শেখ নিয়ামত আলীকে জানাই শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা

শেখ নিয়ামত আলী। আমার প্রিয় নিয়ামত ভাই। চলচ্চিত্র পরিচালনায় এসেই একটা বড়ো রকমের ঝাঁকুনি দিয়েছিলেন বাংলাদেশের চলচ্চিত্র শিল্পে। আদি নিবাস বাগেরহাট জেলায় হলেও, শেখ নিয়ামত আলীর জন্ম হয়েছলো ভারতের ২৪ পরগনায়। দক্ষিণ গড়িয়া যদুনাথ বিদ্যা মন্দির থেকে স্কুল ফাইনাল উত্তীর্ণ হন ১৯৫৬ সালে। কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে নন কলেজিয়েট এক্সটার্নাল স্টুডেন্ট হিসেবে, সুরেন্দ্রনাথ কলেজ থেকে উচ্চ মাধ্যমিক, এরপর কোলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি এ পাশ করেন ১৯৬৪ সালে। তারপরই তিনি বাংলাদেশে চলে আসেন এবং ঢাকায় বসবাস করতেন। কর্মজীবনের পাশাপাশি তিনি জড়িয়ে ছিলেন চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের সংগে। তিনি এবং মসিহউদ্দিন শাকের, যৌথভাবে আবু ইসহাকের আলোচিত উপন্যাস “সূর্য দীঘল বাড়ি” অবলম্বনে একটি চলচ্চিত্র নির্মানের পরিকল্পনা করেন। এ সময় অনুদান প্রথা চালু হলে, তাঁরা এর চিত্রনাট্য জমা দেন অনুদান কমিটিতে। এটাই বাংলাদেশে অনুদান প্রাপ্ত প্রথম চলচ্চিত্র। এর শুটিং শুরু হয়, ১৯৭৭ সালে। দেশে এবং আন্তর্জাতিক অংগনে আলোচনার ঝড় ওঠে ছবিটি মুক্তি পাবার পর। জার্মানর ম্যানহাইম হাইডেলবার্গ আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব এবং পর্তুগালের ফিগুএরা দ্যঁ ফোজ চলচ্চিত্র উৎসবে পাঁচটি আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও সম্মাননা অর্জন করে “সূর্য দীঘল বাড়ি”। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে শ্রেষ্ঠ চলচ্চিত্র সহ আটটি শাখায় এবং বাচসাস পুরস্কারে ছয়টি শাখায় পুরস্কার জিতে নেয় এই ছবিটি। এরপর তিনি তার একক পরিচালনায় নির্মাণ করেন “দহন” ছবিটি। জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে তিনটি শাখায় এবং বাচসাস পুরস্কারে দশটি শাখায় শ্রেষ্ঠত্বের পুরস্কার অর্জন করে ছবিটি। কার্লোভিভেরি চলচ্চিত্র উৎসবের প্রতিযোগিতা বিভাগে যে ২৫ টি ছবি চূড়ান্ত প্রতিযোগিতার জন্য মনোনীত হয়, তাতে একমাত্র সাদাকালো ছবি ছিলো “দহন”। শেখ নিয়ামত আলী পরিচালিত এরপরের ছবি “অন্য জীবন” অর্জন করে ১১ টি বিভাগে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার। এ ছাড়া তিনি একটি প্রামাণ্যচিত্র এবং একটি নাটক নির্মান করেছিলেন। চলচ্চিত্র পরিচালনার পাশাপাশি তিনি জড়িয়ে ছিলেন সাংস্কৃতিক অংগনেও। “বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোট” সক্রিয় ছিলেন তিনি। অংশ নিতেন জোটের অনেক আয়োজনে। ১৯৩৯ সালের (মতান্তরে ১৯৪০) ৩০ এপ্রিল জন্মগ্রহণ করেন শেখ নিয়ামত আলী। শ্রদ্ধা এবং ভালোবাসা এই গুনী মানুষটির প্রতি।
মুজতবা সউদ