একজন মা’র আবেগের চেয়ে ওদের আবেগ কতো বেশি : দেবী গাফফার

আমার দুই ছেলে মারা যাওয়ার পরে দীপ আমার একমাত্র ছেলে। একেবারে কলিজার টুকরা। করোনা আসার পর থেকে ওর সাথে আমার যুদ্ধ হচ্ছে, বাইরে যাওয়া নিয়ে।এক সপ্তাহ ঠিক ছিলো, আবার বাইরে যাওয়া শুরু।
রাগারাগি ভালোবাসা, হাতে পায়ে ধরে অনেক বুঝানোর চেষ্টা করে ব‍‍্যর্থ হই। ও নিজে বাইরে যায় সাথে আবার দুই তিনজন বন্ধুও নিয়ে আসে।
আমরা বাসায় সাতজন মানুষ, কার ও জীবনের নিরাপত্তা নেই। করোনার ভয়ে দিশেহারা।
শেষে না পেরে থানায় ফোন করি, ওসি সাহেব কে বলি আমার ছেলেটাকে কিছুদিন হাজতে রাখেন। ওসি সাহেব বললেন, এই অবস্থায় আমরা কাউকেই রাখছি না। সিদ্ধান্ত তো একটা নিতে হবে। ভয়ে সারারাত ঘুমাতে পারি না।
আমার বাসা ৪৫০০ স্কয়ার ফিট। এতো বড় বাসায় ওকে রাখতে পারছি না ভেবে মনের ভিতরে রক্তক্ষরণ হতে থাকে। এক মুহূর্তে সিদ্ধান্ত নিলাম নিচে একটা ছোট্ট রুম আছে, অন্ধকার টাইপ, একটা জানালা। বাথরুমে পেন। ও যখন আবার বাইরে যায় তাড়াতাড়ি করে করে ওর বিছানাপত্র নিচে দিয়ে ওকে ফোন করে বলি, বাবা তোমার বিছানা নিচে দেওয়া আছে, কটাদিন কষ্ট করে থাকো, উপরে এসো না।
এই কথাটুকু বলার সময় আমার পৃথিবীতে তুফান হচ্ছিলো। ইচ্ছে করছিলো ওকে জড়িয়ে ধরে বুকের মাঝখানে আটকে রাখি। আমি জান বাঁচানো ফরজের কাছে চূর্ণ-বিচূর্ণ হয়ে হেরে গেলাম। আচ্ছা বলে, আমার কলিজাটা নিচে চলে গেলো।
আজ এক সপ্তাহ, না আমি ঘুমাতে পেরেছি, না আমি এক দণ্ড স্বস্তি পেয়েছি। আমি দীপকে এসএমএস দিয়ে শুধু বলেছি, বাবা মার এই অপরাধ ক্ষমা করে দিও। উত্তর দিয়েছে, মা এটা কোন ব‍্যাপার না। সব কিছু নিচে পাঠাই, কিন্ত কোথায় যেনো আমার শ্বাস নিতে কষ্ট হয়। এই লেখাতেও আমি আমার বাচ্চাকে বলবো মাকে ক্ষমা করে দিও।
এইসব একান্তই আমার বাসার ব‍্যাপার। যে কারণে বললাম, এত এত লোকের জানাজা নাকি আবেগ থেকে হয়েছে। একজন মার আবেগের চেয়ে ওদের আবেগ কতো বেশি? ওরা কি একাই আবেগের চাষ করে? এই সব লোকেরা কবে নিজের ও পরের জীবনের মূল‍্যায়ণ করবে?
এভাবেই নিজের আবেগঘন স্ট্যাটাস ফেসবুকে দেন দেবী গাফফার।
(ফেসবুক থেকে সংগৃহীত)