প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলীর কন্যা কণ্ঠশিল্পী ও উপস্থাপক আলিফ আলাউদ্দিনের দুটো কিডনিই প্রায় অকেজো হয়ে গেছে। এ শিল্পী জানান, চিকিৎসকের সর্বশেষ প্রতিবেদন থেকে জানতে পারেন তার দুটি কিডনির ৮০ ভাগ বিকল।
তাই দ্রুত সময়ের মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপনের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা। আলিফ ও তার পরিবারের সদস্যরা এখন সেই প্রস্তুতি নিচ্ছেন।
আলিফ আলাউদ্দিন জানান, এই অসুখটি তিনি পেয়েছেন তার মায়ের সূত্রে। কারণ এটি জেনেটিক রোগ। তার মা সংগীতশিল্পী সালমা সুলতানাও একই রোগে ভুগে বিদায় নেন ২০১৬ সালে।
আলিফ বলেন, ‘আমি মূলত এই অসুখে ভুগছি গেল ১০ বছর ধরে। এই দশটা বছর আমি একা যুদ্ধ করেছি অসুখটির সঙ্গে। পরিবারের সদস্যদের বাইরে যা কাউকে বলিনি। চেষ্টা করেছি সবসময় হাসিমুখে থাকতে। কিন্তু দিন দিন যেদিকে যাচ্ছি তাতে আর লুকোতে পারলাম না নিজেকে। মনোবল ভেঙে যাচ্ছিল। এটা সত্যি, আপনাদের সবার সঙ্গে শেয়ার করতে পেরে নিজেকে খানিক হালকা লাগছে। এখন আমি অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী।’
কথায় কথায় এই শিল্পী আরও জানান, কিডনি প্রতিস্থাপন করা ছাড়া এখন আর তেমন কোনও বিকল্প নেই। সেই প্রস্তুতি শুরু হয়েছে এরমধ্যে। আর এগুলো ব্যবস্থাপনার সঙ্গে জড়িত রয়েছেন আলিফের স্বামী মিউজিশিয়ান কাজী ফয়সাল আহমেদ, আপন মামা সংগীত পরিচালক শওকত আলী ইমন ছাড়াও নির্মাতা-উপস্থাপক আনজাম মাসুদ।
আলিফের মামা শওকত আলী ইমন বলেন, ‘আমরা পরিবারের সব সদস্যরাই ওর সঙ্গে আছি। বরং এখন আমাদের বাড়তি পাওনা হলো আনজাম মাসুদ ভাইসহ পুরো মিডিয়া তার সঙ্গে আছে। আজকে বিষয়টি ফেসবুকে প্রথম প্রকাশ করেন আনজাম ভাই। এরপর আলিফ বা আমরা পরিবারের সদস্যরা মিডিয়া থেকে যে মানসিক সাপোর্ট পাচ্ছি, সেটা তো আসলে চিকিৎসা করে পাওয়া যায় না। সবার এমন ভালোবাসার জোরে আলিফ নিশ্চয়ই পুরো সুস্থ হয়ে উঠবে।’
কিন্তু চলমান মহামারির মধ্যে কিডনি প্রতিস্থাপনের প্রক্রিয়া সম্ভব কি না? বা এটার জন্য বিদেশে যেতে হবে কি না- এমন প্রশ্নের জবাবে উপস্থাপক আনজাম মাসুদ জানান, আলিফের এই অসুখটির নাম পলিসিস্টিক কিডনি ডিজিজ। এই অসুখের চিকিৎসা প্রক্রিয়া বেশ দীর্ঘ। কিডনি প্রতিস্থাপনের বিষয়টিও বেশ জটিল ও ব্যয়সাপেক্ষ। তবে কিডনি প্রতিস্থাপনের জন্য পরিবার থেকে সিদ্ধান্ত হয়েছে। তার আগ পর্যন্ত ডায়ালাইসিস চলবে। সঙ্গে কিডনি ডোনারসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতিও চলবে। যেটির জন্য আরও দুই মাস সময় লেগে যাবে। ততোদিনে করোনা মহামারি কেটে যেতে পারে বলে ধারণা করছেন আলিফ পরিবারের সদস্যরা।
আলিফ আলাউদ্দিন এখন নিজ বাসাতেই আছেন। প্রয়োজনে যাচ্ছেন হাসপাতালে, নিচ্ছেন চিকিৎসক পরামর্শ। চলছে নিয়মিত ডায়ালাইসিস।
প্রখ্যাত সংগীত পরিচালক আলাউদ্দিন আলী মানসিকভাবে খুবই শক্ত একজন মানুষ। যিনি নিজেও লম্বা সময় ধরে যুদ্ধ করছেন ক্যানসারের সঙ্গে। সম্ভবত সেই মনখারাপের খবরের সঙ্গে নিজেকে যুক্ত করতে চাননি তারই উত্তরসূরি আলিফ আলাউদ্দিন।
তবে এবেলায় এসে আর নিজেকে লুকোতে পারেননি। আলিফ আলাউদ্দিনের কণ্ঠে এখন কান্নার রেশ, বাঁচার ইচ্ছা। বললেন, ‘আমি আমার ছোট্ট মেয়েটার জন্যে আরও কিছুদিন বাঁচতে চাই। শুধু ওর জন্য।’
প্রসঙ্গত, গেল প্রায় ২০ বছর ধরে গান গাওয়ার পাশাপাশি আলিফ আলাউদ্দিন ক্যারিয়ারের শুরু থেকেই মিউজিক্যাল শো উপস্থাপনা করে আসছেন। তার উপস্থাপনার শুরু হয় একুশে টিভির টেরিস্টরিয়াল সম্প্রচার থেকে। আর গেল ক’বছর ধরে উপস্থাপনা করছেন একাত্তর টিভির ‘মিউজিক বাজ’ অনুষ্ঠানটি।
রোমান রায়