জননন্দিত শক্তিমান অভিনেতা শওকত আকবরের ২০তম মৃত্যুবার্ষিকী পালিত হল গত ২৩ জুন। তিনি ২০০০ সালের ২৩ জুন লন্ডনে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৩ বছর। অসাধারণ গুণি এই অভিনেতার স্মৃতির প্রতি বিন্ম্র শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।
শওকত আকবর (সাইয়েদ আকবর হোসেন) ১৯৩৭ খৃষ্টাব্দের ৭ মার্চ, ভারতের বর্ধমান জেলার হুগলিতে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতা ছিলেন হুগলির ইসলামিক কলেজের প্রভাষক। হুগলি স্কুলে প্রাথমিক লেখা-পড়া শুরু হয় তাঁর। স্কুলজীবন থেকেই সিনেমা দেখার ভিষন ঝোঁক ছিল, সেখান থেকেই অভিনয়ের প্রতিও অনেকটা আসক্ত হয়ে পরেন। স্কুলজীবনে তিনি মঞ্চে অভিনয় শুরু করেন। তাঁর অভিনীত প্রথম নাটক দেবদাস।
বর্ধমান জেলায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা শুরু হলে পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে তৎকালীন পূর্ববাংলার ঢাকায় চলে আসেন এবং গেন্ডারিয়ায় স্থায়ীভাবে বসবাস শুরু করেন। ঢাকা গভঃ মুসলিম হাই স্কুল থেকে ১৯৫২ খৃষ্টাব্দে মেট্রিক পাশ করেন। ১৯৫৪ খৃষ্টাব্দে জগন্নাথ কলেজ থেকে ইন্টারমিডিয়েট পাশ করে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি হন। একই কলেজে বন্ধু ছিলেন অভিনেতা আক্তার হোসেন। ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ ও সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজে বাৎসরিক নাটকে তাঁরা নিয়মিত অভিনয় করতেন। শওকত আকবর ১৯৬১ খৃষ্টাব্দে নাট্যশিল্পী মুক্তার সাথে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হন।
নায়ক হিসেবে শওকত আকবর অভিনীত প্রথম ছবি জিল্লুর রহিম পরিচালিত ‘এইতো জীবন’ (১৯৬৪তে মুক্তি পায়)। আর মুক্তিপ্রাপ্ত প্রথম ছবি মুস্তাফিজ পরিচালিত ‘তালাশ'( ১৯৬৩তে মুক্তি পায়)।
শওকত আকবর অভিনীত অন্যান্য ছবি-
পয়সে, সুতরাং, দিল এক শিশা, ভাওয়াল সন্ন্যাসী, সাতরং, পুণম কী রাত, জুগনু, আওর গম নেহি, আগুন নিয়ে খেলা, ভাইয়া, আখেরি স্টেশন, জংলী ফুল, ওয়েটিংরুম, হামদাম, অপরিচিতা, গোরী, চলো মান গায়ে, ভাইয়া, আলোর পিপাসা, অভিশাপ, মিলন, সাগর, জীবন থেকে নেয়া, বড় বউ, টাকা আনা পাই, জানাজানি, আপন দুলাল, ইশারা, অবুঝ মন, নতুন সুর, মেঘ ভাঙ্গা রোদ, ফকির মজনু শাহ, মহেশখালীর বাঁকে, আরাধনা, নদের চাঁদ, শহর থেকে দূরে, বিজয়িনী সোনাভান, দিওয়ানা, রাজকন্যা, হুর-এ আরব, চম্পাচামেলি, খোকনসোনা, ছুটির ঘন্টা, তরুলতা, বাজিমাৎ, সোহাগ, অগ্নিশিখা, জনতা এক্সপ্রেস, ঘরণী, মানুষ, ঈদ মোবারক, যদি জানতেম, ভাইভাই, দেনাপাওনা, পরিবর্তন, শক্তি, বিমানবালা, প্রেমকাহিনী, গোলমাল, সাধনা, হাইজ্যাক, জবাব, গৃহবিবাদ, বেরহম, তিন কন্যা, মাসুম, কুয়াশা, প্রতিরোধ, আওয়াজ, স্বর্গনরক, আদেশ, দিদার, অত্যাচার, ক্ষতিপূরণ, রঙিন রূপবান, সহধর্মিণী, বেদের মেয়ে জোছনা, শঙ্খমালা, পদ্মা মেঘনা যমুনা, কাসেম মালার প্রেম, হাঙর নদী গ্রেনেড, প্রভৃতি ।
আলোর পিপাসা ও বিমানবালা নামে দুটি ভালোমানের ছবিও পরিচালনা করেছিলেন শওকত আকবর।
১৯৬৬ খৃষ্টাব্দে, মুক্তিপ্রাপ্ত কাজী জহির পরিচালিত ‘ভাইয়া’ ছবিতে, ভাইয়া চরিত্রে অভিনয়ের জন্য নিগার পুরস্কার অর্জন করেন শওকত আকবর । জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারে, আজীবন সম্মাননা ও মেরিল-প্রথম আলো আজীবন সম্মাননাও পান তিনি।
খ্যাতিমান অভিনেতা শওকত আকবর মূলত নায়ক হয়ে চলচ্চিত্র অভিনয়ে আসেন। পরবর্তিতে তিনি সহ-নায়ক ও উচুমানের একজন চরিত্রাভিনেতা হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেন। নানা ধরনের চরিত্রে বাস্তবধর্মী অভিনয় করে, নিজের অভিনয় প্রতিভায় মুগ্ধ করেছেন এদেশের সিনেমাপ্রেমীদের। যখন যে চরিত্রে অভিনয় করেছেন, মানিয়ে গেছেন, উৎড়ে গেছেন অভিনয় পারঙ্গমতায়। চলচ্চিত্রে নিজের অবস্থানকে নিয়ে গেছেন এক অনন্য উচ্চতায়। বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে একজন প্রতিতযশা অভিনেতা শওকত আকবর- চির অম্লান হয়ে থাকবেন, বাংলাদেশের চলচ্চিত্রে ।
আজাদ আবুল কাশেম