বিদ্যুৎ ব্যবস্থাকে বলা হয় একটি দেশের চালিকা শক্তি। উন্নত বিদ্যুৎ ব্যবস্থার সাথে কোন দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের বিষয় জড়িত। দেশে করোনার কারনে লকডাউন শুরু হয় ২৬ মার্চ ২০২০ইং থেকে। ঘোষনা হয় সাধারণ ছুটি। তাই ভাইরাসের সংক্রমন জনিত কারণে দেশের বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানীগুলো প্রতি মাসের বিল আলাদা না করে তিন মাসের বিল একসঙ্গে প্রস্তÍত করায় অতিরিক্ত বিলের কারণে গ্রাহকদের উপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি হয়েছে। এমনিতেই সাধারণ জনগন করোনা ভাইরাস নিয়ে উৎকন্ঠায়, আয় কমে গেছে অধিকাংশ মানুষের তাই বিদ্যুৎ বিলের পরিমান বেশি দেখে স্বভাবতই অনেকের মাথায় বাজ পড়ার মত হয়। আমি যেহেতু বিদ্যুৎ বিভাগের একজন কর্মী তাই বিষয়টি নিয়ে পেশাগত দায়বদ্ধতা থেকে কিছু আলোকপাত করলাম। ডিপিডিসি’র জেনারেল ম্যানেজার (আইসিটি) জনাব রবিউল হুসাইনের দেয়া তথ্য মতে, করোনার কারণে মার্চ, এপ্রিল ও মে এই তিন মাসের বিল একসঙ্গে করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারীর বিল ঠিক ছিলো। তাই মার্চের প্রথম তারিখ এবং মে মাসের শেষ তারিখের রিডিং নিয়ে তিন মাসের মোট বিল একসঙ্গে করা হয়েছে। তিন মাসের বিল একসাথে পাওয়ায় গ্রাহকের কাছে বিল বেশি মনে হয়েছে। এছাড়া এই সময়ে গরমের কারণে গ্রাহকরা বেশি বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। আর মার্চ মাস থেকে যে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে এটা গ্রাহকদের মাথায় নেই।” এ বিষয়ে ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বিদ্যুৎ বিলের ত্রুটির কথা স্বীকার করেন। কিন্তু তিনি দাবি করেন, “ তিন মাসের বিলের ধাপ একসঙ্গে নির্ধারণ করা হয়নি। গড় করে প্রতিমাসের বিলে ধাপ আলাদাভাবে নির্ধারণ করা হয়েছে।” অবশ্য বিলে কিছু ভুল আছে এবং তা সংশোধন করা হয়েছে। তিনি বলেন, “ওভার এবং আন্ডার বিলিং, দুই ধরনের ঘটনাই ঘটেছে। যোগ, বিয়োগ করতেও কিছু ভুল হয়েছে।” আমার নিজের মতে লকডাউনে লোকজন বেশি সময় ঘরে থেকেছে ফলে বিদ্যুৎ ব্যবহারও বেড়েছে। তাছাড়া মার্চ মাস থেকেই গরম বেড়েছে এবং বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) কর্তৃক ১ মার্চ থেকে বিদ্যুতের নতুন দাম কার্যকর এসব কিছু এবং তিন মাসের বিল একত্রে পাওয়াতেই গ্রাহকের কাছে বিল বেশি বলে প্রতিয়মান হয়েছে। কিছু কিছু জায়গায় ভুল থাকতেও পারে যা সংশোধন যোগ্য। তারপরেও বিদ্যুতের বেশি বিল নিয়ে গ্রাহকদের ভোগান্তির করনে মন্ত্রনালয়ের তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে। ডিপিডিসি’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক বিকাশ দেওয়ান বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশের আগেই আমাদের ডিপিডিসি’তে একটি তদন্ত কমিটি করা হয়েছে। কেন এই বিল বেশি আসছে সেটি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।” ঢাকা ইলেকট্রিক সাপ্লাই কোম্পানী লিঃ (ডেসকো) ব্যবস্থাপনা পরিচালক কাউসার আমির আলী স্ল্যাব পরিবর্তনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, “অনেকের ক্ষেত্রে তিন মাসের বিল একসঙ্গে করতে গিয়ে বিদ্যুতের দাম উপরের স্ল্যাবে চলে গেছে। তাদের কথা চিন্তা করে আমরা চেষ্টা করেছি, তিন মাসের গড় করে একটা বিল দিতে। যাতে গ্রাহক নিজের স্ল্যাবের বিদ্যুতের দামেই বিল পরিশোধ করতে পারেন।”
এই বিষয়ে একজন বিদ্যুৎ গ্রাহকের মার্চ থেকে মে মাসের বিলের ক্যালকুলেশন তুলে ধরলাম বিষয়টি আরোও স্পষ্ট হওয়ার জন্য : ধরা যাক একজন গ্রাহকের ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ রিডিং বা মার্চ মাসের প্রথম রিডিং ৭২৯৪৯ এবং মে মাসের শেষ রিডিং মিটার অনুযায়ী ৭৫৪৭১। মার্চ মাসে বিল করা হয়েছিল ৪০৭ ইউনিট এবং এপ্রিল মাসে ১০৯৪ ইউনিট। তাহলে তার গড় বিলটি নিম্নোক্ত ভাবে করা হয়েছে।
১ মে ক্লোজিং : ৭৫৪৭১
২ মার্চ ওপেনিং : ৭২৯৪৯
৩ ৩ মাসের পার্থক্য ইউনিট (১-২) : ২৫২২
৪ প্রতি মাসের বিল ইউনিট গড়ে : ৮৪১
৫ সমন্বয়কৃত বিল ইউনিট এপ্রিল মাসে : ৮৪১-১০৯৪= – ২৫৩
৬ সমন্বয়কৃত বিল ইউনিট মার্চ মাসে : ৮৪১-৪০৭=৪৩৪
৭ মোট সমন্বয়কৃত বিল ইউনিট (৫+৬) : – ২৫৩+৪৩৪=১৮১
৮ মোট ব্যবহৃত বিল ইউনিট (মার্চ+এপ্রিল+মে) : ৪০৭+১০৯৪+১০২১=২৫২২
৯ মোট সমন্বয়কৃত বিল টাকা (প্রিন্সিপ্যাল+ভ্যাট) : .৭২+০= ০.৭২
গ্রাহকদের কথা বিবেচনা করে লকডাউন শুরুর আগেই গত ২২ মার্চ দেশব্যাপী বিদ্যুৎ জ্বালানী খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে এক ঘোষণায় বলা হয় মার্চ, এপ্রিল, মে এই তিন মাসের বিদ্যুৎ বিল দিতে দেরি হলে কোন জরিমানা গুনতে হবে না আবাসিক গ্রাহকদের এবং সে মোতাবেক জরিমানা আদায়ও করা হয় নাই। উপরোক্ত যুক্তি ও ব্যাখ্যার আলোকে একথা বলা যায় আসলে বিদ্যুৎ বিল নিয়ে কোন অনিয়ম করা হয় নাই। তাড়াছা গ্রাহকের আঙ্গিনায় স্থাপিত মিটারের সর্বশেষ রিড়িং পর্যবেক্ষন করলেই ওভার রিডিং এর সমস্যা সমাধান হয়ে যায়। তথাপি বিদ্যুৎ বিল নিয়ে যদি কোন ভোগান্তি হয়েই থাকে তা শুধুমাত্র কোভিড-১৯ পরিস্থিতির কারনে হয়েছে যা সকলেই জ্ঞাত আছেন।
ইকবাল হোসেন সোহাগ