অরুণা বিশ্বাস। বড়ো বিপদে ফেলে দিয়েছেন আমাকে এই বন্ধু। এই গুনী শিল্পীর জন্ম আগষ্ট মাসের ১ তারিখ। এই সত্যটা উনি জানেন এবং সমসাময়িক যারা তাদের অনেকেই জানেন। কিন্তু পরবর্তী প্রজন্ম যখন এই শিল্পীকে নিয়ে লিখতে যাবে, তখন হতবাক হবে আমাদের লেখায়। কারণ কাগজে পত্রে উনার জন্মদিন ১ জানুয়ারি। আজ যদি আমি উনাকে শুভেচ্ছা জানাতে চাই অরুণা সোজা বলবে, ‘আপনি তো জানেন আমার জন্মদিন ১ আগষ্ট’। কিন্তু, উনার স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় এমন কী কানাডায় যে প্রতিষ্ঠানে পড়াশোনা করেছেন সব সার্টিফিকেটেই ১ জানুয়ারি। এমন কী, NID, পাসপোর্ট, জন্ম নিবন্ধনেও তাই। এই পোস্ট আগামীর জন্য যারা গবেষণা করবেন বাংলাদেশের এই শিল্পীকে নিয়ে। অরুণা বিশ্বাসের বাবা, ‘একুশে পদক’ প্রাপ্ত প্রখ্যাত অভিনয় শিল্পী, যাত্রা সম্রাট অমলেন্দু বিশ্বাস। উনাকে পেয়েছিলাম খুব অল্প সময়ের জন্য। তরুন বয়সে। খুবই স্নেহ করতেন আমাকে। চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনে উৎসাহ দিতেন, পরামর্শ দিতেন। পেয়েছিলেন ‘সিকোয়েন্স এওয়ার্ড’। অরুণা বিশ্বাস এর মা, আমার মাসীমা জ্যোৎস্না বিশ্বাস, তিনিও পেয়েছেন ‘একুশে পদক’। এখনো তিনি যাত্রা শিল্পের এবং লোক সংস্কৃতির উন্নয়নে নিরলস কাজ করে চলেছেন, লিখছেন। সকলের কাছে তিনি বিবেচিত হন “যাত্রা সম্রাজ্ঞী” হিসেবে। অথচ, একটুও অহম বোধ নাই ভেতরে। আমাকে ঘরের ছেলে বিবেচনা করেই কথা বলেন। সংস্কৃতির কথা, জীবনের কথা। একেবারেই সাধারণ জীবন যাপন করেন। ছোট ভাই প্রসুন বিশ্বাস মিঠুর কাছে, আমি যেন বড় ভাই। তার প্রতিটি কথায়, যেমন রয়েছে বুদ্ধির স্ফুরণ, তেমনি ফুটে ওঠে শ্রদ্ধা এবং সম্মান। যাত্রা ভিশনের যে কর্মীরা আমাকে চেনে, তারাও যেন নিবেদিত প্রান। কিন্তু আমার সংগে এই যোগাযোগের বাইরে, অরুণা বিশ্বাস এক আলাদা সত্বা। এক ক্ষুরধার অভিনয় শিল্পী। মির্জাপুরের বিখ্যাত ভারতেশ্বরী হোমস থেকে এসএসসি, ঢাকার বদরুন্নেসা কলেজ থেকে এইচএসসি এবং ইডেন কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেন অরুণা। পাশাপাশি ধ্রুপদ নৃত্যে অর্জন করেন পারদর্শীতা। নৃত্যে তিনি পেয়েছেন স্বর্ন পদক। ছিলো সংগীত চর্চাও। এ সময় নায়করাজ রাজ্জাক তাকে ‘চাঁপা ডাঙার বউ” চলচ্চিত্রে বাপ্পারাজের বিপরীতে নায়িকা হবার প্রস্তাব করেন। বাবার ঘনিষ্ঠ বন্ধু, নায়করাজের এই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন নি অরুণা। প্রথম ছবিত তার অনবদ্য অভিনয় তামাম চলচ্চিত্র শিল্পের নজর কেড়ে নেয়। রোমান্টিক চরিত্রের পাশাপাশি, অভিনয় সমৃদ্ধ নায়িকা চরিত্রে অরুণার বিকল্প অনেকেই ভাবতে পারতেন না। নানাবিধ পারিবারিক প্রয়োজনে তিনি কানাডা প্রবাসী হন। সেখানেও তিনি ফার্মাসিউটিক্যাল টেকনোলজিতে ডিপ্লোমা করেন। এরপর নিয়মিত দেশে এসে চলচ্চিত্রে অভিনয়ের পাশাপাশি বেশকিছু নাটকে অভিনয় করেছেন, নাটক পরিচালনাও করেছেন। নাটক এবং ধারাবাহিক বিষয়ে অরুণার পরিকল্পনা শক্তিও প্রখর। সম্প্রতি তিনি একটি ছবি পরিচালনা করছেন। সরকারের অনুদান নিয়ে যাত্রা ভিশন প্রযোজিত এ ছবির নাম অসম্ভব। যারা এ ছবির শুটিং দেখেছেন, গান শুনেছেন তারা ভূয়সী প্রশংসা করছেন অরুণার। না, ১ জানুয়ারি, তার প্রাতিষ্ঠানিক জন্মদিনে আমি তাকে শুভেচ্ছা জানাবো না। কারণ অরুণার সত্যিকার জন্ম তারিখ আমি জানি। আমি শুধু দ্বিতীয় ধাপের শুটিং এ যাবার আগে পরিচালক অরুণার সাফল্য কামনা করছি, পাশাপাশি জানাচ্ছি নববর্ষের শুভেচ্ছা।
মুজতবা সউদ