শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বাংলা ভাষার অন্যতম লেখক, ঔপন্যাসিক এবং গল্পকার। ১৮৭৬ সালে জন্ম নেয়া এই কথা শিল্পীর উপর, বালক বেলায় খুব রাগ হতো আমার। আমার নানীকে, আমার মা কে কাঁদতে দেখতাম তাঁর লেখা পড়ে। শুধু আমার মা কিংবা নানীই নন, উনার লেখা পড়ে এদেশের অজস্র মায়েদের, নানী-দাদী, খালা-ফুফু, চাচি-মামি বা বোনদের চোখ থেকে পানি ঝরেছে। বালক বেলায় মায়েদের এমন কান্না দেখে রাগ তো হবেই। তাই, উনাকে নিয়েই মেতে উঠেছিলাম বেড়ে উঠার সময়। দেখি, আমিও কাঁদি। কেন? আমি পুরুষ মানুষ কাঁদবো কেন? ভীষণ লজ্জার ব্যাপার ঘটছে এটা। এমন ঘটনাই ঘটাতে পারতেন শরৎচন্দ্র। শব্দ নিয়ে খেলতে খেলতেই যেন মানুষের হৃদয়ের ভেতরে ঢুঁকে মোচড় দিতেন তিনি। আপন মনেই পানি গড়িয়ে নামতো চোখ থেকে। বাংলাদেশ সহ এই উপমহাদেশের প্রায় প্রতিটি প্রধান প্রধান চলচ্চিত্র নির্মাণ কেন্দ্রে, বিভিন্ন ভাষায় উনার উপন্যাস বা গল্প নিয়ে চলচ্চিত্র নির্মিত হয়েছে। নির্মিত হয়েছে নাটক, ধারাবাহিক এবং টেলিফিল্ম। একই গল্প বা উপন্যাস কয়েকবার করেও নির্মিত হয়েছে। ১৯২৩ সালে কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তিনি জগত্তারিনী স্বর্ণপদক পান, ১৯৩৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে থেকে ‘ডিলিট’ উপাধি পান। ১৯৩৮ সালের ১৬ জানুয়ারি বাংলা ভাষাভাষী অজুত সহস্র ভক্ত কে কাঁদিয়ে প্রয়াত হন শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়। বাংলা ভাষাভাষী মানুষ চিরকাল শ্রদ্ধা জানিয়ে যাবে তাঁকে। আমিও। আমার বন্ধুরাও। এই মহান কথা শিল্পীর প্রয়ান দিনে শ্রদ্ধা আর ভালোবাসা।
মুজতবা সউদ