বন্ধুরা তাকে ডাকতেন ‘টাইগার’ বলে। কেউ বলতেন ‘প্যাট’। পতৌদি খানদানের নবম এবং শেষ নবাব মনসুর আলী খান পতৌদি৷ পরিবার-পরিজন থেকে বন্ধুবান্ধব- সব মহলেই ছিলেন প্রখর রসবোধসম্পন্ন, বন্ধুবৎসল একজন মানুষ।
প্রাক্তন ভারতীয় ক্রিকেটার এবং জাতীয় দলের অধিনায়ক মনসুর আলী খান পতৌদি নবাব হয়েও চালচলন বা ব্যবহারে নবাবোচিত কোনও ব্যাপার ছিল না৷ হাবেভাবে সাধারণ একজন মানুষের মতো ছিলেন৷ সবার জীবনকে রাঙিয়ে তোলা এই মানুষটিই যখন মাত্র ২০ বছর বয়সে গাড়ি দুর্ঘটনায় ডান চোখের দৃষ্টি হারিয়ে ফেলেন, তখন তিনি স্বাভাবিকভাবেই জীবনের ছন্দ হারিয়ে ফেলতে পারতেন। কিন্তু পতৌদি জুনিয়রের ধমনিতে যে নবাবি রক্ত বইছিল। জীবনের অন্ধকার অধ্যায়কে স্বগুণেই আলোয় ভরিয়ে তুলেছিলেন তিনি।
মাত্র ২১ বছর বয়সে ভারতীয় দলের অধিনায়ক হওয়া এই ক্রিকেটার পরিচিতি পেয়েছিলেন ‘টাইগার পতৌদি’ নামে। ১৯৬১ সালে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট ক্রিকেটে অভিষেক হয় তার। শেষ করেন ১৯৭৫ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে টেস্টের মধ্য দিয়ে। মাঝে খেলেন ৪৬টি টেস্ট। ৩৪.৯১ গড়ে করেন ২ হাজার ৭৯৩ রান। নেতৃত্ব দিয়ে নয় টেস্টে জেতান ভারতকে।
১৯৭১ সালে ভারতে নবাবী প্রথা বাতিল হলেও ক্রিকেটার হিসেবেও ‘নবাব’-এর সম্মানই পেয়েছেন ভারতের পতৌদি পরিবারের নবম ও শেষ নবাব মনসুর আলী। তার নেতৃত্বেই ১৯৬৮ সালে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে দেশের বাইরে প্রথম টেস্ট জেতে ভারত। সে বছর উইজডেনের বর্ষসেরা ক্রিকেটার নির্বাচিত হন তিনি।
দলে বেশ কয়েকজন স্পিনার খেলানোর রীতি চালু হয় পতৌদির কৌশল থেকেই। ভারতের সর্বকালের সেরা ক্রিকেট অধিনায়কদের একজন ধরা হয় তাকে।
সাফল্যের স্বীকৃতি হিসেবে ১৯৬৪ সালে ‘অর্জুন’ ও ১৯৬৭ সালে ‘পদ্মশ্রী’ পুরস্কার পান মনসুর আলী। পদ্মশ্রী পুরস্কার পাওয়ার দুই বছর পর বলিউডের তখনকার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শর্মিলা ঠাকুরকে বিয়ে করেন তিনি।
তাদের দুই সন্তান সাইফ আলী খান ও সোহা আলী খানও বলিউডে চলচ্চিত্র অভিনেতা হিসেবে নাম কুড়িয়েছেন। এই দম্পতির আরেক মেয়ে সাবা আলী খান।
২০০৭ সাল থেকে ভারত ও ইংল্যান্ডের মধ্যে চলে আসা টেস্ট সিরিজের নাম ‘পতৌদি ট্রফি’র রাখা হয়েছে মনসুল আলীর প্রতি সম্মান জানিয়েই। এবার গ্রীষ্মে ভারত ও ইন্ডিয়ার মধ্যকার চার টেস্টের সিরিজ শেষে অ্যান্ড্রু ট্রাউসের হাতে ট্রফি তুলে দিয়ে আসার পরই অসুস্থ হয়ে পড়েন টাইগার পতৌদি। ২০১১ সালের ২২ সেপ্টেম্বর পৃথিবীকে চিরবিদায় জানান মনসুর আলী খান পতৌদি।
মৃত্যুর আগে তিনি তার চোখটি দান করে গিয়েছিলেন ভেনু আই ইনস্টিটিউটকে। নিজে ডান চোখে দেখতে পারতেন না বলেই হয়তো দুঃখীদের যন্ত্রণা আরও বেশি অনুভব করতে পেরেছিলেন। নবাব পতৌদির প্রত্যক্ষ পৃষ্ঠপোষকতায় দেড় লাখ দৃষ্টি-প্রতিবন্ধী সুস্থ হয়েছিল, জানায় ভেনু আই ইনস্টিটিউট। তবে সব রকম সামাজিক কর্মকাণ্ড চুপিসারে করতেই ভালোবাসতেন মনসুর আলী খান পতৌদি ৷ মনসুর আলী খান পতৌদি ১৯৪১ সালের ৫ জানুয়ারি ভোপালে জন্মগ্রহণ করেন ৷
গোপাল দেবনাথ, কলকাতা