ক্লিনফিড বাস্তবায়নে সরকার যে উদ্যোগ নিয়েছে সেখান থেকে এক চুলও সরবো না বলে জানিয়েছেন তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। বৃহস্পতিবার দুপুরে সচিবালয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে বাংলাদেশ সম্পাদক ফোরামের আহ্বায়ক দৈনিক স্বদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক রফিকুল ইসলাম রতনের নেতৃত্বে সংগঠনের সদস্যদের সঙ্গে বৈঠককালে তিনি এ কথা বলেন।
বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন-সম্পাদক ফোরামের অন্যতম উপদেষ্টা ও আমাদের অর্থনীতির প্রধান সম্পাদক নাঈমুল ইসলাম খান ও ভোরের ডাক সম্পাদক বেলায়েত হোসেন, উপদেষ্টা ও বাংলাদেশের খবর সম্পাদক আজিজুল ইসলাম ভূঁইয়া, সদস্য সচিব ও আজকালের খবর সম্পাদক ফারুক আহমেদ তালুকদার, নির্বাহী সদস্য ও দৈনিক সংবাদ প্রতিদিন সম্পাদক রিমন মাহফুজ, বাংলাদেশের আলো সম্পাদক মফিজুর রহমান খান বাবু, দৈনিক মানবকণ্ঠের সম্পাদক দুলাল আহমেদ চৌধুরী ও দৈনিক শেয়ার বিজ সম্পাদক মীর মনিরুজ্জামানসহ আরও অনেকে উপস্থিত ছিলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, ক্লিনফিড বাস্তবায়ন সহজ ছিল না। ১৫ বছরে এটি বাস্তবায়িত হয়নি। এর আগেও একবার আমরা উদ্যোগ নিয়েছিলাম। নানা অজুহাতে করা সম্ভব হয়নি। এবার স্থির সিদ্ধান্ত নিয়ে আগে ভাগে গ্রাউন্ড ওয়ার্ক করে এবং যে সমস্ত জায়গা থেকে কথা উঠতে পারে তাদের জানিয়ে আমরা সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করেছি। সুতরাং এ সিদ্ধান্ত থেকে আমরা একচুলও নড়বো না। তিনি বলেন, আপনারা জানেন সার্বিকভাবে গণমাধ্যমের ক্ষেত্রে শৃঙ্খলা আনার জন্য সম্প্রচার, প্রিন্ট ও অনলাইন মাধ্যমে আমরা উদ্যোগ নিয়েছি। সেই উদ্যোগের অংশ হিসেবে ইতোমধ্যে অনেকগুলো কাজ করেছি।
ড. হাছান মাহমুদ বলেন, আপনাদের যে প্রস্তাব সেটার জন্য ধন্যবাদ জানাই। অন্তত প্রথমে ৫০টি পত্রিকা সম্ভব হলে ১০০টি পত্রিকার ক্ষেত্রে রিয়েলিস্টক যে সার্কুলেশন সেটার ভিত্তিতে ক্রম করা। আমি মনে করি এটা অনেক ভালো প্রস্তাব, আমি এটা করতে চাই।
মন্ত্রী বলেন, বিজ্ঞাপনের ক্ষেত্রে ই-টেন্ডারিং এর জন্য বিজ্ঞাপন যাচ্ছে না এটি কিছুটা জানতাম। তবে এত ভয়াবহ চিত্র সেটা জানা ছিল না। এ বিষয়ে আমরা সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলবো। ই- টেন্ডারিং হলেও যেন বিজ্ঞাপন যায়। আর আপনারা যে বকেয়ার কথা বলেছেন সেটা আমি জানি। অনেক পত্রিকার কয়েক কোটি টাকা করে বাকি আছে। কোর্টেও যে পড়ে আছে সেটা অবশ্য জানতাম না। এগুলো আমি জানলাম। দেশের মানুষ জানলেও মনে হয় ভালো হতো। কারণ এই বাকিটাতো থাকার কথা ছিল না। বিজ্ঞাপনের টাকা প্রজেক্টের মধ্যে ধরা থাকে।
এ বিষয়ে তথ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে আগেও সব মন্ত্রণালয়কে তাগাদা দিয়েছিলাম। আমরা পুনরায় তাগাদা দিতে পারি। আপনারাও বড় বড় মন্ত্রণালয়, বিচারপতির নজরে আনেন কোর্টে কতো কোটি টাকা বাকি। এটা করলে আমার মনে হয়, প্রধান বিচারপতি একটা নির্দেশনা দেবেন। তথ্যমন্ত্রী বলেন, ন্যায় ও ন্যার্যতার ভিত্তিতে কাজগুলো করার চেষ্টা করছি। এখন পর্যন্ত সেভাবে করার চেষ্টা করছি সেটাই আমার কাজ। নিয়মনীতি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করছি। দীর্ঘদিন ধরে নিয়মনীতিহীন চলছে, এভাবে এ মাধ্যমটা চলতে পারে না। অনেক নিয়মনীতি আছে কিন্তু যেগুলোতে নেই সেখানে প্রতিষ্ঠা করা প্রয়োজন।
এ সময় সম্পাদক ফোরামের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য নাঈমুল ইসলাম খান বলেন, ডিএফপির তালিকার ওপরে থাকা ইংরেজি ও বাংলা মিলিয়ে ৫০টি পত্রিকার ক্ষেত্রে একটা দৃঢ় পদক্ষেপ নিতে হবে। আপনার চিন্তায় যারা ভালো পত্রিকা, যারা জেনুইন টপ অর্ডরের পত্রিকা, আমরা আপনাকে বিনীতভাবে অনুরোধ করি টপে থাকা বাংলা-ইংরেজি পত্রিকাকে যার যার ন্যায্য অবস্থানে তালিকার মধ্যে আনার ব্যবস্থা করেন। টপ অর্ডারের ৫০টি পত্রিকা ঠিক করে দেন। মাথার যে পচন ওই জায়গাটা থেকে রক্ষা পাই। আমাদের ইজ্জত রক্ষা করুন।
পত্রিকায় সরকারি বিজ্ঞাপন কমে যাচ্ছে জানিয়ে নাঈমুল ইসলাম বলেন, ই-টেন্ডারিং চালু হওয়ায় তারা এখন আর পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিচ্ছে না। ই-টেন্ডারিং হলে পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দিতে হবে। সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ওয়েজবোর্ড মেনে বিজ্ঞাপন বিল দিচ্ছে না। সরকারি বিজ্ঞাপনের সঙ্গে এজেন্সি জড়িয়ে গেছে, তারা কমিশন নেয়। অনেক ক্ষেত্রে ৪০-৬০ শতাংশ কমিশন নেয়। অনেক সময় কাগজে লিখে কমিশন নেয়। আমাদের প্রফেশনে অমর্যাদাকর অবস্থানের চেয়ে চলে যাওয়ার সময় এসেছে হয়তো। নিয়মিত যে বিজ্ঞাপন পাই সেখানেও এখন কমিশন দিতে হয়। এটা আসলে ঘুষ, আমরা বলি কমিশন। সরকারি অফিসে বিজ্ঞাপনের বিল বকেয়া আছে। বিশেষ করে কোর্টে। এসব জায়গায় অতিরিক্ত বরাদ্দ না দিলে টাকা পাওয়া যাচ্ছে না।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রী যথার্থ বলেছেন, কোন দুঃখে মানুষ বিএনপিকে ভোট দেবে। আবার কি পেট্রোল বোমা মারার জন্য, ৫০০ জায়গায় এক সঙ্গে বোমা বিস্ফোরণের জন্য, আদালতে বোমা বিস্ফোরণের জন্য, বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গ্রেনেড হামলার জন্য, কিবরিয়া, আহসানুল হক মাস্টারের মতো লোকের মৃত্যু হওয়ার জন্য। বাংলা ভাই, শেখ আব্দুর রহমানের উৎপত্তি হওয়ার জন্য। এজন্য মানুষ তাদের ভোট দেবে? এগুলো আসলে খালি কলসি যেমন বেশি বাজে মির্জা ফখরুল ইসলাম সাহেবও প্রতিদিন বেশি বাজে। কারণ তারা সমর্থনহীন এজন্য তারা বেশি বাজে।
তথ্যমন্ত্রী আরও বলেন, তত্ত্বাবধায়ক সরকার বাংলাদেশে কোনোদিন হবে না। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারই নির্বাচনকালীন সরকারের দায়িত্ব পালন করবে। রুটিন কাজ করবে। আর নির্বাচন হবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে। সরকারের অধীনে নির্বাচন হয় না। সব উন্নত দেশে তাই হয়। আমাদের দেশেও তাই হবে।
আলমগীর কবির
