দরদ ভরা কণ্ঠে কোন পাখীকে ডেকেছিলেন তিনি জানিনা। সেই পাখীর ঘুম ভাঙুক আর না ভাঙুক, ২০১৭ সালের নভেম্বরে, নিজেই চিরতরে ঘুমিয়ে গেছিলেন বারী সিদ্দিকী। আমার ঘুম ভেঙেছিল ২৪ নভেম্বর সকালে। ঘুম ঘুম চোখে, জানতে পেরেছিলাম গতকাল অর্থাৎ ২৩ নভেম্বর দিবাগত রাতেই চিরতরে ঘুমিয়ে গেছেন বারী সিদ্দিকী। ২৪ তারিখের (২০১৭ সাল) পেপারে রয়েছে এই সংবাদ। ২৩ নভেম্বর দিবাগত রাত কয়টায় তা জানা নেই, মনে ওই ২৩ তারিখটায় গেঁথে আছে। তবে, উইকিপিডিয়ায় বারী সিদ্দিকী’র প্রয়ান দিবস লেখা আছে ২৪ নভেম্বর। ওই দিন, নেত্রকোনার নিজ গ্রামেই বারী সিদ্দিকীকে সমাহিত করা হয়। আমরা হাজার ডাকলেও তিনি আর কোনদিন আসবেন না। বারী সিদ্দিকী ১৯৫৪ সালের ১৫ নভেম্বর বাংলাদেশের নেত্রকোণা জেলায় এক সংগীত প্রিয় পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। পরিবারে গানের চর্চ্চা ছিলো। বাড়িতেই তার গান শেখার হাতে খড়ি। ১২ বছর বয়সেই নেত্রকোণার শিল্পী ওস্তাদ গোপাল দত্তের অধীনে তার আনুষ্ঠানিক গান শেখা শুরু হয়। ওস্তাদ আমিনুর রহমান, দবির খান, পান্নালাল ঘোষ সহ অসংখ্য গুণীশিল্পীর সরাসরি সান্নিধ্য পেয়েছিলেন তিনি। ১৯৯০ দশকে ভারতের পুনে গিয়ে পণ্ডিত ভিজি কার্নাডের কাছে তালিম নেন। দেশে ফিরে এসে লোকগীতির সাথে ক্লাসিক মিউজিকের সম্মিলনে গান গাওয়া শুরু করেন। ১৯৯৫ সালে বারী সিদ্দিকী প্রখ্যাত সাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদের ‘রঙের বাড়ই’ নামের একটা ম্যাগাজিন অনুষ্ঠানে জনসমক্ষে প্রথম সঙ্গীত পরিবেশন করেন। এরপর ১৯৯৯ সালে হুমায়ূন আহমেদের রচনা ও পরিচালনায় নির্মিত ‘শ্রাবণ মেঘের দিন’ চলচ্চিত্রে ৭টি গানে কণ্ঠ দেন। এর মধ্যে “শুয়া চান পাখি” গানটির জন্য তিনি অতিদ্রুত ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করেন। এখনও বাংলার ঘাটে, মাঠে, চায়ের দোকানে থেকে শুরু করে উচ্চবিত্ত মানুষের ঘরে শোনা যায়, কোন এক অচেনা শুঁয়াচান পাখিকে ডেকে চলেছেন বারী সিদ্দিকী। প্রার্থনা করি মহান আল্লাহ যেন এই দরদী কন্ঠের শিল্পীকে বেহেশত নসীব করেন।
মুজতবা সউদ