তিনি অনুভব করেছিলেন, সব বাসনা পূরন করতে নেই। কিছু কিছু অপূর্ণ থাকুক। সময়মতো থেমে যাওয়ার প্রয়োজন হয়। সব দিতে গিয়ে বেশি করে হারানোর কোন মানে হয় না। সুচিত্রা সেনের এই গভীর উপলব্ধি চিরকাল মনে রাখবে সিনেমা প্রেমী। সপ্তপদী সিনেমায় ডেসডিমোনা – সুচিত্রা উত্তমকে বলেছিলেন, “ডোন্ট টাচ মি” ।আজীবন তিনি ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির কাউকেই তার ধারেকাছে ঘেঁসতে দেন নি, টাচ করা তো দূরের কথা। পঞ্চাশের দশকে তিনি বহু হিন্দি ছবির অফার ছেড়ে দিয়েছিলেন শুধু বাংলা ছবিতে অভিনয় করবে বলে। “দীপ জ্বেলে যাই” – বসন্ত চৌধুরী ও “উত্তর ফাল্গুনী” – দিলীপ মুখার্জি।সুচিত্রা সেন এই দুই নায়ককে নিয়ে স্মরণীয় অভিনয় করেছেন। এতে প্রমানিত, নায়িকা প্রধান চরিত্রে তিনি অসাধারণ ও অনন্য। ততদিনে তিনি বাংলা ফিল্ম ইন্ডাস্ট্রির ম্যাডাম এবং মিসেস সেন। সুচিত্রা সেন গড়ে তুলেছিলেন নিজস্ব জগত। যে জগতে তিনি ছিলেন একা। “সাত পাকে বাঁধা” সুচিত্রা সেনের ক্যারিয়ারের একটি মুক্ত। যে ছবির জন্য তিনি মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে অর্জন করেন শ্রেষ্ঠ অভিনেত্রীর সম্মান ।”কালোরভী ভ্যারি” পুরস্কার যা আজ পর্যন্ত আর কেউ পান নি। ১৯৭৮ সালে প্রনয় পাশা ছবি দিয়ে ইতি টেনেছিলেন চলচ্চিত্র অভিনয়ে। অন্তহীন স্টারডামের অন্তরালে এক প্রতিভাময়ী অভিনেত্রীকে আবিষ্কার করেছেন বিদগ্ধ দর্শক ও সমালোচক। কখনো দেবদাসের “পারু” কখনও বা সপ্তপদীতে “রীনা ব্রাউন” কখনও দীপ জ্বেলে যাই ছবিতে “রাধা মিত্র” প্রতিটা চরিত্রের সাথে নিজেকে মিশিয়ে নিয়েছিলেন তিনি। লম্বাটে ভরাট মুখ, ছোট্ট কপাল, কথা বলা দুটো গভীর চোখ, সুগঠিত নাক, একঢাল চুল আর মোহময়ী হাসি – এখন ও বাঙালির নষটালজিয়া। আর যেহেতু তার ওভাল শেপ ফেস ছিল, তাই সবরকম মেকআপেই তাঁকে মানিয়ে যেত।সব থেকে ইন্টারেস্টিং পার্ট হল তাঁর বিউটি স্পট।কারন মেকআপ আর্টিস্টের হাতের জাদুতেই প্রান পেত ওই বিউটি স্পটটি। প্রতিটি ছবিতে তাঁর চলন বলন স্টাইল সব কিছুর মধ্যে ছিল স্বতন্ত্র। আর এই ভাবেই রুপোলী পর্দায় বছরের পর বছর শাসন করে গেছেন মহানায়িকা সুচিত্রা সেন। প্রচন্ড ব্যক্তিত্ব, প্রখর সম্ভ্রম আর দাপুটে অভিনয়, এ সব কিছু দিয়ে সুচিত্রা সেন জিতে নিয়েছিলেন প্রতিটা বাঙালির মন।ভীষণ ভার্সেটাইল ছিলেন তিনি।একদিকে স্নিগ্ধ আবার অন্যদিকে দৃঢ়।আর কথাবলা দুটো চোখ আর গভীর চাহনি, যার জন্য উথালপাথাল হতো প্রতিটি বাঙালির মন।আজ ও এক ই ভাবে বাঙালির ইমোশনের সঙ্গে ওতোপ্রতোভাবে জড়িয়ে রয়েছেন সুচিত্রা সেন। অভিনয়ের জগতে কি শুধুই তাঁর অবদান? তা না। ফ্যাশন দুনিয়াতেও তিনি ছিলেন স্বতন্ত্র ।তাঁর ফ্যাশন সেন্স আর স্টাইল স্টেটমেন্ট নিয়ে চর্চা হয় আজ ও । রুপ ও গুন মিলিয়ে মিশিয়ে নিয়ে বাংলা ছবিতে উজ্জ্বল তারকা হয়ে সুচিত্রা সেন ছিলেন এবং থাকবেন দীর্ঘদিন।
মুজতবা সউদ