যে কোনো প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তির জীবনের নেপথ্যে থাকে মায়ের বিশাল অবদান। মায়ের দিক নির্দেশনাই সন্তানকে পৌঁছে দেয় তার লক্ষ্যে। তারকাদের জীবনও এর বাইরে নয়। বলিউডের কয়েকজন তারকা মা রয়েছেন, যারা নিজেদের সন্তানদের গড়ে তুলেছেন নিজেরই অভিজ্ঞতার আলোয়। মায়ের দেখানো পথ ধরেই তারা হেঁটেছেন সাফল্যের পথ।
ভারতীয় চলচ্চিত্র দুনিয়ার এক সময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া বচ্চন, সুচিত্রা সেন, শর্মিলা ঠাকুর, হেমা মালিনী, ডিম্পল কাপাডিয়া, তনুজা, নীতু কাপুর, অমৃতা সিং, ববিতা, অপর্ণা সেন ও শ্রীদেবী। এই বিখ্যাত মায়ের সন্তান অভিষেক বচ্চন, সোহা আলি খান-সাইফ আলি খান, মুনমুন সেন, এশা দেওল, টুইঙ্কেল খান্না, কাজল-তানিশা, কাজল, রণবীর কাপুর, কারিশমা-কারিনা, সারা আলি খান, কঙ্কনা সেন শর্মা ও জানভি কাপুর।
মায়ের পথ ধরে চলচ্চিত্র দুনিয়ায় পা রেখেছেন অনেক অভিনেতা-অভিনেত্রী। কেউ মায়ের পরিচয়ে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন কেউবা নিজেদের পরিচিতি গড়েছেন নিজের যোগ্যতায়। বিশ্ব মা দিবস (১৪ মে) উপলক্ষে বাংলানিউজের পাঠকদের জন্য বিশেষ আয়োজন ‘মা সন্তানদের স্মৃতিকথা’
জয়া বচ্চন-অভিষেক বচ্চন
বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী জয়া বচ্চনের একমাত্র ছেলে অভিষেক বচ্চন। মায়ের মতোই অভিনয় জগতে কাজ করলেও খুব একটা সফলতা পাননি বলিউডের এই অভিনেতা। তবে প্রায় খবরের শিরোনামে আসে ‘ধুম’খ্যাত এই তারকার নাম।
শর্মিলা ঠাকুর-সোহা আলি খান
সৌন্দর্যের প্রতীমা শর্মিলা ঠাকুর। নবাব মনসুর আলী পতৌদির স্ত্রী ও কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের বংশধর শর্মিলা ঠাকুর ছিলেন অসাধারণ এক অভিনেত্রী। ১৯৬৯ সালে মনসুর আলীকে বিয়ে করলে তার ঘরে তিন সন্তান হয়। ১৯৭০ সালে সাইফ আলি খান , ১৯৭৬ সালে সাবা আলি খান ও ১৯৭৮ সালে সোহা আলি খানের জন্ম। মেয়ে সোহা আলি খান চলচ্চিত্রে তার অভিনয় দিয়ে তেমন জাদু দেখাতে পারেননি। দেখতে মায়ের মতো হলেও মায়ের জনপ্রিয়তার ধারে কাছেও যেতে পারেননি সোহা, তবে জনপ্রিয়তা কম পাননি। তবে ছেলে সাইফ আলি খান এখনও বলিউড ইন্ডাস্ট্রির সেরা নায়কদের মধ্যে একজন।
হেমা মালিনী-এশা দেওল-অহনা দেওল
সত্তর ও আশি দশকের ‘ড্রিম গার্ল’ খ্যাত অভিনেত্রী হেমা মালিনী। নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছিলেন বলিউডের সেরা নায়িকাদের একজন হিসেবে। এখনও নিজের সৌন্দর্য আর যোগ্যতায় তারকাখ্যাতি বহাল রেখেছেন। তেমনি পিছিয়ে নেই ব্যক্তিগত জীবনেও। ১৯৮০ সালে সে সময়ের জনপ্রিয় বলিউড অভিনেতা ধর্মেন্দ্রকে বিয়ে করেন। এরপর ১৯৮২ সালে এশা দেওল ও ১৯৮৪ সালে অহনা দেওলের মা হন তিনি। বড় মেয়ে এশা দেওলকে নিয়ে আসেন চলচ্চিত্রে। মাকে অনুকরণ করে রূপালি জগতে এলেও দর্শকদের প্রত্যাশায় জায়গা করে নিতে পিছিয়ে যান তিনি। ছোট মেয়ে অহনা দেওল ‘গুজারিশ’ ছবির মাধ্যমে সহ-পরিচালক হিসেবে আত্মপ্রকাশ করেছেন।
ডিম্পল কাপাডিয়া-টুইঙ্কেল খান্না
সত্তর ও আশি দশকের সব বয়সী দর্শকের হৃদয় স্পর্শ করেন জনপ্রিয় নায়িকা ডিম্পল কাপাডিয়া। ‘ববি’ ও ‘সাগর’ ছবিতে অভিনয়ের সুবাদে শুধু ফিল্মফেয়ার অ্যাওয়ার্ডই নয়, সৌন্দর্য আর অভিনয়গুণে পেয়েছেন প্রশংসা। ৫৪ বছর চলছে। সুযোগ পেলেই অভিনয় করেন। ১৯৭৩ সালে বলিউড অভিনেতা রাজেশ খান্নাকে বিয়ে করেন ডিম্পল। এরপর ১২ বছর বিরতি দিয়ে ১৯৮৪ সালে আবারও অভিনয়ে ফেরেন। এর মাঝের সময়টায় ১৯৭৪ সালে টুইঙ্কেল খান্না ও ১৯৭৭ সালে রিঙ্কী খান্না নামে দুই সন্তান জন্ম দেন। দুই মেয়েকেই বলিউড ফিল্মে প্রতিষ্ঠিত করার স্বপ্ন ছিলো তার। বড় মেয়ে টুইঙ্কেল খান্না মায়ের স্বপ্নের পথ ধরে কিছুদূর এলেও অক্ষয় কুমারকে বিয়ে করে অভিনয় থেকে পুরোপুরি সরে যান। আর ছোট মেয়ে রিঙ্কী খান্না বলিউডে নাম লেখাতে না লেখাতেই হারিয়ে যান।
তনুজা-কাজল-তানিশা
‘বাহারে ফির আয়েঙ্গে’ ও ‘জুয়েল থিফ’ ছবির মিষ্টি মেয়েটির হাসির কথা বলিউড দর্শকরা এখনো ভুলতে পারেননি। এ মিষ্টি হাসির মেয়েটি হলেন সে সময়ের জনপ্রিয় নায়িকা তনুজা। এক সময় নিজের ক্যারিয়ারে প্রতিষ্ঠিত থাকলেও বর্তমানে কাজলের মা হিসেবেই দর্শক বেশি চেনেন তাকে। ১৯৭৩ সালে সমু মুখার্জিকে বিয়ে করেন তনুজা। এরপর ১৯৭৪ সালে কাজল ও ১৯৭৮ সালে তানিশার জন্ম হয়। বড় মেয়ে কাজল সৌন্দর্য ও যোগ্যতায় কোনো অংশে মায়ের চেয়ে পিছিয়ে নেই। স্বামী অজয় দেবগন ও দুই সন্তানকে নিয়ে পুরোপুরি সংসারী হয়ে গেলেও মাঝে মধ্যেই অভিনয়ে চমক দেখাচ্ছেন কাজল। অভিনয়ে মাধ্যমে মায়ের প্রকৃত সন্তান হিসেবে নিজেকে প্রমাণ করেছেন তিনি। অন্যদিকে ছোট মেয়ে তানিশা অনেকটাই ব্যর্থ।
নীতু কাপুর-রণবীর সিং
মায়ের পথেই হাঁটছেন বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেতা রণবীর কাপুর। ‘আনজানা আনজানি’, ‘তামাশা’, ‘জাগ্গা জাসুস’, ‘ইয়ে জাওয়ানি হ্যায় দিওয়ানি’, ‘অ্যায় দিল হ্যায় মুশকিল’, ‘রকস্টার’-এর মতো ছবিগুলো ভক্তদের উপহার দিয়েছেন বলিউডের এই অভিনেতা। সঞ্জয় দত্তের জীবনী নিয়ে নির্মিত ‘সঞ্জু’ ছবির কাজ নিয়েই আপাতত ব্যস্ত ৩৫ বছর বয়সী এই অভিনেতা।
অমৃতা সিং-সারা আলি খান
‘মার্দ’, ‘বেতাব’, ‘আয়না’, ‘নাম’ ও ‘টু স্টেট’র মতো ব্যবসায় সফল ছবিগুলোতে অভিনয় করেছেন অভিনেত্রী অমৃতা সিং। তবে এখন খুব একটা রূপালি পর্দায় পাওয়া যায় না তাকে। ১৯৯১ সালে বলিউড অভিনেতা সাইফ আলি খানকে বিয়ে করেন অমৃতা। এরপর ১৯৯৩ সালে মেয়ে সারা আলি খান ও ২০০১ সালে ছেলে ইব্রাহিম খানের জন্ম হয়। একই বছর বিচ্ছেদ ১০ বছরের সংসারের ইতি টানেন সাইফ-অমৃতা। অমৃতার মেয়ে সারা এখন মায়ের মতোই অভিনয় জগতে পা রেখেছেন। এরই মধ্যে ‘কেদানাথ’ নামে একটি ছবিতে কাজ করেছেন সারা। মুক্তি অপেক্ষায় রয়েছে সেটি। এছাড়া খুব শিগগিরই করণ জোহর প্রযোজিত ও রোহিত শেঠি পরিচালিত ‘সিম্বা’র কাজ শুরু করবেন সারা।
ববিতা-কারিশমা-কারিনা
বলিউডের স্বার্থক মা বলা যায় একসময়ের জনপ্রিয় অভিনেত্রী ববিতাকে। সত্তর আশির দশকের সফল অভিনেত্রী তিনি। ১৯৭১ সালে তিনি রণধীন কাপুরকে বিয়ে করেন। তার ঘর আলো করে আসে কারিশমা কাপুর ও কারিনা কাপুর। দু’জনই বলিউডের প্রতিষ্ঠিত অভিনেত্রী। কারিশমা নব্বই দশকে রাজত্ব করেছেন, অন্যদিকে কারিনা কাপুর এখন অপ্রতিদ্বন্দ্বী। অভিনেতা স্বামী সাইফ আলি খান ও ছেলে তৈমুর আলি খানকে নিয়ে ভালোই যাচ্ছে তার দিনকাল।
অপর্ণা সেন ও কঙ্কনা সেন
মিষ্টি হাসি ও পাগল করা চোখের চাহনি মা-মেয়ে দু’জনের মধ্যেই। মা অপর্ণা সেন পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হবার আগে কলকাতার একজন নামী অভিনেত্রী ছিলেন। অন্যদিকে মেয়ে কঙ্কনা সেন বলিউডে নিজের যোগ্যতা দেখিয়েছেন বহুবার। চ্যালেঞ্জিং যে কোনো চরিত্রে তিনি মানিয়ে যান। মা মেয়ে দু’জনই সমানতালে জনপ্রিয়তা কেড়ে নিতে সক্ষম হয়েছেন ভক্তদের কাছ থেকে।
শ্রীদেবী-জানভি কাপুর
বলিউডের জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্রীদেবী। ৩০০’র বেশি ছবিতে অভিনয় করেছেন তিনি। কিন্তু গত ২৪ ফেব্রুয়ারি হঠাৎ করেই না ফেরার দেশে চলেন যান ‘চাঁদনি’। প্রয়াত এই অভিনেত্রীর মতো অভিনয় জগতে নাম লিখিয়েছেন তার মেয়ে জানভি কাপুর। খুব শিগগিরই মুক্তি পেতে যাচ্ছে শ্রীদেবী কন্যা অভিনীত ‘ধাড়াক’।