নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত লালন উৎসব

নিউইয়র্কে প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হয়েছে লালন উৎসব। ৩০ অক্টোবর রোববার জ্যামাইকা পারফরমিং আর্টস সেন্টারে উৎসবের উদ্বোধন করেন লোকগীতি ও লালন সংগীতের কিংবদন্তী শিল্পী ফরিদা পারভীন। দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত উৎসবে মানুষের ঢল নেমেছিল। উৎসবে অংশ নেয়া বোদ্ধাজনরা বলেছেন, এটি যুক্তরাষ্ট্রে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ অনুষ্ঠান। উৎসবের বিভিন্ন পর্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে ছিলেন নিউইয়র্কের কনসাল জেনারেল ড. মো. মনিরুল ইসলাম, ডা. জিয়া উদ্দীন আহমেদ, ড. সিদ্দিকুর রহমান, তাজুল ইমাম, ডা. চৌধুরী সারোয়ারুল হাসান, এটর্নি মঈন চৌধুরী, মোহাম্মদ এন. মজুমদার, হাসান ফেরদৌস, রেখা আহমেদ, রোকেয়া রফিক বেবী, আহকাম উল্লাহ, অ্যানি ফেরদৌস, লুতফুন নাহার লতা, মিথুন আহমেদ, নূরুল আমিন বাবু, টাইটেল স্পন্সর নূরুল আজিম, ফকরুল ইসলাম দেলোয়ার, খলিলুর রহমান, আহসান হাবীব ও হেলাল মিয়া। দিনব্যাপী এই উৎসবের আয়োজন করে যুক্তরাষ্ট্র লালন পরিষদ। উৎসবে যোগ দিতে ঢাকা থেকে আসেন ফরিদা পারভীন ও বরেণ্য বংশীবাদক গাজী আবদুল হাকিম। নিউইয়র্ক ও আশপাশের বাউল সংগীতশিল্পীরাও যুক্ত হয়েছিলেন। পুরো অনুষ্ঠানে একটি নতুন মাত্রা যুক্ত করেছিলেন প্রবাসী চারুশিল্পীরা। ২১ জন শিল্পীর আঁকা ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছিল ‘অচিন পাখির খোঁজে’ শিরোনামের একটি চিত্র প্রদর্শনী। এটি উদ্বোধন করেন বরেণ্য সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ, বিশেষ অতিথি ছিলেন অপর তিন বরেণ্য সাংবাদিক আজকালের প্রধান সম্পাদক মনজুর আহমদ, ঠিকানার প্রধান সম্পাদক মুহম্মদ ফজলুর রহমান ও বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ। এসময় বাংলাদেশি আমেরিকান আর্টিস্ট ফোরামের সভাপতি আর্থার আজাদ, সাধারণ সম্পাদক বিশ্বজিৎ চৌধুরী ও কানাডা থেকে প্রকাশিত দেশে-বিদেশে পত্রিকার সম্পাদক নজরুল মিন্টো অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। লালন ও তাঁর গান নিয়ে নিরীক্ষার নামে বাড়াবাড়ি হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন ফরিদা পারভীন। পরামর্শ দেন এই বাড়াবাড়ি এড়িয়ে চলার। বক্তারা বলেন, লালন ছিলেন অতি সাধারণ মানুষ। সারা জীবন সাধারণ একজন মানুষের মতো জীবনযাপন করেছেন। তাঁকে নিয়ে যে বাড়াবাড়ি, ‘সাঁইজি’ বেঁচে থাকলে তা কখনোই পছন্দ করতেন না। দ্বিতীয় একটি সেমিনারে ক্যাথলিক পাদরি ফাদার মারিনো রিগনের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। তিনি দীর্ঘদিন বাংলাদেশে অবস্থান করেছিলেন। এ সময় উল্লেখযোগ্য সংখ্যক লালনগীতি ইতালীয় ভাষায় অনুবাদ করেন। এ অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন রথীন্দ্রনাথ রায়, বেলাল বেগ, ডা. জিয়া উদ্দীন আহমেদ ও ফাহিম রেজা নূর। সঞ্চালক ছিলেন শুভ রায়। প্রবীন ও নবীন শিল্পীদের পরিবেশনায় লালনের গান নিয়ে ছিল আশাজাগানিয়া আরেকটি অনুষ্ঠান। অবিকৃত লালনকে আবিষ্কারে তাঁদের আগ্রহ সবাইকে মুগ্ধ করে। প্রবাসে যে লালনের গানের চর্চা অব্যাহত রয়েছে, তার প্রমাণ ছিল হাসানুজ্জামান সাকীর পরিকল্পনায় বিশিষ্ট গায়ক শাহ মাহবুবের গ্রন্থনা ও নির্দেশনায় সংগীতানুষ্ঠান—সাঁইর বারামখানা। সংগীতে কণ্ঠ দেন মেলাল শাহ, করিম হাওলাদার, চন্দন চৌধুরী, লিমন চৌধুরী, শাহ মাহবুব, কৃষ্ণা তিথি, রিপন রহমান, রবিন খান, কানিজ দীপ্তি, জারিন মাইশা, আলভান চৌধুরী, সাগ্নিক মজুমদার ও সামিয়া ইসলাম। নতুন ও প্রবীণ শিল্পীদের সমন্বিত অংশগ্রহণে এই অনুষ্ঠান দর্শকদের মুগ্ধ করে। প্রবাসের খ্যাতিমান শিল্পী তাজুল ইমাম ও পশ্চিমবঙ্গের শিল্পী পার্থসারথি মুখোপাধ্যায় পরিবেশিত লালনের নির্বাচিত গানের মধ্যে দুটি পরিবেশনাও সবাইকে মুগ্ধ করে। ভারতীয় কলাকেন্দ্রের পরিবেশনা “বুকের মাঝে লালন” এর নৃত্য নির্দেশনা দেন অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। ধারা বর্ণনা দেন অবন্তিকা মুখার্জী, নৃত্যশিল্পীরা ছিলেন দেবদীপা ঘোষ, ইন্দ্রানী বসু, মৌমিতা ধর ও অনিন্দিতা মুখোপাধ্যায়। মঞ্চে সহযোগিতা করেন সুদীপ্তা ঘোষ। বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব পারফরমিং আর্টস-বিপার পরিবেশনা ‘সহজ মানুষ’ নির্দেশনা দেন সেলিমা আশরাফ ও অ্যানি ফেরদৌস। সংগীত শিল্পী ছিলেন জারিন মাইশা, আলভান চৌধুরী, সামিয়া ইসলাম, কামিলা সুফী আলম, আরিয়ান কবীর ও ফাহমিন ইসলাম। উপস্থাপনায় ছিলেন নিলুফার জেরিন। অনুষ্ঠানে আগত বোদ্ধাজনরা লালন উৎসবকে যুক্তরাষ্ট্রে স্মরণকালের শ্রেষ্ঠ অনুষ্ঠান বলে মন্তব্য করেন। বরেণ্য সাংবাদিক সৈয়দ মোহাম্মদ উল্লাহ বলেন, এ ধরনের অনুষ্ঠান আয়োজন সত্যিই বিরল ও অতুলনীয়। সাপ্তাহিক আজকালের প্রধান সম্পাদক মনজুর আহমদ বলেন, অত্যন্ত প্রশংসনীয় উদ্যোগ এবং নানা বিচারে এটি শ্রেষ্ঠত্বের দাবি রাখে। বাঙালী সম্পাদক কৌশিক আহমেদ বলেন, শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত টানা প্রায় এগার ঘণ্টা নিরবিচ্ছিন্ন ভাবে অনুষ্ঠান দেখেছি। প্রত্যেকটি পর্ব ছিল অকর্ষণীয় এবং সব বিচারে শ্রেষ্ঠ।

আকবর হায়দার কিরণ, নিউইয়র্ক