করোনা ভ্যাকসিন ও সপ্নবাজ হারুনুর রশিদের গল্প

করোনার ভ্যাকসিন আবিস্কারের জন্য সবাই যখন যুক্তরাষ্ট্র, চীন, ব্রিটেনের দিক তাকিয়ে তখন বাংলাদেশে বসে একজন স্বপ্ন দেখেছেন বিশ্বকে মহামারী মুক্ত করার। এজন্যই তিনি অদম্য সাহস নিয়ে কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করেছেন ভ্যাকসিন গবেষণার জন্য। সেই মানুষটির নাম হারুনুর রশিদ। গত দুই জুলাই তার প্রতিষ্ঠিত গ্লোব ফার্মাসিউটিক্যালসের সহযোগী প্রতিষ্ঠান গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড ভ্যাকসিন আবিস্কারে সফল হওয়ার ঘোষণা দিয়েছে। প্রতিবেশি ভারতের মতো বড় দেশ এখন পর্যন্ত যে কাজটি পারেনি সেটা করে দেখিয়েছে বাংলাদেশে। দেশের এই অর্জন নিয়ে হারুনুর রশিদ বলেন, ‘এই ভ্যাকসিনটি বাকি ধাপগুলোতে সফল হলে আমরা এটা বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধুর প্রতি উৎসর্গ করতে চাই।’
ডা. কাকন নাগের নেতৃত্বে ডা. আসিফ সহ এক দল মেধাবী বিজ্ঞানির সাধনার ফসল এই উদ্ভাবন। তাদেরকে সব সময় পেছন থেকে উৎসহ দিয়েছেন হারুনুর রশিদ। অনেকের বাধা সত্তেও তার ঐকান্তিক প্রচেষ্টার ফসল আজকের এই আবিস্কার। এই ভ্যাক্সিন উদ্ভাবনের জন্য তিনি অকাতরে খরচ করেছেন কোটি কোটি টাকা, যুগিয়েছেন সাহস। তাকে কখনো হতাশ হতে দেখিনি।
জনাব হারুনুর রশিদ বাংলাদেশের একজন প্রথিতযশা শিল্পপতি। তিনি সফট ড্রিংস, বিস্কুট, এডিবল অয়েল, ফারমাসিউটিকেলস, ফিসারিজ, মাল্টিমিডিয়া সহ বিভিন্ন রকম ব্যাবসায়ের সাথে জড়িত। তার শিল্প গ্রুপে প্রায় ১০ হাজার লোক কাজ করেন।
জনাব হারুনুর রশিদ বাংলাদেশের বাজারে অনেক নতুন নতুন পণ্য এনেছেন। তার মধ্যে অন্যতম এনার্জি ড্রিংকস। তিনিই প্রথম বাংলাদেশে ‘রয়েল টাইগার’ নামক এনার্জি ড্রিংক বাজারে এনেছিলেন। কোক, পেপসি কে পিছনে ফেলে ‘টাইগার এনার্জি ড্রিংক’ এদেশের বাজারে সবচেয়ে জনপ্রিয় ব্রান্ড হিসাবে ভোক্তার আস্থা অর্জন করেছে। সম্প্রতি তিনি দেশে উৎপাদিত প্রথম সানফ্লাওয়ার অয়েল ‘রয়েল শেফ’ নামে বাজারে এনেছেন। তাছাড়া ‘ব্রিটল বিস্কুট’ এক সময় বাজার মাত করেছিল। ‘টিফিন বিস্কুট’ এখন বাচ্চাদের কাছে সবচেয়ে জনপ্রিয়। ডেলিসিয়া বিস্কুট, বুস্টার বিস্কুট, ইউরো কোলা, ফিজ আপ ভোক্তার আস্থা অর্জন করেছে।
জনাব হারুনুর রশিদ বিভিন্নরকম জন হিতকর কাজে জড়িত। নোয়াখালী অঞ্চলে তিনি বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, মসজিদ, মাদ্রাসা প্রতিষ্ঠা করেছেন। অনেকের মত বিদেশে বাড়ি, গাড়ি না করে তিনি দেশে বিভিন্ন ইন্ডাস্ট্রি করেছেন। ভবিষ্যতে তিনি দেশে ক্যান্সার হাস্পাতাল করার পরিকল্পনা করেছেন। তার পারিবারের অনান্য সদস্যরা তার সাথে এই শিল্প গ্রুপে জড়িত।
নোবেল করোনাভাইরাস মাহামারী সারা বিশ্বের চিত্র পাল্টে দিয়েছে। ভয়ঙ্কর এই ভাইরাস সারা পৃথিবীর মানুষকে ঘরে বন্দী থাকতে বাধ্য করেছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য বিখ্যাত সব ওষুধ প্রতিষ্ঠানগুলো ভ্যাক্সিন আবিস্কারের চেষ্টা চলাচ্ছে। বিশ্ব সাস্থ্য সংস্থার সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ৩৯টি দেশ দিন রাত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে ভ্যাক্সিন আবিস্কারের জন্য।
গ্লোব বায়োটেকের রিসার্চ প্রধান ডা. আসিফ বলেছেন, আমরা বিষয়টি নিয়ে এখন সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তরে যাব। এরপর আমরা তাদের দেয়া গাইডলাইন অনুযায়ী পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করব।
তিনি বলেন, এনসিবিআই ভাইরাস ডেটাবেজ অনুযায়ী মঙ্গলবার পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী পাঁচ হাজার ৭৪৩টি সম্পূর্ণ জিনোম সিকোয়েন্স জমা হয়েছে যার মধ্যে বাংলাদেশ থেকে জমা হয়েছে ৭৬টি। উক্ত সিকোয়েন্স বায়োইনফরম্যাটিক্স টুলের মাধ্যমে পরীক্ষা করে গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড তাদের টিকার টার্গেট নিশ্চিত করে যা যৌক্তিকভাবে এই ভৌগোলিক অঞ্চলে অধিকতর কার্যকরী হবে। ওই টার্গেটের সম্পূর্ণ কোডিং সিকোয়েন্স যুক্তরাষ্ট্রের এনসিবিআই ভাইরাস ডাটাবেজে জমা দিয়েছি যা ইতোমধ্যেই এনসিবিআই কর্তৃক স্বীকৃত ও প্রকাশিত হয়েছে।
সব কিছু ঠিকভাবে এগোলে চলতি বছরের ডিসেম্বর নাগাত ভ্যাকসিনটি বাজারে আনা সম্ভব বলে মনে করেন ডা. আসিফ।
গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড ২০১৫ সালে ক্যান্সার, আর্থ্রাইটিস, রক্তস্বল্পতা, উচ্চ রক্তচাপ, অটোইমিউন ডিজিজসহ অন্যান্য দুরারোগ্য রোগ নিরাময়ের জন্য বায়োলজিক্স, নভেল ড্রাগ এবং বায়োসিমিলার উৎপাদনের লক্ষ্যে অত্যাধুনিক গবেষণাগার স্থাপনের মাধ্যমে যাত্রা শুরু করে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনে ‘গ্লোব বায়োটেক লিমিটেড’ গবেষণার পাশাপাশি কভিড-১৯ ‘শনাক্তকরণ কিট, টিকা এবং ওষুধ’ আবিষ্কার সংক্রান্ত গবেষণা শুরু করে।
আলমগীর কবির