আম। কী নাম শুনেই খেতে মন চাইছে তাইতো? গ্রীষ্ম, বর্ষা, কিংবা শীত সব মৌসুমেই ছোট-বড় সবার প্রিয় এই সুস্বাদু রসালো আম। যে মৌসুমেই হোক; এক গ্লাস তরতাজা আমের জুস পেলে মন্দ হয় না- কী বলুন? তবে এই অসময়ে কোথায় মিলবে আম? হ্যাঁ মিলবে। এখন সারা বছরই মিলবে রাজশাহীর আম। সারা বছরই নেওয়া যাবে মিষ্টি মধুর রসালো এই ফলের স্বাদ। কৃষি প্রধান এই দেশের চাষ পদ্ধতি এতদিন থেকে চলছে সেই আগের সনাতনী নিয়মেই। তবে দেরিতে হলেও দেশের কৃষিতে লাগতে শুরু করেছে পরিবর্তনের হাওয়া। কৃষি নির্ভরশীল এই দেশে ধরাবাঁধা নিয়মের পরম্পরা ভাঙতে শুরু করেছে- আধুনিক কৃষি বিজ্ঞান। চাষবাষ নিয়ে ধীরে ধীরে মানুষের চিন্তাশীলতা বিকশিত হচ্ছে। গত দুই বছর থেকে নতুন জাতের এক বারোমাসি আম চাষ করা হচ্ছে রাজশাহীতে। আমটির নাম কাটিমন। কৃষি বিভাগ বলছে- একদম নতুন জাতের আম হওয়ায় বর্তমানে রাজশাহীর ৯ হেক্টর জমিতে কাটিমন আমের চাষ হচ্ছে। রাজশাহীর দুর্গাপুর, পুঠিয়া, চারঘাট, বাঘা উপজেলার চাষিদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, আমের মৌসুমে সব জাতের আম বাজারে আসে। তবে কাটিমন জাতের আম মৌসুম ছাড়াও বাকি সময়ে পর্যাপ্ত পরিমাণ গাছে ধরে। এতে চাষিদের লাভের অংক বেড়ে দাঁড়ায় কয়েকগুণ। রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের জেলা প্রশিক্ষণ কর্মকর্তা মোছা. উম্মে ছালমা বলেন, গত দুই বছর থেকে রাজশাহী জেলার কয়েকটি উপজেলার প্রায় নয় হেক্টর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে কাটিমন জাতের বারোমাসি আম চাষ করা হচ্ছে। আমের বাগানগুলোতে নিয়মিত পরিচর্যা করায় আশানুরূপ আমের ফলন পাওয়া যাচ্ছে। মৌসুমের পরও গাছে আম ধরায় অসময়ে কয়েকগুণ বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে কাটিমন। এতে চলতি বছর স্থানীয় চাষিদের আগ্রহ আরও বেড়েছে। চাষিরা এখন বাণিজ্যিকভাবে কাটিমন আমের বাগান করতে জমি নির্বাচন কাজ শুরু করেছেন। কাটিমন আম তাই এখন কৃষকের সফলতারই ফসল। কাটিমন আমটি দেখতে সাধারণত লম্বাটে আকারের। এটি পাকলে আকর্ষণীয় হলুদ বর্ণের রং ধারণ করে। কাটিমন আমের বিশ্বজোড়া খ্যাতি এখন কেবল তার মিষ্টতার জন্যই। দারুণ মিষ্টি। আর আমে আঁশ নেই বললেই চলে। বারোমাসি এই আম কাঁচা খেতে যেমন মিষ্টি তেমন পাঁকলেও। আমের আঁটি তুলনামূলক ছোট। প্রতিটি আমের গড় ওজন ৩০০-৩৫০ গ্রাম। সাড়ে পাঁচ বছর বয়সের এক একটা গাছে দেড় মণেরও বেশি আম ধরে। এটি থাইল্যান্ড, ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়ায় এখন বাণিজ্যিকভাবে চাষ করা হচ্ছে। একই গাছে এক সঙ্গে মুকুল, গুটি ও পাকা আম থাকে। অনেক সময় বেশি পর্যায়ের মুকুল বা আমও থাকে। নাবি জাতের এই আম চাষে চমক দেখিয়েছেন- রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার তরুণ কৃষি উদ্যোক্তা রফিকুল ইসলাম। শীতের হাতছানি দেওয়া এই কার্তিকেও তার বাগানে ঝুলছে গাছ ভর্তি কাটিমন আম। আর নিচে পুকুরে চাষ হচ্ছে রূপালি মাছ ও পুকুরপাড়ে হচ্ছে রঙিন আম। নির্ধারিত মৌসুম শেষ হওয়ায় কাটিমন আমের বাজার মূল্য এখন বেশ চড়া। আর শুধু একবার নয় তিনি এই আমের ফলন পাচ্ছেন বছরে অন্তত তিনবার। বর্তমানে যার বাজারমূল্য মণ প্রতি আট থেকে ১০ হাজার টাকারও বেশি। শহিদুল ইসলাম বলেন, বারোমাসি জাত হওয়ায় বেশি দামে কৃষকরা আম বিক্রি করতে পারছেন। তাদের কাছে জাতটি বেশ ভালোই মনে হচ্ছে। তারা চেষ্টা করছেন কীভাবে এই কাটিমন আমকে আরেকটু উন্নত করা যায়। এটিকে আরও বেশি ফলবান করা যায়। এর প্রডাকশন টেকনোলজি নিয়ে কাজ করা হচ্ছে। পাশাপাশি এ আমের ক্যারেক্টারকে নিয়ে তারা বারি আম-১১ এর সঙ্গে ক্রসিংয়ের মাধ্যমে আরও ভালো জাত উদ্ভাবন করা যায় কিনা সেই প্রচেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি আরও জানান, এখন গাছগুলো ছোট আছে। গাছ আরও বড় হলে এর ফলাফল সম্পর্কে আরও ভালো এবং স্বচ্ছ ধারণা পাওয়া যাবে।
অঞ্জন দাস