প্রথমবার ‘ভিলেন’ চরিত্রে অভিনয় করেছি: রাফিয়াত রশিদ মিথিলা

দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী মিথিলা। একাধারে তিনি একজন অভিনেত্রী, গায়িকা, গীতিকার, সুরকার এবং মডেল। অন্যদিকে তিনি ব্র্যাক ইন্টারন্যাশানালের আর্লি চাইল্ডহুড ডেভেলপমেন্টের প্রধান হিসাবে কর্মরত রয়েছেন। ওপার বাংলায় চলচ্চিত্র এ তার অভিনয়ে মুগ্ধ হয়েছেন সবাই। সম্প্রতি শেষ করলেন এপার বাংলার নির্মাতা গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘কাজলরেখা’। তার সঙ্গে সমসাময়িক বিভিন্ন বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন- আফজাল হোসেন

এবার পুজোয় বাংলাদেশে ছিলেন? কেমন কেটেছে? হুমম…সপ্তমীর দিনই ঢাকায় চলে এসেছি। এই সময় আবার আইরার স্কুলের ছুটি ছিল। আর ওর স্কুল ছুটি থাকলে আমি ঢাকায় চলে যাওয়ারই চেষ্টা করি সর্বদা। বাবা-মা পরিবারের সঙ্গেই পুজোটা সেলিব্রেট করেছি এবার। ঢাকাতে পুজোটা বেশ জাঁকজমকপূর্ণভাবেই হয়। প্যান্ডেলে যাওয়া, বন্ধুদের বাড়িতে গিয়ে আড্ডা, খাওয়াদাওয়া সবই হয়। এই পূজোয় আমি আমার প্রিয় জামদানি শাড়ি পড়ে ঘুরেছি। আর সৃজিত এমনিতেই পুজোটা কলকাতায় ছিল না। ও শুটিং শেষ করে শিলং থেকে ফিরে মুম্বাই চলে যাবে। আমিও আফ্রিকায় ছিলাম, কিছুদিন আগেই ফিরেছি। দুর্গাপুজোর সঙ্গে ছোটবেলার কোন স্মৃতি জড়িয়ে আছে? বাংলাদেশে আসলে বড় করেই পুজো হয়। ওখানে আমাদের পাড়াতেই পুজো হত। ছোটবেলায় আমি যে পাড়ায় থাকতাম, সেখানে সিদ্ধেশরী কালীমন্দির আছে। ঢাকার ওই এলাকাটার নামই সিদ্ধেশরী। পুজোর সময় প্রতিবার সেখানে মেলা হত, সেখানে গিয়ে চুড়ি, টিপ এটা ওটা সেটা কিনতাম। খেলনা কিনতাম। পুজোর ঢাকে কাঠি পড়লেই গোটা পাড়ায় উৎসবের চেহারা নিত। সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঢাকের আওয়াজে সরগরম। ঠাকুর দেখা ছাড়াও খাওয়া-দাওয়ার বিশাল আয়োজন হত। দুর্গাপুজোর সেইসব স্মৃতি আমার কাছে জ্বলজ্বল করে রয়েছে। সম্প্রতি নেত্রকোনার সুসং দুর্গাপুর এলাকায় শেষ করেছেন গিয়াস উদ্দিন সেলিমের ‘কাজলরেখা’। কিছু অভিজ্ঞতা শেয়ার করবেন কি? প্রায় ৮ মাস ধরে চলা ছবিটির ক্যামেরার কাজ শেষ হয়েছে বুধবার। ৫/৬ মাস আগে প্রথম লটে অংশ নিয়েছি। আর শেষটা করলাম ৫ অক্টোবর। অভিজ্ঞতা বলতে গেলে অসাধারণ! এমন সুন্দর লোকেশন ও নেটওয়ার্কবিহীন জীবন আগে যাপন করিনি। সত্যিই জীবন সুন্দর। এখানে খুঁজে পেয়েছি মোবাইল ফোন আর টেলিভিশনহীন ভিন্ন জীবনের তল। কাছ থেকে দেখেছি পাহাড়ের ঝর্ণা ধরে বয়ে চলা ঝিরি আর গারো-হাজং সম্প্রদায়ের নেটওয়ার্কবিহীন সকাল-সন্ধ্যা। ব্যক্তিগতভাবে খুব ভালো লেগেছে যে, এমন অপরূপ পরিবেশে আমরা শুট করেছি। অনেক কষ্টও করতে হয়েছে। কিছু জায়গা খুব কঠিন ছিলো। পাহাড়ে পিচ্ছিল পথে ওঠা-নামা। কাজলরেখা চলচ্চিত্রে তো ভিলেন কঙ্কণ দাসী চরিত্রে অভিনয় করেছেন, তাই না? এই ছবির মাধ্যমে প্রথমবার অভিনয় করেছি ‘ভিলেন’ চরিত্রে! এই ছবিতে আমার মূলত দুটো লুক। যেমনটা আমাকে আগে কেউ দেখেনি। এই দুটো লুক আনতেও বেগ পেতে হয়েছে। এটাও একটা ইন্টারেস্টিং সাইড। এই ছবির সুবাদে আর কি কি নতুন অভিজ্ঞতা হয়েছে? এবারই প্রথম দৃশ্যের প্রয়োজনে ঘোড়ায় চড়েছি। প্রথম প্রথম ভালোই ভয় ভয় লেগেছিল। আর আমার চরিত্রটির জন্য একটা দৃশ্যে খুব কষ্ট হয়েছে। যেখানে দেখা যাবে, আমাকে মাটিচাপা দেওয়া হয়েছিল। সেটা ভয়ংকর অভিজ্ঞতা। গর্ত করে কোমরের ওপর পর্যন্ত আমাকে মাটিচাপা দেওয়া হয়। তখন দম বন্ধ হয়ে আসছিলো। শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। এমন কিছু দৃশ্যে বেশ কষ্ট করতে হয়েছে। এছাড়া দুইবার ভালো বৃষ্টির মুখে পড়ি আমরা। দুটো দিন বসে ছিলাম। মজার দিক হলো, একদিন ঝুম বৃষ্টিতে শুটিং প্যাকআপ। দেখলাম নির্মাতা সেলিম ভাই, ডিওপি খসরু ভাই ও সেলিম ভাই মাছ ধরতে নেমে গেলেন! অনেকগুলো পুঁটিমাছ ধরেছেন। সেগুলো পরে ডিনারে ভেজে খেয়েছি। খুব স্বাদ ছিলো। আমরা যেখানে ছিলাম হাজং ও গারোদের এলাকা সেটা। সেখানেই শুটিং সেট, সেখানেই থাকা। তারাও আমাদের অংশ ছিলো। তাদের বাড়িতে যেতাম, খেতাম, গল্প করতাম। তো ঐ জীবনটাও দেখা হলো। এটাও একটা বড় অভিজ্ঞতা। গিয়াস উদ্দিন সেলিমের সঙ্গে প্রথমবার কাজ, শরিফুল রাজের সঙ্গেও। সবমিলিয়ে কেমন ছিল? সেলিম ভাইয়ের সঙ্গে এটা আমার প্রথম কাজ। আর এমন চরিত্রেও প্রথম। ফলে এই কাজটি আমার জন্য যেমন আগ্রহের তেমন ভয়েরও ছিলো। আগ্রহ হলো- সেলিম ভাই আমাকে কাস্ট করেছেন। আর ভয়টা হলো- ভাইয়ের মতো করে আমি ডেলিভারি দিতে পারছি কী না। ফলে শুটে আমি বরাবরই সচেতন ছিলাম, সেলিম ভাই যেমন চাইছেন তেমন হচ্ছে কি না। বার বার বলছিলাম হচ্ছে তো? উনি বলেছেন, হয়েছে। জানি না আসলে কতোটা হয়েছে। অন্যদিকে সিনেমাটোগ্রাফার খসরু ভাইয়ের সাথে বিজ্ঞাপনে কাজ করেছি আগে। সঙ্গে মূল চিফ এডি ছিলেন মৌ। তো আমার অংশের শুটিংয়ে দেখা যেতো আমরা তিনজনই পরিচালকের সহকারী হয়ে থাকতাম। শরিফুল রাজের সঙ্গে আমার প্রথম কাজের অভিজ্ঞতা। দেখলাম ও খুব ঠান্ডা। তাছাড়া ও তখন খানিকটা চিন্তার মধ্যেও ছিলো পরিবার থেকে দূরে এসে। কারণ তখন ওর বাচ্চা হওয়ার সময় ছিলো। বাট ও বেশ ঠান্ডা প্রকৃতির। আর মন্দিরা (কাজল চরিত্রে) তো নতুন মানুষ। নতুন হিসেবে নির্মাতা ও সহশিল্পীদের যথেষ্ট ফলো করেছে ও। আসলে সবাই মিলে দারুণ একটা টিম ছিলাম। খুব আনন্দ করে কাজটা করেছি। সিনেমাটিতে কি উপাদান রয়েছে যে মানুষ হলে গিয়ে দেখবে? ‘কাজল রেখা’র গল্পটা তিনশ বছর আগের প্লট। মৈমনসিংহ গীতিকা থেকে নেওয়া। ফলে সেই সময়টাকে ধরার জন্য যা যা করা দরকার ছিলো, তার সবটাই করেছেন সেলিম ভাই। আর আমি মনে করি, ছবিটাতে বাংলার রূপ দেখা যাবে। দেশের বিভিন্ন প্রান্তে শুট হয়েছে। আমি হয়তো সবটাতে ছিলাম না। বাট পুরো ইউনিট বাংলার রূপ ধরতে খুলনা, সিলেট, কক্সবাজার ঘুরেছে। বাংলার ঐতিহ্যটাকে দেখা যাবে ছবিটাতে। আমি চাকরির সুবাদে পৃথিবীর অনেক দেশ ঘুরেছি, কিন্তু ‘কাজল রেখা’ আমাকে বাংলাদেশের ভেতরেই আলাদা একটা দেশ দেখালো। যে দেশ শিশুর মতো প্রকৃতির কোলে হেসে-খেলে ক্লান্ত হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। যে রূপ আমি আর দেখিনি দুচোখে, ছুঁইনি তারে শীতল ঝিরির বুকে পা ছড়িয়ে। জানি না অভিনয়ে কতোটা করতে পেরেছি বা ছবিটা কেমন হবে- বাট এই স্মৃতিটুকু থেকে যাবে। কাজলরেখা কবে মুক্তি পাবে? সম্পাদনার কাজ দ্রুত শেষ করে নতুন বছরের প্রথমাংশে ছবিটি মুক্তি দেওয়ার পরিকল্পনা নির্মাতার