ম হামিদ। স্বজন হারানোর বেদনায় এই বীর মুক্তিযোদ্ধা এখন কাতর। বাংলাদেশের সংস্কৃতি অংগনে তাঁর পরিচয়ের বিস্তার ঘটানোর কোনো প্রয়োজন হয় না। স্বাধীনতার পর এ দেশের আধুনিক নাট্যচর্চার পুরোধা ব্যাক্তিত্ব তিনি। ১৯৭২ সালের সেপ্টেম্বরে প্রতিষ্ঠিত নাট্যচক্রের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ম হামিদ। এই সংগঠনের সঙ্গে ওতোপ্রোতভাবে জড়িয়ে ছিলেন শেখ কামাল। জগন্নাথ কলেজে পড়ার সময়ই তিনি নাটকের সংগে জড়িয়ে পড়েন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক থাকার সময় কল্যাণ মিত্রের ‘সুরুজমহল’ নাটকে হামিদ ভাইয়ের প্রথম অভিনয়। পরবর্তীতে এ দেশের মঞ্চ নাটক সমৃদ্ধ হয়েছে তাঁর অভিনয়ে, কুশলতায়, নির্দেশনায়, সাংগঠনিক তৎপরতায়। দীর্ঘদিন তিনি গ্রুপ থিয়েটার ফেডারেশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। কর্মজীবনে তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশন, নিমকো, এফডিসিতে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে ছিলেন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ টেলিভিশনে মহা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করেন। ম হামিদ বাংলাদেশ সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের ভাইস চেয়ারম্যান পদে দায়িত্ব পালন করে চলেছেন। হামিদ ভাইয়ের বর্ণাঢ্য কর্মজীবনের বর্ণনা ফেইসবুকের এই ছোট্ট পরিসরে দেবার সাধ্য আমার নেই। নাটকে অবদানের জন্য গণ প্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকার ২০১৮ সালে ম হামিদ ভাইকে শিল্পকলা একাডেমি পদক প্রদান করেছেন। এ ছাড়া বদরুদ্দিন হোসেন স্মৃতি পুরস্কার সহ পেয়েছেন নানান পুরস্কার, পদক ও সম্মাননা। হারিয়েছেন তিনি অনেক কাছের মানুষকে। নিকটজন তো বটেই, রণাঙ্গনের সহযোদ্ধা, ১৯৭৫ সালের নৃশংস ঘটনায় আদর্শের মানুষ আর ভালোবাসার জন, দীর্ঘ এই সময়ে কাছের মানুষ, সংস্কৃতির মানুষ, আত্মিক বন্ধনের মানুষ। কষ্ট পেয়েছেন, দুঃখ পেয়েছেন কিন্তু দেশের সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিয়ে যাবার কাজে, মুক্তিযুদ্ধের চেতনাকে উজ্জীবিত করতে দমে যাননি কখনো। কদিন আগে, হঠাৎ অগ্রজকে হারিয়ে যেন থমকে গেছেন তিনি। কিন্তু, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড থমকে নেই এক লহমাও। আহ্নিক গতি, বার্ষিক গতি রয়েছে আগের মতই। সূর্যকে ঘিরে পৃথিবীর পথ পরিক্রমায় আবার চলে এসেছে ১৫ নভেম্বর। ম হামিদ ভাইয়ের জন্মদিন। না, মনের এমন বিপন্ন অবস্থায় এই বীর মুক্তিযোদ্ধাকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানাতে চাই না। শুধু বলতে চাই, আমি, আমরা, এ দেশের সংস্কৃতি অংগনের মানুষেরা, এ দেশের স্বাধীনতা প্রেমী সকলে আপনাকে ভালোবাসে, শ্রদ্ধা করে। ভালো থাকুন, সুস্থ থাকুন।
মুজতবা সউদ