খান আতাউর রহমান’র জন্মদিন এ গভীর শ্রদ্ধা

“এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে?” ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির এই গানের কথা কারো ভুলে যাবার নয়। শুধু এই গানটিই নয়, পুরো ছবিটাই যেন ছিলো পরাধীনতার খাঁচা ভেঙে বেরিয়ে আসতে চাওয়ার এক প্রতীকী চিত্র। ছবিতে এই গানটি গেয়েছিলেন এবং অন্যতম মুখ্য চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন এ দেশের চলচ্চিত্র ও সংস্কৃতি অংগনে বহুমুখী প্রতিভা হিসেবে খ্যাত খান আতাউর রহমান। মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়ের “পদ্মা নদীর মাঝি” উপন্যাস অবলম্বনে, এই দেশ, ভারত এবং ইউরোপীয় শিল্পী ও কুশলী নিয়ে নির্মিত “জাগো হুয়া সাভেরা” চলচ্চিত্রের নায়ক হয়েই চলচ্চিত্রে এসেছিলেন ঢাকা মেডিক্যাল কলেজের এই পলাতক ছাত্র। ভারত এবং পাকিস্তানের স্নায়ুযুদ্ধের কারণে এই ছবিটি চলতে দেয়া হয়নি উভয় দেশেই। ছবিটি মুক্তি পায় লন্ডনে। এরপর ইউরোপ ও এশিয়ার নানান দেশে। সুখ্যাতি ছড়িয়ে পড়ে ছবির এবং খান আতাউর রহমানের। এ দেশে একে একে স্ফুরণ ঘটতে থাকে তাঁর নানা মুখি বিস্ময়কর প্রতিভা। অভিনেতা, সুরকার, গীতিকার, গায়ক, চলচ্চিত্র নির্মাতা, সংলাপ রচয়িতা, প্রযোজক, সংগীত পরিচালক ও কাহিনীকার। বিভিন্ন শাখায় তিনি পাঁচ বার পেয়েছেন জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। পেয়েছেন বাচসাস সহ অনেক পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা। কিন্তু সেই খ্যাতি খান আতাউর রহমানকে কোন দিকে নিয়ে যাবে তা যেন আগাম টের পেয়েছিলেন তিনি। “জীবন থেকে নেয়া” চলচ্চিত্রের ওই গানের অন্তরায় তিনি গেয়েছিলেন “দিকে দিকে বাজলো যখন শিকল ভাঙার গান, আমি তখন নিজের মতো, হুজুর হুজুর করায় রত, চাচা আপন বাঁচা বলে, বাঁচিয়েছি প্রাণ…”। যেন নিজের ‘আসছে’ ভবিষ্যৎ বলে দিয়েছিলেন তিনি গানে গানে। শ্রেষ্ঠ চিত্রনাট্যকার, শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক, শ্রেষ্ঠ গীতিকার এই তিনটি শাখায় মোট পাঁচবার জাতীয় পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। ১৯৬৯ সালে মস্কো চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে তাঁর পরিচালনার ‘নবাব সিরাজউদ্দৌল্লাহ” ছবিটি শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র হিসেবে মনোনীত হয়। ১৯৬৫ সালে পাকিস্তান চলচ্চিত্র উৎসবে শ্রেষ্ঠ গীতিকার (ছবিঃ সূর্যস্নান) এবং শ্রেষ্ঠ সংগীত পরিচালক (ছবিঃ কাঁচের দেয়াল) হিসেবে পুরস্কৃত হন। ১৯৯৭ সালের পহেলা ডিসেম্বর প্রয়াত বিরল প্রতিভার এই মানুষটি ১৯২৮ সালের ১১ ডিসেম্বর মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইরে জন্মগ্রহণ করেন। মহান আল্লাহ যেন তাঁর সকল গুনাহ মাফ করেন এবং তাঁর আত্মা যেন শান্তিতে থাকে।
মুজতবা সউদ