেখেছিলেন নির্মাতা হওয়ার। পারিবারিক স্বচ্ছলতার সুবাদে চাইলেই ছবি বানাতে পারতেন। কিন্তু না, তিনি হেঁটেছিলেন প্রকৃত পথে। বোম্বে গিয়ে একটি সিনেমা পরিবেশনা প্রতিষ্ঠানে মাত্র ৩০ টাকা বেতনের চাকরি নিয়েছিলেন। বেতন অবশ্য মুখ্য ছিলো না, তিনি মূলত সিনেমা জগতের অন্দরমহলে ঢুকতে চেয়েছিলেন। ১৯৫৩ সালে ঢাকায় আসেন সুভাষ দত্ত। কাজ নেন একটি প্রচারণা সংস্থায়। যেখানে তিনি পোস্টার বানাতেন। এই পোস্টারের সঙ্গে আবার মিশে আছে ঢালিউডের ইতিহাস। দেশের প্রথম সবাক চলচ্চিত্র ‘মুখ ও মুখোশ’ (১৯৫৬)। সেটার পোস্টার ডিজাইন করেছিলেন সুভাষ দত্তই। নির্মাতা হিসেবে কাজ শুরুর আগে অভিনয়েও নাম লেখান সুভাষ দত্ত। খ্যাতিমান নির্মাতা এহতেশামের নির্দেশনায় ‘এ দেশ তোমার আমার’ তার অভিনীত প্রথম সিনেমা। এরপর আরও অনেক সিনেমায় অভিনয় করেছিলেন তিনি। বলা চলে, নির্মাণে আসার আগে সিনেমার রাজপথ থেকে গলিপথ, সব বিচরণ করে নিয়েছিলেন সুভাষ দত্ত। তাই যখনই সিনেমা বানিয়েছেন, সেটা মুগ্ধতায় উপভোগ করেছে দর্শক-সমালোচকরা। ১৯৬৪ সালে জীবনের প্রথম ছবিটি পরিচালনা করেন তিনি। নাম ‘সুতরাং’। ঢালিউডের অন্যতম কালজয়ী এই সিনেমায় অভিনয়ের মধ্য দিয়ে ক্যারিয়ার শুরু করেছিলেন কিংবদন্তি অভিনেত্রী কবরী। তার নির্মিত আরও কয়েকটি উল্লেখযোগ্য সিনেমা হলো ‘কাগজের নৌকা’, ‘আয়না ও অবশিষ্ট’, ‘অরুণোদয়ের অগ্নিসাক্ষী’, ‘আবির্ভাব’, ‘বলাকা মন’, ‘সবুজ সাথী’, ‘বসুন্ধরা’, ‘সকাল সন্ধ্যা’, ‘ডুমুরের ফুল’, ‘নাজমা’, ‘আবদার’, ‘আগমন’ ইত্যাদি। চলচ্চিত্রে অসামান্য অবদানের জন্য ১৯৯৯ সালে একুশে পদক পেয়েছিলেন সুভাষ দত্ত। এছাড়া জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ আন্তর্জাতিক অঙ্গনেও কিছু পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। গেল ১৬ নভেম্বর বরেণ্য এই নির্মাতার মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হয়। ২০১২ সালের এই দিনে রূপালি দুনিয়ার নন্দিত অধ্যায়ের ইতি টেনে ওপারে পাড়ি জমান তিনি।

মোহাম্মদ তারেক