বরেন্য গীতিকার, বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম বাবুর জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধাঞ্জলি

বীর মুক্তিযোদ্ধা ও জনপ্রিয় গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবুর জন্মবার্ষিকীতে শ্রদ্ধা জানাই। মহান আল্লাহ পাক আপনি তাঁকে জান্নাতুল ফেরদৌস নসিব দান করুন – আমিন আমিন সুম্মা আমিন। আমার দেখা শ্রদ্ধেয় নজরুল ইসলাম বাবু ভাই ছিলেন অত্যন্ত চমৎকার মনের মানুষ। পুরনো ঢাকার লালবাগে অবস্থিত অনির্বাণ শিল্পী গোষ্ঠীতে দেশের বিশিষ্ট শিল্পী ও সাংস্কৃতিক ব্যাক্তিরা নিয়মিত আসতেন। শ্রদ্ধেয় নজরুল ইসলাম বাবু ভাই ও প্রায় আসতেন। মৃদু হেসে কথা খুব কম বলতেন। ১৯৮৮/৮৯ সালের একটি ঘটনার কথা মনে পড়ে গেলো একদিন অনির্বাণ শিল্পী গোষ্ঠীর রিহার্সাল চলাকালীন সময়ে হঠাৎ একটি পাখি জানালা দিয়ে ঘরে ঢুকতেই সিলিং ফ্যানে প্রচন্ড আঘাত পেয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় মাটিতে পড়ে। বাবু ভাই দ্রুত সেই পাখিটিকে তুলে নিয়ে পরম মমতায় সেবা শুরু করেন।
অসংখ্য কালজয়ী গানের স্রস্টা নজরুল ইসলাম বাবু ১৯৪৯ সালের ১৭ জুলাই, জামালপুর জেলার মাদারগঞ্জের, চরনগর গ্রামে মাতুতালয়ে জন্মগ্রহণ করেন। ১৯৯০ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর, ঢাকায় ইন্তেকাল করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল মাত্র ৪১ বয়স।
তাঁর পৈত্রিক বাড়ি একই উপজেলার হেমাড়াবাড়ি গ্রামে। তাঁর পিতার নাম বজলুল কাদের এবং মাতা রেজিয়া বেগম। পিতা বজলুল কাদের একজন সঙ্গীতানুরাগী ছিলেন। ছোটবেলা থেকেই বড় সন্তান নজরুল ইসলাম বাবুকে সঙ্গীত বিষয়ে প্রভাবিত করেছেন তাঁর বাবা।
১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন নজরুল ইসলাম বাবু। দেশ স্বাধীন হলে তিনি আবার লেখাপড়া, সাহিত্য ও সংগীত চর্চা শুরু করেন।
১৯৭৩ সালে আশেক মাহমুদ কলেজ থেকে বিএসসি ডিগ্রী লাভ করেন তিনি।
১৯৭৩ সালে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে গীতিকার হিসাবে তালিকাভুক্ত হন। এরপর থেকে লিখতে থাকেন অসাধারন সব গান।
নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা জনপ্রিয় ও কালজয়ী গানের মধ্যে রয়েছে ঃ সব কটা জানালা খুলে দাও না, একটি বাংলাদেশ তুমি জাগ্রত জনতার, আমায় গেঁথে দাওনা মাগো, দুই ভুবনের দুই বাসিন্দা বন্ধু চিরকাল…, কথা বলবো না, বলেছি, পৃথিবীতে প্রেম বলে কিছু নেই/হাজার মনের কাছে প্রশ্ন করে, কাঠ পুড়লে কয়লা হয়, ডাকে পাখী খোলো আঁখি, এই অন্তরে তুমি ছাড়া নেই কারো নাম,আমার মনের আকাশে জ্বলে শুকতারা,
তোমার হয়ে গেছি আমি, কাল সারারাত ছিলো স্বপ্নের রাত,কত যে তোমাকে বেসেছি ভালো ইত্যাদি।
১৯৭৮ সালে জনপ্রিয় সুরকার আহমেদ ইমতিয়াজ বুলবুলের সাথে তিনি প্রথম চলচ্চিত্রে গান লিখতে শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি আরো যে সব ছবিতে গান লিখেন তারমধ্যে উল্লেখযোগ্য- আখিঁ মিলন, দুই পয়সার আলতা, মহানায়ক, প্রতিরোধ, শুভদা, উসিলা, পদ্মা মেঘনা যমুনা, প্রেমের প্রতিদান, সিপাহী, প্রভৃতি।
বরেণ্য গীতিকবি নজরুল ইসলাম বাবু ভাইয়ের লেখা অসংখ্য গান রয়েছে। যার মধ্যে দেশাত্মবোধক, আধুনিক ও ধর্মীয় গান রয়েছে।
নজরুল ইসলাম বাবু ১৯৯১ সালে মুক্তিপ্রাপ্ত চাষী নজরুল ইসলাম পরিচালিত ‘পদ্মা মেঘনা যমুনা’ চলচ্চিত্রের গীত রচনার জন্য শ্রেষ্ঠ গীতিকার হিসেবে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার লাভ করেন।
২০১৭ সালে তাঁকে নিয়ে প্রকাশিত হয়, সংকলিত স্মারক গ্রন্থ- নজরুল ইসলাম বাবু স্মারকগ্রন্থ। গ্রন্থটি সংকলন করেছেন আরেক খ্যাতিমান গীতিকবি মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান। নজরুল ইসলাম বাবু বাংলাদেশ গীতিকবি সংসদের প্রথম কার্যনির্বাহী পরিষদ (১৯৭৮-৭৯) এর সাংগঠনিক সম্পাদক ছিলেন।
ব্যক্তিজীবনে নজরুল ইসলাম বাবু ১৯৮৪ সালের ২৩ নভেম্বর, শাহীন আক্তারের সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন। তাদের দুইজন কন্যাসন্তান, নাজিয়া ও নাফিয়া।
খুবই প্রতিভাবান ও মেধাবী গীতিকবি ছিলেন নজরুল ইসলাম বাবু। তাঁর লেখা বেশিরভাগ গানই শ্রোতা-দর্শক কর্তৃক সমাদৃত ও নন্দিত হয়েছে। হয়েছে জনপ্রিয়, রয়েছে কালজয়ীর তালিকায়। তাঁর লেখা দেশাত্ববোধক গানগুলো, বাংলাদেশেরই প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠে যেন।
সবকটা জানালা খোলে দাওনা… এই গানটি তৎকালিন সময়ে বাংলাদেশ টেলিভিশন এর খবর এবং বিভিন্ন সৃজনশীল অনুষ্ঠানের সূচনায় ব্যবহৃত হত। আর এই গানটির অমর গীতিকবি, নজরুল ইসলাম বাবু।
এই গানটি ছাড়াও নজরুল ইসলাম বাবু’র লেখা দেশাত্মবোধক অন্যান্য গানগুলোও, আজও বিভিন্ন জাতীয় দিবসে গাওয়া হয়।
রেজা মতিন