অসম্ভব মেধাবী-প্রতিভাবান একজন সাংবাদিক ছিলেন মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন। বাংলাদেশের বিনোদন সাংবাদিকতার তথ্যব্যাংক হিসেবে খ্যাতি ছিল তাঁর। মানুষ হিসেবে চলচ্চিত্রের লোকদের এবং চলচ্চিত্র সাংবাদিকদের কাছে খুবই প্রিয় ছিলেন মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন। আজ তাঁর সপ্তম মৃত্যুবার্ষিকী। তিনি ২০১৫ সালের ২ অক্টোবর (১ অক্টোবর রাত ২টার পরে), ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৪৯ বছর। প্রয়াত আওলাদ হোসেনের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাই। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করি। মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন ১৯৬৬ সালের ১৯ আগস্ট, পুরান ঢাকার ইসলামপুরে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর বাবা মোবারক হোসেন ছিলেন কাপড়ের ব্যবসায়ী। মা লুৎফুন্নেসা গৃহিণী । তিন ভাই, দুই বোনের মধ্যে আওলাদ হোসেন ছিলেন চতুর্থ । আরমানিটোলা ঢাকার- হাম্মাদিয়া উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৮২ সালে, এসএসসি এবং ১৯৮৪ সালে, শেখ বোরহান উদ্দীন কলেজ থেকে মানবিক বিভাগে এইচএসসি পাস করেন। পরে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ থেকে ১৯৮৭ সালে অনার্স এবং ১৯৯০ সালে মাস্টার্স পাস করেন আওলাদ হোসেন। ছোটবেলা থেকেই প্রচন্ড ডানপিটে ছিলেন আওলাদ হোসেন। খেলা-ধুলা, গান-বাজনা ও শিল্প-সংস্কৃতির প্রতি ছিল তাঁর অগাধ আগ্রহ। উদিয়োমান ফুটবলার হিসেবে স্থানীয় ক্লাবে ফুটবল খেলেছেন তিনি। গান ও গিটার বাজানো শিখতেন ‘বাফা’য়। একসময় চলচ্চিত্র তথা বিনোদন পত্রিকার চিঠিপত্র কলামে লেখালেখি শুরু করেন। তখনকার সময়ে আলোচিত-জনপ্রিয়, সাপ্তাহিক চিত্রালী, সিনেমা, পূর্বাণী এসব পত্রিকায় লিখতেন। তবে, আওলাদ হোসেন সবচেয়ে বেশী এবং নিয়মিত লিখতেন সাপ্তাহিক ‘সিনেমা’য়। সিনেমাবিষয়ক পত্রিকায় লেখা-লেখি করতে গিয়েই চলচ্চিত্রের প্রতি, চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার প্রতি আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। অনার্স শেষ করে, ১৯৮৭ সালে সিনেম্যাগাজিন সাপ্তাহিক ‘ছায়াছন্দ’ পত্রিকার সহ-সম্পাদক পদে যোগদানের মাধ্যমে নিয়মিত সাংবাদিকতা শুরু করেন মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন। পরে ২০০৪ সাল থেকে ‘দৈনিক মানবজমিন’ পত্রিকায় সিনিয়র রিপোর্টার হিসেবে কাজ করেন। মৃত্যুর আগ পর্যন্ত তিনি ‘মানব জমিন’ পত্রিকার বিনোদন বিভাগের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। এছাড়াও তিনি নামে-বেনামে বিভিন্ন দৈনিক, সাপ্তাহিক ও পাক্ষিক পত্রিকাতে বিনোদন পাতায় বিভিন্ন সময়ে প্রতিবেদন ও কলাম লিখতেন । মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন- বাচসাস, ডি ইউ জে, ডি আর ইউ, বি এফ ইউ জে’সহ বিভিন্ন সাংবাদিক সংগঠনের সক্রিয় সদস্য ছিলেন। ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের ২০০২-২০০৩ কার্যবর্ষে- ক্রীড়া ও সংস্কৃতি সম্পাদক পদে নির্বাচিত হয়ে সফলভাবে দায়িত্ব পালন করেন এবং জীবনের শেষদিন পর্যন্ত, ফিল্ম জার্নালিস্ট ফাউন্ডেশন অব বাংলাদেশ-এর সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করে গেছেন। এছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের সাথেও জড়িত ছিলেন তিনি। নিরাপদ সড়ক চাই (নিসচা)’র প্রতিষ্ঠিতা সদস্যদের অন্যতম একজন তিনি। ব্যক্তিজীবনে আওলাদ হোসেন ১৯৯২ সালে ৯ জানুয়ারি, বিয়ে করেন মৌসুমী হোসেন মুনিকে। তাদের দুই সন্তান, ছেলে শাহবাজ হোসেন মুন ও মেয়ে অপরাজিতা হোসেন মীম। দুই সন্তানই ডাক্তার। চলচ্চিত্র তথা বিনোদন সাংবাদিকতার আপনজন, অতি পরিচিত মুখ, নিজের কর্মগুণে যিনি ছিলেন নন্দিত ও জনপ্রিয় একজন সাংবাদিক। সাংবাদিকতায় স্বনামধন্য, খ্যাতির শিখরে তাঁর অবস্থানও ছিল বিরাজমান। মানুষ হিসেবেও, চলচ্চিত্রের লোকদের এবং চলচ্চিত্র সাংবাদিকদের কাছে খুবই প্রিয় ছিলেন। চলচ্চিত্রশিল্প এবং চলচ্চিত্র সাংবাদিকতার অকৃত্রিম বন্ধু-সুহৃদ মোহাম্মদ আওলাদ হোসেন, অনন্তলোকে ভালো থাকুন- এই প্রার্থণা করি।
আজাদ আবুল কাশেম