বঙ্গবন্ধুর মায়ের চরিত্রে তিন ছবিতে দিলারা জামান

অভিনেত্রী দিলারা জামান যেন একজন মায়েরই প্রতিমূর্তি। অসংখ্য নাটক-সিনেমায় তিনি মা। তরুণ সহশিল্পীদের অনেকে শুটিং সেটে তাঁকে ‘দিলারা মা’ সম্বোধন করেন। মায়ের ভূমিকায় এত অভিনয় করার পর ৭৯ বছর বয়সে যেন জীবনের সেরা ‘মা’র ভূমিকাটি পেয়েছেন তিনি। নির্মিতব্য জীবনীচিত্র বঙ্গবন্ধুতে তিনি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মা শেখ সায়েরা খাতুন। ঢাকায় নির্মিত বঙ্গবন্ধুর জীবনীচিত্র টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই ও চিরঞ্জীব মুজিব ছবি দুটিতেও তাঁর একই ভূমিকা। একে তিনি দেখছেন অভিনয়জীবনের সেরা অর্জন হিসেবে। তিনি বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের মায়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি, এর চেয়ে অভিনয়জীবনে আর বড় পাওয়া হতে পারে না। এই কাজের মাধ্যমে আমি ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকব।’
বঙ্গবন্ধুর শুটিংয়ে মুম্বাই গিয়েছিলেন দিলারা জামান। সেখানে তাঁকে মেকআপ-গেটআপে শেখ সায়েরা খাতুনের রূপ দেন পরিচালক শ্যাম বেনেগাল। পরে আয়নায় নিজেকে দেখে চমকে ওঠেন দিলারা, ‘বঙ্গবন্ধুর মায়ের ভূমিকায় নিজেকে দেখে ভীষণ অবাক হয়েছি। কেবল আমাকে না, যারা বঙ্গবন্ধু ছবিতে অভিনয় করেছে, সবাইকে একেবারে সত্যিকারের চরিত্রের রূপ দিয়েছে। এমনকি বঙ্গবন্ধুর ঢাকার বাড়ি, টুঙ্গিপাড়ার বাড়িটাও যেন একেবারে হুবহু একই রকম করে তৈরি করেছিলেন। শেখ কামালের চরিত্র যে করছে, তাকে দেখে চমকে উঠেছি।’
১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট চট্টগ্রামে ছিলেন দিলারা জামান। সেদিনের কথা মনে পড়ে? দিলারা জামান বলেন, ‘১৪ আগস্ট রাতে আমরা বলাবলি করছিলাম, কয়েক বছর আগেও আমাদের এই দিনটাকে স্বাধীনতা দিবস হিসেবে পালন করতে হতো। পরদিন চট্টগ্রাম বেতার থেকে খবর ভেসে এল। সেদিন আমাদের কী অবস্থা হয়েছিল, সে কথা বলার শক্তি খুঁজে পাচ্ছি না। সেদিন চারপাশ সবকিছু নিস্তব্ধ, ভয়ে কেউ বাসা থেকে বের হচ্ছে না। কেউ কিছু জানতেও পারছে না। পরে ঘটনা শুনে মনটা ভেঙে গেল। ওই বাড়িতে (শেখ মুজিবের বাড়ি) পরপর দুটো বিয়ে হয়েছিল। বাড়িটা আনন্দের মধ্য দিয়ে যাচ্ছিল। সেই সময় দেশে একটা কালরাত্রি নেমে এল। এটা ইতিহাসের সবচেয়ে বিষাদময় ঘটনা, আমাদের জন্য কলঙ্কজনক একটা দিন।’
সেলিম খান পরিচালিত টুঙ্গিপাড়ার মিয়া ভাই ও জুয়েল মাহমুদ পরিচালিত চিরঞ্জীব মুজিব ছবি দুটি প্রসঙ্গে দিলারা জামান জানান, নির্মাতারা মোটামুটি চেষ্টা করেছে। তিনি বলেন, ‘যেখানে অসংগতি মনে হয়েছে, সেখানে তাদের টুকটাক ধরিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করেছি। ছবি দুটি আমার দেখার সুযোগ হয়নি। তবে ডাবিংয়ের সময় যতটা দেখেছি, মোটামুটি ভালোই লেগেছে।’
অন্যদিকে ভারত-বাংলাদেশ যৌথ প্রযোজনায় নির্মিতব্য বঙ্গবন্ধু ছবি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘পরিচালক শ্যাম বেনেগাল আমাকে বেহেনজি বলে ডাকতেন। খুব যত্ন নিয়েছেন। একবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় তড়িঘড়ি ডাক্তার নিয়ে এলেন। তাঁর অধীনে ১০ জন পরিচালক কাজ করছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তাঁদের গভীর পড়াশোনা ও গবেষণা আমাকে বিস্মিত করেছে। বেনেগাল আমাকে জেশ্চার-পোশ্চার হাঁটাচলা, অভিব্যক্তিগুলো শিখিয়ে দিয়েছেন। শেখ লুৎফর রহমানের ভূমিকায় আমার সহশিল্পী ছিলেন (খায়রুল আলম) সবুজ ভাই। আমাদের সংলাপ ছিল কম। বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দেওয়া, আমাদের বাড়ি থেকে বের করে দেওয়া, এক কাপড়ে ঢাকায় আসা, এসবই উঠে এসেছে।’
রোমান রায়