“এবং করোনা অতঃপর” থেকে কিছু অংশ সবার জন্য করোনার ঝাপটা, পেশা বদল, মধ্যবিত্তের সংকট

উৎকন্ঠিত আধার ক্রমেই সর্বগ্রাসী হয়ে উঠছে। শহরের বাসা গুটিয়ে দিশেহারা অনেক মানুষ গ্রামে চলে যেতে বাধ্য হচ্ছেন। সেখানেও কি স্বস্তি, শান্তি ও বসবাসের নিশ্চয়তা আছে? রয়েছে কি কর্মসংস্থানের প্রচুর সুযোগ সুবিধা? এই সকল প্রশ্নের সহজ সরল উত্তর হচ্ছে না। সরকারী চাকুরে আর খ্যাতনামা কিছু প্রতিষ্ঠান ছাড়া অন্য পেশাজীবীদের জীবিকা এখন অনিশ্চিত। চাকুরী হারা কেউ কেউ ভ্যানে করে সবজি বিক্রির কাজ নিয়েছেন। লাজ লজ্জার ধার না ধারে দু’মুঠো অন্নের জন্য অনেকে বেছে নিয়েছেন ফেরিওয়ালার জীবন। করোনাকালে কেউবা মোটর বাইকে করে পন্য ডেলিভারি দেওয়ার কাজ নিয়েছেন। চারিদিকে পেশা বদলের সময় চলছে এখন। জীবন যুদ্ধে হার মানলে চলবে কেন? বাড়ি ভাড়া বাকি পড়েছে অনেকের। টু-লেট বাড়ছে। বাড়ী ভাড়া দিতে না পারা ভাড়াটিয়া এবং ভাড়া না পাওয়া বাড়িওয়ালা অনেকেই কিন্তু মধ্যবিত্ত শ্রেণির। দ্বিধা, লজ্জা ও সংকোচ তাদের ক্রমবর্ধমান দুর্দশা ও বিড়ম্বনার কারণ। যতই বাড়ছে করোনা সংক্রমনের ব্যাপকতা, মধ্যবিত্তের দুর্ভোগ ততই প্রবল ও দুর্বিষহ হচ্ছে। কবে কখন যে এই অসহনীয় অধ্যায়ের অবসান হবে তা কারো জানা নেই। রূঢ় এই বাস্তবতায় মধ্যবিত্ত শ্রেণিটি টিকে থাকবে কি করে? জটিল এ প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে হবে আমাদের সমাজপতি ও অর্থনীতিবিদদের। বেসকরকারী অনেক প্রতিষ্ঠানেই বেতন ভাতা বন্ধ। কাজ করলেও মজুরী মিলছে না। পোশাক খাতের কর্মীরা বরাবরের মতই বঞ্চনার শিকার। প্রবাসী শ্রমিকেরা প্রতিনিয়ত কাজ হারাচ্ছেন। অনেকে স্বদেশে আটকা পড়ে আছেন। সেদিন টিভি রির্পোটিং এ দেখলাম একজন স্কুল শিক্ষক গ্যাস সিলিন্ডার বিক্রির কাজ করছেন। খ্যাত নামা ফুটবল খেলোয়াড় ইট ভাটার শ্রমিক হিসাবে কাজ করছেন। অনেক কিন্ডারগার্টেন ও বেসরকারী স্কুল বাড়ী ভাড়া না দিতে পারার কারনে বন্ধ হয়ে গেছে। ছাত্রছাত্রীদের বেঞ্চ ও চেয়ার টেবিল বিক্রির সংবাদ ও পাওয়া গেছে। বিভিন্ন গবেষনা সংস্থার হিসাবে প্রকাশ, নানান সেক্টরে এদেশে কাজে নিয়োজিত মানুষের সংখ্যা ছিল ৬ কোটি ৮২ লাখ। করোনা ভাইরাসের বিষাক্ত ছোবলে কর্মহীন হয়ে পড়েছে ৩ কোটি ৬০ লাখ মানুষ। পরিস্থিতি কতটা বিপজ্জনক ও আশঙ্কার তা সহজেই অনুমান করা যায়। আর্ন্তজাতিক শ্রম সংস্থা আইএলও’র সর্বশেষ রির্পোটে যে তথ্য মিলেছে তা-ও দুশ্চিন্তা বাড়িয়ে দেয়। আইএলও বলছে, করোনা প্রবাহের দ্বিতীয় জেরে বিশ্বব্যাপী ৩৪ কোটি মানুষ কাজ হারাতে পারেন। বিপর্যন্ত দেশগুলোর তালিকায় রয়েছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশের নামও।
মোঃ ইকবাল হোসেন সোহাগ