কলকাতা, ৬ আগস্ট ২০২২। রবীন্দ্রনাথের শরীর তখন খুব একটা ভালো নয়। এক সময় হোমিয়োপ্যাথি, অ্যালোপ্যাথি, কবিরাজি– সব রকম চিকিৎসা বিফল। ডাক্তাররা জানিয়েছিলেন, শেষ আশা অপারেশন। ১৯৪১ সালের ২৫ জুলাই সেলুন কারে কবিকে শান্তিনিকেতন থেকে নিয়ে আসা হল কলকাতায়। শান্তিনিকেতন ছেড়ে কবি চলে গেলেন শেষবারের মতো। ২৫ জুলাই ১৯৪১, দুপুরে কবিকে আনা হয়েছিল জোড়াসাঁকোর বাড়িতে। ২৭ তারিখে সকালে রবীন্দ্রনাথ লিখলেন কবিতা। অবশেষে অস্ত্রোপচার হল রবীন্দ্রনাথের।
২ অগস্ট ১৯৪১বাংলায় ১৭ শ্রাবণ ১৩৪৮। কবির অবস্থার কোনও পরিবর্তন নেই। ৫ তারিখ সন্ধ্যায় স্যর নীলরতন সরকারকে নিয়ে কবিকে দেখতে এসেছিলেন ডাঃ বিধানচন্দ্র রায়। তখন ডাকলেও আর আর কবির সাড়া পাওয়া যাচ্ছিল না। রাতে কবিকে স্যালাইন দেওয়া হয়। ৬ অগস্ট, ২১ শ্রাবণ।
সকাল থেকেই জোড়াসাঁকোর বাড়ি লোকে লোকারণ্য। বৌঠান প্রতিমা দেবী কানের কাছে মুখ নিয়ে ডাকলেন – ‘বাবামশাই, বাবামশাই, বাবামশাই।’ একবার সাড়া দিলেন, তাকালেন। ওই একবারই। রাত ১২টায় অবস্থা আরও অবনতি হল। ৭ অগস্ট, ১৯৪১। পুবের আকাশ ফরসা হল। অমিয়া ঠাকুর চাঁপাফুল অঞ্জলি ভরে নিয়ে এলেন। সাদা শাল দিয়ে ঢাকা কবির পায়ের ওপর সেই ফুলগুলি ছড়িয়ে দেওয়া হল। ১২টা ১০ মিনিটে শেষ নিঃশ্বাস পড়ল কবির।
দুপুরেই রেডিও অফিসে খবর পাঠিয়েছেন সজনীকান্ত দাস। ১ নম্বর গারস্টিন প্লেসের রেডিও অফিস থেকে যন্ত্রপাতি-সহ সদলে ছুটেছিলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। সন্ধেবেলা যখন কবির মরদেহ নিমতলা শ্মশানঘাটে নিয়ে আসা হল, তখন তিলধারণের জায়গা নেই।
ধারাবিবরণী দিতে শুরু করলেন বীরেন্দ্রকৃষ্ণ ভদ্র। ৮ অগস্ট ১৯৪১/২৩ শ্রাবণ ১৩৪৮। সেদিনই নজরুল ইসলাম রেডিওতে গেয়েছিলেন– ‘ঘুমাইতে দাও, শান্ত রবিরে জাগায়ো না…।’ অত্যধিক ভিড়ের চাপে শ্মশানঘাটে শবাধারের ঘেরা জায়গাটা একবার ভেঙে পড়ে। তার জন্য দু-ঘণ্টা পর দাহকার্য শুরু করতে হয়। পুত্র রথীন্দ্রনাথ অসুস্থতার কারণে দাহকাজ করতে পারেননি। চিতাভস্ম নিয়ে কবিপুত্র রথীন্দ্রনাথ ৯ অগস্ট, শুক্রবার সকালে শান্তিনিকেতনে ফিরেছিলেন। শান্তিনিকেতনের প্রধান ফটক থেকে উত্তরায়ণ পর্যন্ত রাস্তার দু-ধারে ছেলেমেয়েরা সারিবদ্ধভাবে দাঁড়িয়ে ছিলেন সেদিন। সবারই মাথা নিচু, চোখে জল। শোকযাত্রার মাঝে আশ্রমিকেরা গেয়েছিলেন প্রার্থনাসঙ্গীত। উত্তরায়ণে মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথের চিতাভস্মের পাশে রাখা হল কবির চিতাভস্ম।
*রবি ঠাকুরের শেষের ক’দিন এবং শেষযাত্রার বিবরণ নিয়েই TV9 বাংলার অনুষ্ঠান ‘শেষের কবিতা’। এবার ৭ অগস্ট, বাইশে শ্রাবণ রবিবার সকাল ১০টায় TV9 বাঙালিয়ানায় দেখুন সংবাদে-কবিতা-গানে বাঙালির চোখের জলের জোয়ারের দিন।*
গোপাল দেবনাথ, কলকাতা