তৌকীর আহমেদ দেশের একজন জনপ্রিয় অভিনেতা। কাজ করেছেন মঞ্চে, টেলিভিশনে এবং চলচ্চিত্রে। অভিনয় থেকে তিনি নাটক-চলচ্চিত্র রচনা ও নির্মাণে আসেন। পরিচালনার কাজ নিয়ে বেশি ব্যস্ত থাকলেও এখনো অভিনয়েই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন তিনি। সম্প্রতি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছে ‘বিউটি সার্কাস’, যেখানে মেলা কমিটির সভাপতি নবাব চরিত্রে তিনি অভিনয় করেছেন। তাঁর সঙ্গে সমসাময়িক বিষয় নিয়ে কথা বলেছেন নিউইয়র্ক থেকে দেশে এসেছেন কবে? এই তো ৫-৬ দিন হলো। দেশে ফিরেই ‘বিউটি সার্কাস’র হল ভিজিটে গিয়েছিলেন। সবমিলিয়ে কেমন ছিল? দীর্ঘদিন পর ‘বিউটি সার্কাস’ মুক্তি পেয়েছে। বিষয়টি আনন্দের ও উত্তেজনার। বৃহস্পতিবার যমুনা ব্লকবাস্টারে গিয়েছিলাম। অবাক করা বিষয় হচ্ছে, পুরো শোটি হাউসফুল ছিল। সিনেমাটি নিয়ে অনেক আগ্রহ ছিল। অবশেষে সবার সামনে এসেছে। আমরা অনেক পরিশ্রম করে কাজটি করেছিলাম। সেটি দর্শকের ভালো লেগেছে জেনে খুশি হয়েছি। নির্মাতা হিসেবে মাহমুদ দিদারের প্রচেষ্টা কেমন ছিল? দিদার অনেক কষ্ট করেছে। কাজটি শেষ করে হলে মুক্তিও দিয়েছে। দিদার অবশ্য গুণী ছেলে। আমি তার বেশ কিছু নাটকে কাজ করেছি। একজন চলচ্চিত্র নির্মাতা হিসেবে বুঝি, একটি সিনেমা শেষ করা কতটা কষ্টসাধ্য। আমার বিশ্বাস সিনেমাটি দর্শকের ভালো লাগবে। কারণ, দিদারের উপস্থাপনা, সবার ভালো অভিনয় ও সার্কাস নিয়ে উপাখ্যান-সবার কাছেই নতুনত্ব ও আকর্ষণীয় মনে হবে। আপনার চরিত্রটি নিয়ে অনেক পজিটিভ আলোচনা হচ্ছে… আমি যে চরিত্রটি করেছি সেটি নবাব। খুবই ইন্টারেস্টিং চরিত্র। সে খুবই উচ্চকিত, সে জোরে কথা বলে। সে নিজের অস্বিস্ত জানান দিতে চায়। তার মতামতটাকে চাপিয়ে দেয়। এবং সে ওই এলাকার রাজনীতিটা খুবই ভালো বোঝে। অত্যন্ত সুবিধাবাদী একটি চরিত্র। এটা অবশ্য আমার ইমেজের বাইরে… হাহাহা। অনেকেই নিতে পারেননি। কিন্তু চ্যালেঞ্জ তো এটাই কমফোর্টজোনের বাইরে এসে নতুন কিছু করা। তাই না? চরিত্রটি কি আরও ভালোভাবে ফুটিয়ে তোলা যেত? আসলে একটি চরিত্র কতখানি গুরুত্বের সঙ্গে উপস্থাপনা করা যেত বা কীভাবে করলে দর্শকের কাছে আরও ভালো লাগত-তা কিন্তু ডিরেক্টরের হাতে। এটা প্রত্যেক ডিরেক্টরের স্বাধীনতা যে, তিনি একটি চরিত্রকে কতটুকু স্পেস দেবেন। তবে আমার কাছে মনে হয়, আরও ভালো করা যেত। যদিও বেশির ভাগ দর্শকের কাছে আমার চরিত্রটি পছন্দ হয়েছে। কারণ, এভাবে কেউ আমাকে দেখেনি। অন্য ধরনের চরিত্রে আগেও দেখেছেন। যেমন জালালের গল্প কিংবা রাবেয়া, চিত্রা নদীর পাড়ে, নদীর নাম মধুমতী অথবা রূপকথা-সবকটিতেই ভিন্ন ভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছি। একসময় অভিনেতা দিয়েই পরিচিত ছিলাম। অভিনেতা হিসেবেই এসেছিলাম। এখন কেউ ভালো কাজে বললে করে ফেলি। ভালো লাগে এই কাজটির মধ্যে। একই দিনে দুটি সিনেমা মুক্তি পেলেও ‘বিউটি সার্কাস’ কম হল পেয়েছে, সন্ধ্যার শো পায়নি- এ বৈষম্য কেন? বৈষম্য, প্রভাব, মেনুপুলেশন তো এখন সব সেক্টরেই হচ্ছে। যার প্রভাব বেশি, সে বেশি প্রভাব খাটাচ্ছে আর যে দুর্বল তাকে সয়ে যেতে হচ্ছে সব। সিন্ডিকেশন তো এখন সব মাধ্যমেই ভীষণ প্রকট। অনিয়ম নিয়ে কথা বলতে গেলেই বিপদ। অনিয়ম, সিন্ডিকেশন, স্বজনপ্রীতি থাকে, আছে। তবে ব্যক্তি প্রভাবে বা সুবিধায় একটা বড় অংশ কাজের উৎসহ হারায়। পুরস্কার, অনুদান, সিনেমার হল পাওয়া, ছবি মুক্তি- সবই তো এভাবেই হচ্ছে। আসলে প্রভাব প্রকট হলে মিডিয়ার স্বাভাবিক বিকাশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সিনেমার এখন ভালো সময়। এমন নয় যে, সিনেমা কম হচ্ছে এখন। নানারকম প্রতিকূলতা কাটিয়ে দর্শকের সামনে অনেক কষ্ট করে নিয়ে আসেন নির্মাতারা। এমনিতেই এখন ভালো জিনিস সমাদৃত হয় না। তাই আমাদের এই কষ্টকে মূল্যায়ন করতে হবে। উৎসাহ দিতে হবে। দর্শকের দেখার তো সুযোগ দিতে হবে, তাই না? ভালো হলে দর্শক গ্রহণ করবে, খারাপ হলে রিজেক্ট করবে। এই সময়ে সিনেমার প্রচারণা সঠিক পদ্ধতিতে হচ্ছে? সিনেমা প্রচারণায় অনেক পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। ভালোটাকে ভালো না বলে পেইড পাবলিসিটিতে ভালো বলার প্রচলন চালু হয়েছে। ইউটিউব, ফেসবুককেন্দ্রিক অনেক পেইড গ্রুপও রিভিউ দিচ্ছে খারাপটাকে ভালো বলে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণ জরুরি। জহির রায়হান, আমজাদ হোসেন, তারেক মাসুদের সিনেমা ভালো বলেই এখনো টিকে আছে। বাণিজ্য দরকার, তবে গুণগত মান ঠিক রেখে। আপনাদের সময় অন্তরালের খবর সামনে আসত না, এখন তো তারকারা তাঁদের ব্যক্তিগত বিষয়, প্রেম, বিয়ে, সন্তান সামনে নিয়ে আসেন। তারকাদের ক্ষেত্রে এ বিষয়টি কি শোভনীয়? যাহা ভালো তাহা ভালো। আর যাহা সুন্দর তাহা সর্বদাই সুন্দর। তারকাদের সর্বপ্রথম ভালো মানুষ হওয়া জরুরি। সবার অনুকরণীয় হওয়া দরকার। ১০ জন যখন তাঁকে দেখবে, তাঁর কথা শুনবে, আচরণ দেখবে- যেন অনুকরণের মতো কিছু পায়। তারকাদেরও ব্যক্তিজীবনে অনেক টানাপোড়েন, সমস্যা থাকবেই। সেটা সঠিকভাবে হ্যান্ডেল করতে হবে। আইডল বলেই তারকাদের সব বিষয় খেয়াল করেন ভক্তরা। তারকাদের জীবন কঠিন, সাধারণ মানুষের মতো নয়। রিস্ক যেমন বেশি তেমনি প্রাপ্তিও বেশি। এ সময় কি সেই রূপনগর, অয়োময়, সংশপ্তক বা কোথাও কেউ নেই-এর মতো কাজ নির্মাণ সম্ভব? আমার মনে হয় সম্ভব নয়। জনরুচি বলে যে কথা আছে তার পরিবর্তন হয়েছে। সবাই এখন অস্থির। মূল্যবোধের অবক্ষয় ঘটেছে। কনটেন্টের দিক থেকে অনেকেই ভায়োলেন্স, থ্রিলার, নেতিবাচক গল্পে নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে। ভালো নাটক কারা দেখবে? সবাই তো চ্যানেল, ইউটিউব আর ওটিটিতে থ্রিলার, ক্রাইম দেখতে পছন্দ করে। সেখানেই পূজি খাটাবে, যেখানে পাবলিসিটি বেশি। এভাবেই সিনেমা খারাপ হয়েছিল, নাটকেও হচ্ছে। কত দিন দেশে আছেন? নতুন প্রজেক্ট শুরু করবেন কি? মাসদুয়েক দেশে আছি। দেখি কি করা যায়! দুই-একটি কাজে অভিনয় করার চেষ্টা থাকবে। আর মেকিংয়ের কাজটা এ সময় না হলেও প্রস্তুতি নেব। আগামী বছর শুট শুরু করব। প্রি-প্রোডাকশনের কাজ এ বছর করে রাখতে চাই। অর্থহীন কিছুই করতে চাই না। সাতটি বানিয়েছি। নিজের নির্মিত সিনেমাগুলো যখন দেখি, ভালো লাগে।
আফজাল হোসেন