সব শ্রেণির মানুষের জন্য গৃহঋণ আছে বিএইচবিএফসিতে: দেবাশীষ চক্রবর্তী

শুধু উচ্চবিত্ত বা মধ্যবিত্তই নয়, নিম্ন মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে কৃষকেরাও পর্যন্ত ঋণ পাবেন বাড়ি তৈরির জন্য। কোনো গোপন মাশুল (হিডেন চার্জ) ছাড়াই সরল সুদে ঋণ দেওয়া হচ্ছে আগ্রহী ব্যক্তিদের। প্রবাসীদের জন্যও রয়েছে বিশেষ সুবিধা। বাড়ি নির্মাণ, মেরামত, ফ্ল্যাট কেনাসহ বিভিন্ন শ্রেণির মানুষের জন্য নানা ধরনের প্রকল্পে ঋণ দিচ্ছে সরকারি প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিষ্ঠানটির নাম বাংলাদেশ হাউস বিল্ডিং ফাইনান্স করপোরেশন (বিএইচবিএফসি)। দেশের গৃহায়ণ খাতে অর্থ সংস্থানের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানটি কয়েক যুগ ধরে কাজ করে আসছে। গৃহায়ণ খাতে মধ্যবিত্ত-নিম্নমধ্যবিত্তদের জন্য বিএইচবিএফসি ঋণ প্রদানের অন্যতম প্রধান উৎস। এই করপোরেশনের পরিশোধিত মূলধনের সবটাই বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক পরিশোধিত এবং এটি সরকার পরিচালিত একটি বিশেষায়িত আর্থিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক দেবাশীষ চক্রবর্তী সম্প্রতি এ কথা বলেন। তিনি বলেন, অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো যাদের গৃহঋণ দেয় না তাদের আবাসনের আওতায় আনা বিএইচবিএফসির অন্যতম লক্ষ্য। তাই মধ্য ও নিম্নমধ্যবিত্তের মানুষদেরই গুরুত্ব দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ব্যাংক বা অন্য আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রামের বাইরে তেমন গৃহঋণ দিচ্ছে না। কিন্তু আমাদের আরেকটি লক্ষ্য হলো পল্লি এলাকায় ঋণ দেওয়া। বিএইচবিএফসির গত পাঁচ বছরে ঋণ দেওয়ার প্রবণতা গ্রামীণ এলাকায় বেশি।
দেবাশীষ চক্রবর্তী বলেন, হাউস বিল্ডিংয়ের আইনেই ঋণের ওপর সরল সুদ নেওয়ার কথা বলা আছে। তাই সুদের ওপর কখনোই সুদ আরোপ করা হয় না। এখান থেকে ঋণ নিলে চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ আরোপের কোনোই সুযোগ নেই। অথচ অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলো ঋণের ওপর চক্রবৃদ্ধি সুদ আদায় করে, অর্থাৎ সুদের ওপরও সুদ আরোপ করা হয়। তিনি আরও বলেন, অন্যান্য ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঋণ একবার খেলাপি হলে সুদ ও আসল লাফিয়ে লাফিয়ে বাড়তে থাকে। কারণ চক্রবৃদ্ধি সুদ বেড়ে মূলধনে রূপান্তর হয়। তাঁর মতে, ঋণগ্রহীতাদের আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছে বিএইচবিএফসি। এর কারণ হিসেবে তিনি বললেন, ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে হিডেন (গোপনীয়) চার্জ আরোপ করা হয় না। এ ছাড়া ঋণ প্রসেসিংয়ের জন্য কোনো ফি নেওয়া হয় না। আবেদনসহ আনুষঙ্গিক ফিও অনেক কম।
বিএইচবিএফসির ঋণের বৈশিষ্ট্য তুলে ধরতে গিয়ে প্রতিষ্ঠানটির প্রধান নির্বাহী আরও বলেন, একজন গ্রাহক ২০ বছর মেয়াদে ঋণ নেওয়ার পর নির্ধারিত মেয়াদের আগেও পরিশোধ করতে পারবেন। এ ক্ষেত্রে অগ্রিম নিষ্পত্তি (আর্লি সেটেলমেন্ট) নামের একটি ফি নেওয়া হয় অন্যান্য প্রতিষ্ঠানে। কিন্তু বিএইচবিএফসিতে তা নেওয়া হয় না। এ ছাড়া অনেক গ্রাহক নির্দিষ্ট কিস্তির চেয়ে বেশি টাকা পরিশোধ করলে তা আসলের সঙ্গে সমন্বয় করে নেওয়া হয়। অন্য ব্যাংকগুলো এ ক্ষেত্রে অতিরিক্ত কিস্তির টাকা সাসপেন্ড অ্যাকাউন্টে রেখে দেয়। সংশ্লিষ্ট গ্রাহকের কিস্তি বকেয়া পড়লে তা ওই অ্যাকাউন্ট থেকে পরিশোধ করা হয়। তিনি জানান, তাঁর প্রতিষ্ঠানে ঋণের হারও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের তুলনায় কম।
ঋণ নিতে গিয়ে হয়রানির আশঙ্কাও নেই বলে জানালেন দেবাশীষ চক্রবর্তী। তাঁর মতে ঋণ নেওয়ার ক্ষেত্রে কাগজপত্রই আসল। তিনি বলেন, অনেক জমির মালিকই প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সঠিকভাবে সংরক্ষণ করে না। কাগজপত্র ঠিক না থাকলেও ঋণের জন্য আবেদন করেন। অনেক সময় দেখা যায়, জমির খতিয়ান, খাজনা হালনাগাদ দেওয়া নেই। তখন সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠান বা দপ্তরে গিয়ে তা ঠিক করে আনার পরামর্শ দেওয়া হয়।
অর্ণব আদিত্য