ছবি দেখে কি মনে পড়ে ইনাদের? একটা গানের সূত্র দিলে মনে পড়ে যেতেও পারে। “তোমারই জীবনে, এলো কি আজ বুঝি, নতুন কোন অভিসার/ আমি এসেছি জেনে কি, তোমার মনে কি, ফাগুন খুলে দিলো দ্বার…” ১৯৬৬ সালে সাড়া জাগানো এই গানের গায়িকা নাজমা জামান। এ দেশের প্রথম পপ বা ব্যান্ড তারকা। শুধু এ দেশেরই বা বলি কেন, এই উপমহাদেশে এই ধাঁচের গান তখনও পর্যন্ত কেউ শুনেছিলেন বলে মনে পড়ে না। অন্তত আকাশবাণী থেকে প্রচারিত হয়নি। ঢাকা ও লাহোর, পরে করাচী ছাড়া, এই উপমহাদেশে কোন টেলিভিশন কেন্দ্র ছিলনা। ঢাকা বেতার এবং পরবর্তীতে ঢাকা টেলিভিশনে প্রচারিত জিঙ্গা শিল্পী গোষ্ঠীর গান সে সময়, যেন উন্মাতাল করে তুলেছিলো এ দেশের তরুন ও যুবকদের। রেডিওর “কমার্সিয়াল সার্ভিস” কিংবা “অনুরোধের আসর” শোনার জন্যও বসে থাকতেন সেই প্রজন্মের মানুষেরা। জিঙ্গা শিল্পী গোষ্ঠীর নাম তখন সবার মুখে মুখে। এই শিল্পী গোষ্ঠীর শুরুটা হয়েছিলো তারও আগে চট্টগ্রামে। ১৯৬৩ সাল থেকেই বাংলা গানকে নতুন ঢঙে উপস্থাপনের কথা ভাবতেন শাফাত আলী। বন্ধুদের বলতেন। উৎসাহ পেলেও এ ধরনের গোষ্ঠী গঠনে সে সময় তাঁর বন্ধুদের মনে ছিলো নানা রকম সংশয়। শাফাত আলীর পরিবারে গানের চর্চা ছিলো। পরিবারের সদস্যদের নিয়েই তিনি গঠন করলেন জিঙ্গা শিল্পী গোষ্ঠী। ১৯৬৫ সালে এই গোষ্ঠীর আত্মপ্রকাশ ঘটে। মঞ্চে, রেডিওতে তাদের নতুন মাত্রা সংযোজিত গান প্রশংসিত হয়। ১৯৬৬ সালে শাফাত আলীর সুরের, বোন নাজমা জামানের গাওয়া এই গান সারা দেশেই আলোড়ন সৃষ্টি করে। আলোচনায় চলে আসে জিঙ্গা শিল্পী গোষ্ঠী। তারপর দীর্ঘ পথচলা। স্থানীয় গানের পাশাপাশি বনি এম, এবা সহ বিশ্বের প্রথিতযশা ব্যান্ড দলের গান, এই গোষ্ঠী বাংলা ভাষায় রূপান্তর করে। সেগুলোর বেশির ভাগই জনপ্রিয় হয়। শাফাত আলীর নেতৃত্বে এই গোষ্ঠীর অন্যান্য সদস্য ছিলেন নাজমা জামান, শেহালা জামান, নিঘাত আলী, শায়হান আলী, শাজিয়া নারমিন এবং নায়হান আলী। ঢাকার কাকরাইলে ইপসা নামে একটি গান রেকর্ডিং স্টুডিও তৈরি করেছিলেন শাফাত আলী। গুগল সহ বিভিন্ন জায়গায় খুঁজেও জিঙ্গা শিল্পী গোষ্ঠীর সদস্যদের বিশেষ কোন তথ্য পাওয়া যায়না। ১৯৮০ দশকের শেষ অর্ধে নাজমা জামান আমেরিকা প্রবাসী হলে জিঙ্গা শিল্পী গোষ্ঠীর ছন্দপতন ঘটে। ১৯৯৭ সালের ২০ জুন শাফাত আলী হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে ইন্তেকাল করেন। যবনিকাপাত ঘটে জিঙ্গা শিল্পী গোষ্ঠীর পথচলার। প্রার্থনা করি শাফাত আলীর আত্মা যেন শান্তিতে থাকে।
মুজতবা সউদ