পদ্মার ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী বাঁধের দাবিতে মুন্সীগঞ্জে মানববন্ধন

‘নদীর একপাড় ভাঙ্গেতো আরেকপাড় গড়ে’। নদীর এই ভাঙ্গা-গড়ার খেলা এক নিত্য-নৈমিত্তিক ব্যাপার। আর সেই নদীটি যদি হয় পদ্মা- তাহলে তো কথাই নেই। আবহমানকাল থেকে প্রমত্তা পদ্মার রুদ্ররোষে পড়ে কত নগর, কত বন্দর, কত জনপদ যে অস্তিত্ব হারিয়েছে তার কোন ইয়ত্তা নেই। নদী শিকস্তি মানুষের কত বুক ফাটা আত্মনাদ যে দ’ুচোখের জল হয়ে সর্বনাশা পদ্মার ¯্রােতে মিশে সাগরে গিয়ে পড়েছে তারও কোন হিসাব কারোই জানা নাই। প্রবল পরাক্রমশালী রাজা রাজবল্লভের কীর্তি পদ্মার ভাঙ্গনের মুখে পড়ে ধ্বংস হয়েছিল বলে পদ্মার আরেক নাম কীর্তিনাশা।
মুন্সিগঞ্জের মাওয়ায় পদ্মা সেতুঁ নির্মিত হওয়ায় পদ্মার দুই পাড়ের অনেক এলাকা নদী শাসনের আওতায় চলে এসেছে। কিন্তু পদ্মা ব্রীজের ভাটিতে ওপারের জাজিরা ও এপারের লৌহজংয়ের কিয়দংশ ও টঙ্গীবাড়ি উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়ন ব্যাপক ভাঙ্গনের মুখে পড়েছে। পদ্মার উত্তর-পূর্বপাড়ে অবস্থিত লৌহজং ও টঙ্গীবাড়ির উপজেলার ভাঙ্গনরোধে ডেল্টাপ্ল্যান গৃহিত হলেও দক্ষিণ-পশ্চিম পাড়ের হাসাইল-বানারী ইউনিয়নসহ আরো বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের ভাঙ্গনরোধে কার্যত কোন পদক্ষেপ এখনও গৃহিত হয় নাই। গত বর্ষায় নদী ভাঙ্গনে ঘরবাড়ি, জোত-জমি হারিয়ে এই এলাকার অনেক লোকজন সর্বশান্ত প্রায়।
করোনাকালে শহরের মানুষ যখন রোগ ও রোগী নিয়ে ব্যস্ত। নেতারা ব্যস্ত নৈমিত্তিক ব্রিফিং-এ সামান্য বিষয় নিয়ে বিষোদগারে। প্রশাসন ব্যস্ত নেতাদের প্রটোকল নিয়ে। ঠিক সেই সময়ে নদীপাড়ের এই অভাগা মানুষগুলি ব্যস্ত ভিটেমাটি, ঘরের চালা, গবাদিপশু, দৈনন্দিন ব্যবহার্য্য তৈজসপত্র সরানোর কাজে। ভাঙ্গন কবলিত এই এলাকার মানুষগুলির মধ্যে কেবলই উৎকণ্ঠা। সহায়-সম্বল হারিয়ে কপালে চিন্তার বলিরেখা। চারিদিকে শুধু কষ্ট আর চাপা কান্না। পরিচিত কাউকে দেখলে সে কান্না আর বাঁধ মানে না।
শুষ্ক মৌসুম পেরিয়ে বর্ষা আসতে আর বেশি দেরী নেই। চরাঞ্চলের এই মানুষগুলোকে নদী ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য এখনও কোন উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে না। তাই দিনে দিনে তাঁদের কপালে চিন্তার বলিরেখা গাঢ় থেকে গাঢ়তর হচ্ছে। আগামী বর্ষায় তাঁদের অবস্থা কী হবে- সে দুশ্চিন্তায় তাঁদের রাতের ঘুম হারাম হতে বসেছে।
নদী ভাঙ্গনরোধে স্থায়ী বাঁধের দাবিতে মুন্সীগঞ্জে পদ্মার পাড়ে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে সহস্রাধিক গ্রামবাসি। ১৪ জানুয়ারি সাড়ে ১১টায় জেলার টঙ্গিবাড়ী উপজেলার হাসাইল-বানারী ইউনিয়নের পদ্মার পাড়ে আলোর দিশারী সমাজ কল্যাণ যুব সংঘের আয়োজনে লৌহজং, টঙ্গিবাড়ী ও জাজিরার কিছু অংশের কয়েকটি গ্রামের সহস্রাধিক বাসিন্দা এই কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেন।
এ সময় মানববন্ধনে অংশগ্রহণ কারীরা বলেন, দেশ স্বাধীনের ৫০ বছর পার হলেও এই এলাকার পদ্মার ভাঙ্গনরোধে কোনো সরকারই কার্যকর কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। যে সরকারই ক্ষমতায় আসে, শুধু বাঁধের প্রতিশ্রæতি দেয়, কিন্তু বাঁধ আর নির্মাণ হয় না। বাঁধ নামক সোনার হরিণ কেবলই এলাকাবাসির কাছ থেকে পালিয়ে বেড়ায়। তাই অতিদ্রæত পদ্মার ভাঙ্গনরোধে কার্যকর ব্যবস্থা হিসেবে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ করা না গেলে আগামী বর্ষায় নদী গর্ভে হারিয়ে যাবে পুরো হাসাইল-বানারী ইউনিয়ন। তাই বিষয়টিকে বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে এই এলাকায় দ্রæত স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবি জানান এলাকাবাসি।
অঞ্জন দাস