এলেবেলে প্রেম

অয়ন মুগ্ধ দৃষ্টিতে সোজা তাকিয়ে আছে নিশা’র চোখের দিকে। শুধু সুন্দর না! ব্রিলিয়ান্ট চোখ! ইচ্ছে করলে এই চোখের দিকে তাকিয়ে একটা জীবন পার করে দেয়া যায়।
কিছুক্ষণ আগে নিশা রিকশা থেকে নেমে অনেকটা দ্রুত হেঁটে এদিকটায় আসছিলো। প্রায় দৌড়ানোই বলা চলে।
ওর চুলগুলো দুপাশে হাঁটার তালে তালে দুলছিলো।
অয়নকে দেখেই দাঁত বের করে ভুবন ভোলানো একটা হাসি ছড়িয়ে গেল নিশার মুখে।
ব্যস! ওই চুলের দুলুনি, ব্রিলিয়ন্ট চোখ আর দাঁত বের করা হাসি! এই তিন ঘটনায় অয়নের কলিজাটা সারাজীবনের জন্য ছেঁদা হয়ে গেল।

ওরা এখন দাঁড়িয়ে আছে খামার বাড়ির কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের নার্সারিতে। গতকাল অয়নের দোকানে বসেই আজকের এই দেখা করার ব্যাপারটা ফাইনাল হয়েছে। নিশার সময়জ্ঞান দেখে অয়ন খুবই খুশি! কথা অনুযায়ী ঠিক দশটায়ই চলে এসেছে।
নিশা অয়নের চোখের সামনে তার একটা হাত নাড়া দিয়ে বললো,
: এই যে মিস্টার, কি দেখছেন? অয়ন একটু চমকে উঠে বললো,
: ওহহহ্! তোমাকে দেখছিলাম। আসলে তোমাকে না। তোমার মাঝে আমি আজ অন্য এক নিশাকে আবিষ্কার করলাম। এই লম্বা স্লিম ফিগারে কলাপাতা সবুজ কামিজ আর জাম কালারের চকচকে সাটিনের সালোয়ারে তোমাকে অদ্ভুত সুন্দর লাগছে! তুমি হেঁটে হেঁটে আসছিলে। চুলগুলো দুপাশে দুলছিলো। ওই দুলুনি দেখে আমি শেষ!
নিশা একটু লজ্জা পেয়ে গেল। ওড়নাটা একটু টেনেটুনে ঠিক করে নিলো। অয়নের মুগ্ধ দৃষ্টি এখন কোন দিকে, সেটা ওর নজর এড়ায়নি। বললো, আমরা কি এখানেই দাঁড়িয়ে থাকবো? নাকি কোথাও বসবো? অয়ন একটু কাছে ঘেঁষে নিশার একটা হাত ধরে নার্সারির গেটের দিকে এগিয়ে গেল।
কিছুক্ষণ আগেই এক পশলা বৃষ্টি হয়ে গেছে। কিন্তু আকাশ এখনো মেঘলা। বৃষ্টিতে ধুলোবালি ধুয়ে সাফ। তাই হাঁটতে ভালো লাগছে। নিশার গায়ের গন্ধ অয়নের মাথার ভেতরে ক্রমাগত ঘন্টা বাজিয়ে চলেছে। কি পারফিউম দিয়েছে কে জানে!
ইচ্ছে করছে এখনই এই ব্যস্ত রাস্তার উপরেই জড়িয়ে ধরতে!
কিন্তু না! এটা ইওরোপ কিংবা আমেরিকা না।
ষোল বছর বয়সী একটা সুন্দরী কিশোরী মেয়েকে এই রাস্তায় জড়িয়ে ধরার পরিনাম যে ভালো হবে না, এটা মাথায় আছে। তাছাড়া, মাত্র কয়েকদিনের পরিচয়। নিশাই বা কি ভাববে! অতি কষ্টে অয়ন মুখে একটা স্বাভাবিক হাসি ধরে রেখেছে।

নবীন সুপার মার্কেটের নিচতলায় একটা দোকান ভাড়া নিয়ে অয়ন স্যানিটারি আইটেমের ব্যবসা শুরু করেছে। ব্যবসার বয়স মাত্র সাত মাস। ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে পড়ার সময় থেকেই নানা ধরনের ব্যবসা করার চেষ্টা করছে। চাকরি বাকরি ভালো লাগে না। কারু আন্ডারে কাজ করার কথা সে ভাবতেও পারে না। খুচরা বিজনেসের প্রোজেক্ট সব ফেইল করেছে।
হঠাৎ করেই এক স্যানিটারি ব্যবসায়ীর সঙ্গে পরিচয়। তার উৎসাহেই এই দোকান নেয়া। প্রচুর ধারদেনা করতে হয়েছে শুরু করতে গিয়ে। ফিক্সড বিজনেস। হয়তো এবার ভাগ্যলক্ষী সদয় হতে পারে! বন্ধুরা অবশ্য সবাই খুব ইন্সপিরেশন দিচ্ছে।
আড্ডাবাজিও চলছে সমানতালে। ক্যাম্পাস লাইফে যেমন ছিল। দোকানে বসেই আড্ডা। দলবল নিয়ে লাঞ্চে বসা। সবই আগের মতো। এলাকার কিছু পাংক ছেলেপেলেও ইদানিং আড্ডায় শরিক হচ্ছে। মাস্তানি করতে এসে ভক্ত হয়ে গেছে। ওরা কল্পনাও করতে পারেনি যে অয়ন এতোটা টাফ! এতোটা কানেকশন মেইনটেইন করে! মাঝে মাঝে অয়নের বান্ধবীরাও এসে আড্ডায় বসে। প্রথম প্রথম মেয়েরা আসলে আশেপাশের দোকান থেকে কৌতুহলী চোখের উঁকিঝুঁকি বেড়ে যেত। প্রতিদিনের আড্ডা দেখতে দেখতে এখন ব্যাপারটা পানসে হয়ে গেছে।
ওই পাংক গ্রুপের ছেলেগুলোও তাদের বান্ধবীদের নিয়ে আসে মাঝে মাঝে। ওদের চাইতে বয়স কম হওয়ায় মেয়েগুলো পিচ্চি টাইপের হয়। অয়ন ন্যাচারালি আড্ডাবাজ। তাই এগুলো খুবই এনজয় করে।
ওই পিচ্চি মেয়েগুলোও এখন তার খুব ভালো বন্ধু হয়ে গেছে।
এদের একজন হচ্ছে নিশা। সবে এস এস সি পরীক্ষা দিয়েছে। খুবই ভালো স্টুডেন্ট! ওর বন্ধুরাই পরিচয় করিয়ে দেবার সময় বলেছে। মেয়েটার সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে অয়ন অবাক!
এই পিচ্চি বয়সী একটা মেয়ে দুনিয়ার সব বই পড়ে ফেলেছে! সমরেশ মজুমদার, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব গুহ, হুমায়ূন আহমেদ সহ সব লিজেন্ডারী লেখকদের লেখাই তার পড়া হয়ে গেছে। দুনিয়ার কবিতা এই মেয়ের মুখস্থ! অয়ন ভীষণ অবাক হয়ে বলে ফেললো,
: তুমি তো পড়াশোনায় ভালো! রেজাল্ট নাকি খুবই ভালো! তাহলে, এগুলো পড়ার টাইম পাও কিভাবে? চোখে চোখ রেখে মাথা নাচিয়ে নাচিয়ে নিশা বললো,
: আপনিও তো ব্যবসায়ী। এতো কিছুর খবর আপনি রাখেন কিভাবে? কথা বলার সময় নিশার ভ্রু, ঠোঁটের মুভমেন্ট একটা অদ্ভুত সুন্দর মায়া তৈরি করতে থাকে। আর বেচারা অয়ন এই মায়ায় ধীরে ধীরে ডুবে যায়। অয়ন একটু ভাব নিয়ে বলে,
: আমি কি তোমার মতো পিচ্চি নাকি! বয়স হয়েছে। তাই এতো কিছু পড়া আমার জন্য কোন ব্যাপার না! নিশা বলে,
: ইস্..! ভারী তো সিনিয়র ভাব নিচ্ছেন! আপনার বয়স আসলে কতো? অয়ন সরাসরি কোনো জবাব দেয় না। বলে,
: ইউনিভার্সিটি লাইফ শেষ। জীবন যুদ্ধে নেমে গেছি। বয়স তো হয়েছেই! তবে বিশ্বাস করো নিশা, তোমার বয়স হয়তো কম। কিন্তু মেন্টাল হাইট অনেক বেশি! এটা আমাকে মুগ্ধ করেছে!
আমি সত্যিই তোমার ফ্যান হয়ে গেছি!
আমি অনেকের সঙ্গেই মিশি। এদের মধ্যে মেয়েরাও আছে। কিন্তু কারু সাথেই আমার মেন্টাল কানেকশন সেট হয় না। আমি আড্ডাবাজ মানুষ। কিন্তু মনের মিল কোথায়?
নিশা চুপচাপ কথাগুলো শুনছিলো। বললো,
: আহারে….! দুনিয়ার মেয়ে ভক্ত আপনার! ওরা অনেকেই পাগলের মতো পছন্দ করে আপনাকে!
আমি নিজের চোখে দেখেছি! এখন বলছেন, মনের মিল হয় না! আশ্চর্য! শেষ কথাগুলো বলার সময় নিশার কন্ঠটা একটু ঈর্ষান্বিত শোনালো।
অয়ন অবাক হয়ে নিশার দিকে তাকিয়ে ওর কথাগুলো শুনলো। ভাবলো,
: মেয়েটা কি আমাকে ভালোবেসে ফেলেছে! কিন্তু কিভাবে সম্ভব! এরকম হাই ক্যালিবারের মেয়ে একটা দোকানদারকে পছন্দ করবে কেন! আমার হচ্ছে কমোড বেচার ব্যবসা। তাও আবার দেশি কমোড। বিদেশি হলেও না হয় একটা কথা ছিল! ওর বন্ধুদের মধ্যে অনেকেই আছে, যারা ওর প্রতি ভীষণভাবে দূর্বল! ওদের বয়সও নিশার সাথে অ্যাডজাস্ট করবে। কিন্তু অয়ন লক্ষ্য করেছে, নিশা পারসোনালি ওদের কাউকেই পাত্তা দেয় না। অফার দিয়ে দেখবো নাকি! যদি রিফিউজ করে দেয়!
নাহ্! এই স্টেজে এসে এই ধরনের রিস্ক নেয়াটা ঠিক হবে না। বরং অন্যভাবে আগে বাজিয়ে দেখি!
অয়ন বললো,
: আচ্ছা, কাল তো আমাদের এই শপিং মল বন্ধ থাকবে। আমরা কি বাইরে কোথাও মিট করতে পারি? নিশা খুশি হয়েই উত্তর দিলো,
: অবশ্যই পারি! আপনি দশটায় কৃষিবিদ ইনস্টিটিউশনের পাশের নার্সারিতে থাকবেন!
আমি আসবো!

বৃষ্টি ভেজা রাস্তায় হাঁটতে হাঁটতে অয়ন বললো,
: আমার এক বন্ধু থাকে ওয়ারীতে। মানিক। সারাদিন গান বাজনা নিয়ে পরে থাকে। মিউজিক কম্পোজার। ওদের ফ্যামিলি থাকে কানাডায়। মাঝে মাঝে দেশে আসে। আমরা ইচ্ছে করলে ওখানে যেতে পারি। অবশ্য তোমার যদি কোন আপত্তি না থাকে!
অয়নের খুব ভয় করছিলো, না জানি নিশা এই প্রস্তাব শুনে কিভাবে রিঅ্যাক্ট করে! কিন্তু নিশা খুব সহজ গলায় বললো,
: আমার কোন সমস্যা নেই। বরং ভালোই হবে! আমি একাই আজ সারাদিন আপনাকে দখল করে রাখতে পারবো! আপনার অন্য খেজুরগুলো কোন চান্স পাবে না। বলেই ফিক করে একটু হেসে আবার বললো,
: সন্ধ্যার আগে কিন্তু বাসায় ফিরতেই হবে! নইলে বয় ভাইয়া অনেক ঝামেলা করবে! একটা সিএনজি ডেকে দুজনে উঠে গেল।
অয়ন পকেট থেকে মোবাইল বের করে ওর বন্ধু মানিককে কল দিলো। জানিয়ে দিলো যে একজন গেস্ট আসবে সাথে। দুপুরে যেন লাঞ্চের ব্যবস্থা থাকে।

একবার কলিংবেল টিপতেই মানিক দরোজা খুলে দিলো। সহাস্যে বললো,
: আয় আয়! তোদের জন্যই অপেক্ষা করছি।
গল্প করার জন্য কাউকেই পাই না। গান নিয়ে যতই থাকিনা কেন, একসময় না একসময় বোরিং লাগেই! যাক বাবা, তোরা এসেছিস, কিছুটা আড্ডা দেয়া যাবে। অবশ্য দয়া করে যদি একটু সময় দিস আমাকে! বলতে বলতে মানিক ওদেরকে নিয়ে দোতলার একটা বেডরুমে নিয়ে গেল। বললো,
: এটা আমার রুম। কিন্তু খালি পড়ে থাকে। আমি আমার স্টুডিও নিয়েই আছি। ওটা নিচে। কাজ, আর ঘুম ওখানেই সব। তোরা কথা বল! আমি একটা কাজ নিয়ে বসবো। বাই দা ওয়ে, নিশার দিকে তাকিয়ে বললো,
: মিস বিউটিফুল, আপনাকে দেখে খুব ভালো লাগলো! অয়ন ঠিকই বলেছিল! ইউ আর গবেট! বলে, নিশা থ্যাংকস বলার আগেই চলে গেল।

ঘরে কোন সোফা বা চেয়ার নেই। নিশাকে খাটে বসিয়ে অয়ন দরোজাটা চাপিয়ে দিয়ে টিপ দিয়ে ভেতর থেকে লক করে দিলো। আড়চোখে তাকিয়ে নিশার প্রতিক্রিয়া বোঝার চেষ্টা করলো। আবার ভয় পায় কিনা!
নিশা খুবই স্বাভাবিক! খাটে এমনভাবে বসেছে, যেন এটা ওর নিজেরই বাসা। যাক, ভালোই হলো!
মেয়েটা আসলেই খুব স্মার্ট!
অয়ন ধীরে ধীরে এগিয়ে গিয়ে নিশার পাশে বসলো। নিশা অয়নের দিকে গভীর দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
: তারপর জনাব! এখন বলুন, হঠাৎ কি মনে করে আজকে আমাকে সময় দিলেন? বলে নিশা হাসিমুখে তাকিয়ে রইলো। অয়ন একটু নেশা ধরা গলায় বললো,
: তুমি বোঝ না? তোমাকে আমার খুবই ভালো লাগে! তুমি সামনে এলে আমার সবকিছু থমকে যায়। বলতে বলতে অয়ন নিশার কাঁধের ওপর দিয়ে তার ডান হাতটা তুলে দিলো। আরও কাছ ঘেঁষে এসে বাঁ হাতটাকেও নিশার অন্য কাঁধের ওপর দিয়ে জড়িয়ে ধরলো। মুখটাকে এগিয়ে নিয়ে প্রথমে নিশার বাম গালে একটা চুমু দিল। বুঝতে পারছিলো, তার হাতের ভেতর ওর শরীরটা শক্ত হয়ে উঠেছে। তারপরও ঠোঁট এগিয়ে নিয়ে নিশার ঠোঁটে অনেকটা জোর করেই একটা চুমু দিল।
মাথাটা ঝাঁকা দিয়ে নিশা তার ঠোঁট টা ছাড়িয়ে নিলো। বললো,
: প্লীজ, থামুন! আমরা আগে কথা বলি!
অয়নের শরীরে এখন আসুরিক শক্তি ভর করেছে।
নিশার কথা শোনার মতো অবস্থায় সে নেই।
এবার জোর করে ধরে নিশাকে শুইয়ে দিলো।
অয়নের শরীরের অর্ধেকটা এখন নিশার শরীরের উপর চেপে আছে। নিশার দুটো হাতই তার মাথার দুপাশে চাপ দিয়ে ধরা। এতো কাছ থেকে নিশার শরীরের অদ্ভুত সুন্দর গন্ধ অয়নকে পাগল করে দিচ্ছে! গলায় একটু নাক ঘষেই আবার ঠোঁটে চুমু দিতে গেল। দেখলো, বড় বড় চোখ মেলে তার দিকে স্থির দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে নিশা। কোন আবেগ নেই সে চোখে। একটু থমকে গেল অয়ন।
খুবই কঠিন কিন্তু নিচু গলায় নিশা বললো,
: আমি আপনাকে বিশ্বাস করে এখানে এসেছি।
ভুল করেছি?
ওই কন্ঠে এমন কিছু ছিল যা অয়নের পাগলামো একেবারেই ঠান্ডা করে দিলো। চেপে ধরা নিশার হাত ছেয়ে দিয়ে সোজা হয়ে বসলো।
একটু ক্ষুব্ধ কন্ঠে অয়ন বললো,
: তোমার যদি আমাকে ভালো নাই লাগে, এখানে আসলে কেন? আমরা কি এখানে মিলাদ মাহফিল পড়তে এসেছি? নিশা কিছুক্ষণ ব্যথিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল অয়নের দিকে। তারপর বললো,
: এটা কি ধরনের কথা! এভাবেই কি শুরু হয়!
আমাকে বলার মতো কোন কথাই কি নেই আপনার কাছে! কতো খুশিই না ছিলাম আমি! আপনাকে আমি ভীষণ পছন্দ করি অয়ন ভাই! ভেবেছিলাম, আজকে আমরা প্রাণভরে গল্প করবো! বলতে বলতে নিশা কেঁদে ফেললো।
পরিবেশ বদলে গেছে। কিন্তু অয়নের হতাশা একটুও কমলো না তাতে। ক্ষুব্ধ গলায় বললো,
: এমনটা হবে জানলে আমি তোমাকে আসতে বলতাম না। সময় নষ্ট করে লাভ নেই। চলো, এখান থেকে বিদায় হই! নিশা শুধু মাথা নাড়লো। খাট থেকে নেমে চুল এবং এলোমেলো কাপড় চোপড় ঠিক করে নিলো।

সকাল থেকেই অয়নের মনটা খুব খারাপ।
ব্যবসায়ও মন বসছে না।
সেদিনের ওই ঘটনার পর থেকে নিশা আর আসছে না।
প্রথম প্রথম ভেবেছিলো, নিজে থেকেই আসবে। না এসে যাবে কোথায়!
কিন্তু কোথায় যেন হিসেবে একটা গড়মিল হয়ে গেছে। প্রায় একমাস হয়ে গেছে। নিশার কোন খবর নেই। ওর বন্ধুরাও কিছু বলতে পারে না। আবার বেশি কিছু জানতে চাইলে সন্দেহ করতে পারে। বহু চেষ্টা করে ওদের গ্রুপের একজনের কাছ থেকে একটা টিএন্ডটি নাম্বার জোগাড় হয়েছে। নিশা’দের পাশের বাসার এক মহিলার নাম্বার। চাইলে নাকি ডেকে দিতে পারে। তবে শুধু অফিস টাইমে ফোন করতে হবে। কারন, ওই সময় নিশার বাবা বাসায় থাকে না। সাহস করে এখনও ফোন করা হয়নি।
নিশা মোবাইল ব্যবহার করে না। বাসার নাম্বারও ভয়ে কাউকে দেয় না। ফ্যামিলি অ্যালাউ করে না। বেশি কনজারভেটিভ ফ্যামিলি!
আজকাল তো ফোর ফাইভের বাচ্চারাও মোবাইল ব্যবহার করে! অসহ্য লাগছে!

এগারোটার মতো বাজে। দোকান ফাঁকা। এখন একটা ফোন করে দেখা যেতে পারে। ভাবতে ভাবতে দোকানের টিএন্ডটি নাম্বার থেকেই ওই নাম্বারে কল দিলো অয়ন। তিনবার রিং হতেই একজন মহিলা ফোন ধরলেন।
: হ্যালো! কে বলছেন? অয়ন জবাব দিলো।
: জি। আমি অয়ন বলছি। নিশার ফ্রেন্ড। ওকে কি একটু ডেকে দেয়া যাবে? মহিলা হেসে বললেন,
: অবশ্যই ডেকে দেয়া যাবে। নিশা আপনার কথা আমাকে বলে রেখেছে। আপনি লাইনে থাকুন! অয়ন হতভম্ব! বলে রেখেছে! অথচ একবার নিজেই আসতে পারতো! মিনিট খানেক পরেই ফোনে নিশার কন্ঠ ভেসে এলো।
: হ্যালো! কেমন আছেন? উত্তরের অপেক্ষা না করেই বললো,
: অয়ন ভাই আপনি ফোন করেছেন। আমি খুবই খুশি হয়েছি!
: তার মানে তুমি জানতে যে আমি ঠিকই তোমাকে ফোন করবো! রাইট?
: জানতাম বলা যাবে না। অনুমান করেছিলাম। বা আশা করেছিলাম বলতে পারেন।
: কিন্তু তুমি তো আমাকে তোমার নাম্বার কখনোই দাওনি। কিভাবে আশা করলে?
: তাতে কি! আমার ধারণা ছিল, আপনি আমাকে পছন্দ করেন। দরকার হলে, আমার বন্ধুদের কাছ থেকে খুঁজে নেবেন।
অয়ন একটু ক্ষুব্ধ গলায় বললো,
: এতোই যদি বোঝো, তাহলে আমাকে এতো দিন ধরে কষ্ট দিলে কেন? তুমি কি বোঝোনি, আমি তোমাকে কতটা মিস করেছি?
: না বুঝলে আপনার কল আশা করলাম কিভাবে?
বলেই নিশা খিলখিল করে হেসে উঠলো। বললো,
: আপনি কিন্তু আবারো ক্ষেপে যাচ্ছেন। তার চাইতে বলুন, আপনার ব্যবসা কেমন যাচ্ছে?
: তুমি বাচ্চা মেয়ে। ব্যবসার কি বুঝবে তুমি?
: তাই! আমি বাচ্চা মেয়ে! যদি তাই হয়, একটা বাচ্চা মেয়ের সাথে এরকম ব্যবহার করলেন কেন?
অয়ন একটু থমকে গেল। ভারী পাজি মেয়েতো!
সব কথার উত্তর রেডি থাকে! বললো,
: তুমি তো জানোই, তোমাকে আমি পছন্দ করি। তোমার কাছে আমার চাওয়া থাকতেই পারে! পছন্দ করি তোমাকে। চাইবো কি আরেকজনের কাছে? এবার নিশা চুপ। চাওয়া পাওয়ার প্রসঙ্গ চলে এসেছে। কোনরকমে বললো,
: কখনও প্রয়োজন হলে এখানে আপনি ফোন করতে পারেন। আমি এই আপাকে বলে রেখেছি।
ছোটবেলায় মা কে হারিয়েছি। এই আপাই আমার গার্ডিয়ান, বন্ধু, সবকিছু! আমি কাল সকালে আপনার ওখানে আসবো! থাকবেন তো?
মায়ের মৃত্যুর প্রসঙ্গ চলে আসায় অয়ন একটু অপ্রস্তুত হয়ে গেল। বললো,
: স্যরি! অবশ্যই থাকবো! তুমি আসবে, আর আমি থাকবো না। এটা হতে পারে!

নিশার প্রথম ডায়লগেই অয়নের কপালে ঘাম ছুটে গেছে। একটু আগেই পৌঁছেছে নিশা। অয়ন তার চেয়ারে বসে ছিলো। নিশা গ্লাস ডোর ঠেলে ভেতরে ঢুকেই একটা ছোট্ট ফুলের তোড়া হাতে ধরিয়ে দিয়েছে। হাসিমুখে বললো,
: একটা মেয়ের সাথে প্রথমবার খালি হাতে দেখা করতে গেলেন। ফুল নিয়ে যেতে পারতেন। নাকি ফ্লাওয়ার শপ খুঁজে পাননি? অয়নের কপালে চিকন ঘাম ছুটে গেল। বললো,
: সত্যিই তো! বিরাট ভুল হয়ে গেছে! স্যরি! এরকম ভুল আর হবে না!
: আর হবে না মানে কি? আপনি কি আমাকে আর আলাদা করে সময় দেবেন? ওই দিন আপনার রাগ দেখেই এটা বলছি।
অয়ন একটু বিব্রত। কলিং বেল টিপে চায়ের অর্ডার দিলো। তারপর বললো,
: মানুষ তো চেন্জ হয়। ওইরকম ঘটনা আর নাও ঘটতে পারে!
নিশা জবাব দিলো,
: তাই যেন হয়! আপনি নিজেকে একটু বদলে ফেললে খুবই ভালো হয়! অয়নের মুখে সুক্ষ্ম হাসি দেখা গেল। বললো,
: শুধু আমাকেই চেন্জ হতে হবে কেন? তুমিও তো চেন্জ হতে পারো!
: ইস্..! কোন চালাকি চলবে না! বিয়ের আগে এসব আমি অ্যালাউ করবো না! অয়ন একটু খোঁচা দিয়ে বললো,
: তোমার সমস্যা কি? তুমি তো আমাকে পছন্দ কর। নাহলে আমার সাথে তোমার মতো এতো সুন্দরী একটা মেয়ে সময় দেবে কেন! নিজেদের মধ্যে ভালোলাগা থাকলে যেকোনো কিছুই হতে পারে!
নিশা বললো,
: উঁহু! আপনার কথা ঠিক না। আপনি কিন্তু কথাবার্তায় খুবই ডিপ্লোম্যাটিক! এটা সবাই জানে যে বিয়ের আগেই সব পেয়ে গেলে চিড়িয়া উড়ে যেতে পারে!
হাসতে হাসতে অয়ন ঝটপট বললো,
: যাক না উড়ে! সমস্যা কি! যে যাবার সেতো যাবেই! বিয়ের পরে চিড়িয়া উড়ে গেলে ডাবল বিপদ! গলায় সাইনবোর্ড লেগে গেল। উড়ে গেলে আগেই যাক! এট লিস্ট, ফলস্ সাইনবোর্ড থেকে বেঁচে গেলে! তোমার এটা চেক করা উচিত! আই সাজেস্ট!

নিশা প্রথমে গম্ভীর হতে গিয়েও হেসে ফেললো। টিভি প্রোগ্রাম উপস্থাপকদের মতো ফর্মাল কন্ঠে বললো,
: আহারে! মেয়েদের এই এক্সট্রা সাইনবোর্ড নিয়ে আপনি কতো সুন্দর একটা আইডিয়া বের করেছেন! আমি ছাড়া সকল মেয়েদের পক্ষ থেকে আপনাকে ধন্যবাদ! কারন, আপনার এই আইডিয়াটা আমার পছন্দ হয়নি। বাদ দেন!
সব সময় এসে আপনার এখানে সুন্দর সুন্দর গান শুনি। আমার খুবই ভালো লাগে! আপনার গানের টেস্ট দারুন! আপনার গল্প উপন্যাস পড়ার রেঞ্জও অনেক হাই! গানের টেস্ট, পড়াশোনা, সব মিলিয়েই আপনাকে আমার ভীষণ ভালো লেগে গেছে!
গান বাজান! শুনি!
হাতের কাছেই থাকা কম্পিউটার থেকে অয়ন একটা পুরনো হিন্দি গান চালিয়ে দিলো। সাউন্ডবক্সে ভেসে এলো ” তুমসে মিলকে অ্যায়সা লাগা….”।

নিশার বাবা মইনুল ইসলাম সাহেব একটা প্রাইভেট ফার্মে চাকরী করেন। পেশায় ইন্জিনিয়ার। কন্সট্রাকশন ফার্ম দি মেকার্স লিঃ এর চিফ ইঞ্জিনিয়ার। সব মিলিয়ে মাত্র পঁচিশ জন মানুষ মিলে এই ফার্মটা চালান। কিন্তু দেশ জুড়ে মোটামুটি এই ফার্মের নামডাক হয়েছে ভালোই। এখন ঢাকায় একটা পঁচিশ তলা বিল্ডিং এর কাজ চলছে।
ব্যস্ততার কারণে মা মরা মেয়েটার খোঁজ খবর ঠিকমতো রাখা হচ্ছে না ইদানিং।
বড় ছেলেটা চার্টার্ড অ্যাকাউন্টিং পড়ছে।
ছোটটা প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছে।
নানারকম সাবজেক্টের কথা বলে। কি নিয়ে পড়ছে, এটা বোঝা মুশকিল।
এদিকে নিশারও রেজাল্ট দেয়ার টাইম চলে এসেছে। রেজাল্ট হলেই কলেজে ভর্তির নানা ঝামেলা!
আজকে শুক্রবার। ছুটির দিন। নাশতার টেবিলে মেয়েকে পেয়ে গেলেন। বললেন,
: মামনি, প্রায়ই শুনি, সারাদিন বাইরে থাকো!
ভর্তির জন্য পড়াশোনা করতে হবে না?
নিশা বাবার জন্য এক গ্লাস পানি এগিয়ে দিয়ে বললো,
: এখন না ঘুরলে কখন ঘুরবো? পরীক্ষা শেষ।
ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা দেবার এটাই সময়। ভর্তির পরেতো আবার পড়াশোনা নিয়েই ব্যস্ত হয়ে যাবো।
তাছাড়া সবার টাচে থাকলে ভর্তি পরীক্ষার ব্যাপারেও আপডেটেড থাকা যাবে।

মইনুল সাহেব আর বলার মতো কিছু পেলেন না।
ভাবলেন, মেয়েটা হঠাৎ করেই বড় হয়ে যাচ্ছে!
একদম মায়ের মতোই সুন্দর হয়েছে! লম্বাও হয়েছে তার মা’র মতো। এরিমধ্যে ওর বিয়ের জন্য কিছু প্রস্তাবও এসেছে। সোজা না বলে দিয়েছেন।
অন্ততঃ কলেজটা তো পার হোক! নিশা বলে উঠলো,
: বাবা, আমার কাছে কোন টাকা নেই। শেষ হয়ে গেছে। তিন হাজার টাকা দিতে পারবে?
: অবশ্যই পারবো মা! আমার মানিব্যাগে আছে। নিয়ে নাও! কি করবে এতো টাকা দিয়ে?
: আমার এক বান্ধবীর জন্মদিন আজ। ওর জন্য একটা গিফট কিনবো!
নিশা খুশি হয়ে বাবার রুমের দিকে গেল।
অয়নকে নিজের পছন্দে একটা শার্ট কিনে দেবে। টাকাটা আসলে ওই কাজেই লাগাবে।
মানুষটা কাজ আর বন্ধু বান্ধব নিয়ে এতো ব্যস্ত থাকে যে নিজে পছন্দ করে কিছু কেনার সময় পায় না। বাসা থেকে কেউ কিছু কিনে দিলে ওটাই পরে।
ভালো লাগা না লাগার ধার ধারে না।
আশ্চর্য রকমের একটা মানুষ!
একেবারেই বেখেয়ালি!
আজ পর্যন্ত বোঝাই গেল না, তার কি পছন্দ, আর কি না পছন্দ। নিশা বেশ কিছুদিন হলো খবরদারি বাড়িয়ে দিয়েছে। কোন কিছু কেনার সময় নিশাকে সাথে নিতেই হবে!
এসব অবশ্য খুশি মনেই মেনে নিচ্ছে। কিন্তু নিশা যা শুনতে চায়, সেটা বলে না।
একবার ভালোবাসার কথা বললে কি হয়!
এদিকে নিজেতো ভালোবাসায় ডুবে বসে আছে।
পরীক্ষার রেজাল্ট দেয়ার সময় হয়ে এসেছে।
কলেজে ভর্তি হওয়ার পর কতটুকু ফ্রী টাইম পাওয়া যাবে কে জানে!

অয়ন রাত এগারোটার দিকে বাসায় ফিরলো।
ড্রেস চেঞ্জ করে সোজা ডাইনিং টেবিলে।
মা খুবই গম্ভীর মুখে খাবার বেড়ে দিচ্ছেন। বললেন,
: প্রতিদিন দেরী করে আসিস! তোর বাবা রেগে অস্থির হয়ে থাকে। খাওয়া শেষে সোজা শুয়ে পড়বি! কোন গান বাজনার আওয়াজ যেন না শুনি!
মা যখন অয়নকে নিয়ে খুব টেনশন করে, এভাবেই রেগে রেগে কথা বলে। মা’র ভালোবাসার প্রকাশটাই এমন। এগুলো অয়ন জানে।
তাই বললো,
: আজকে খুবই খাটুনি গেছে মা! বেশ কিছু আইটেম শেষ হয়ে গেছিলো। ওগুলো কিনতে হয়েছে। অনেক দৌড়াদৌড়ির কাজ!
মা চট করে চেয়ারের পেছনে চলে এলেন।
মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
: এতো খাটুনি শরীরে টিকবে? খাওয়া দাওয়া আর বিশ্রাম ছাড়া সুস্থ থাকবি কি করে! এখন রাত না জেগে ঘুমিয়ে পড়!
অয়ন হাসতে হাসতে বললো,
: এগুলো সব তোমার কথা। খামোখা বাবার ভয় দেখালে কেন? মা এবার বিব্রত কন্ঠে বললেন,
: থাক থাক! আমার সাথে আর চালাকি করতে হবে না! যা বললাম, তাই কর!
: ঠিক আছে মা! আমি আজকে তোমার অনারে কোন গান শুনবো না! বলে, হাত ধুয়ে অয়ন তার বেডরুমে চলে গেল।

একটা সিগারেট ধরিয়ে আয়েশ করে বিছানায় বসলো। চিঠি লিখতে হবে। কাগজের চিঠি। এই যুগে কাগজের চিঠি! ভাবাই যায় না!
কিন্তু কি আর করা!
নিশা এই যুগের মেয়ে না। সব দিক থেকেই।
মোবাইল, ফেসবুক, ভাইবার কিছুই নেই!
বেশিমাত্রায় কনজারভেটিভ!
কাগজ কলম টেবিলেই রাখা। উঠে গিয়ে চেয়ারে বসলো অয়ন। লেখা শুরু করলো।

প্রিয় নিশা,
এই যুগে কাগজে চিঠি লিখে একটা রেকর্ড করতে যাচ্ছি। ভেবে ভালোই লাগছে।
অনেক কথা বলতে চাই তোমাকে। পারি না।
হয়তো আমাদের বয়সের গ্যাপটা এজন্য দায়ী।
তুমি আমাকে অনেক পছন্দ কর। আমি এটা জানি। কিন্তু জানি না, ভালোবাসো কিনা! বা হয়তো পছন্দটা ভালোবাসার কাছাকাছি।

আমিও কিছু বলতে সাহস পাইনা।
আমি দেখেছি, তোমরা মেয়েরা কয়টা করে ছেলেকে রিফিউজ করেছো বা ছাগল বানিয়েছো, এসব গল্প করতে খুবই পছন্দ করো!
বিশেষ করে, আমাদের কমন আড্ডায় এগুলো থাকেই!

আমার বাবা নিতান্তই মধ্যবিত্ত একজন মানুষ!
কাজেই সোনার চামচ মুখে নিয়ে আমার জন্ম হয়নি। সমসাময়িকদের তুলনায় অনেক কিছুর অভাব নিয়ে বড় হয়েছি। ওই লিস্ট এতো বড় যে এই চিঠিতে আঁটবে না।
যে জিনিষগুলোর অভাব কখনোই হয়নি শুধু সেগুলোই বলছি। বাবা মা’র অকুণ্ঠ আদর, সাপোর্ট এবং আত্মমর্যাদাবোধ।

তুমি এই জেনারেশনের মেয়ে। তার উপর সাংঘাতিক রকমের সুন্দরী! স্মার্ট। গুড স্টুডেন্ট।
কতো কি গুন তোমার! তোমার আর কি কি আমি পছন্দ করি, সব এখানে বলা যাবে না। বললে হয়তোবা সবটুকু না পড়েই চিঠিটা তুমি ছুঁড়ে ফেলে দিতে পারো।
এরকম একটা অসাধারন মেয়েকে অফার দেওয়ার সাহস আমি পাইনি। আসলে, ছাগল হতে চাইনি।
অস্বাভাবিক যে ঘটনাটা ঘটেছিল, তা ছিল নিছকই দূর্ঘটনা বা সাময়িক মোহ। আমার ধারণা, তোমার মতো আকর্ষণীয় একটা মেয়েকে কাছে পেলে যেকোন পুরুষই এমনটি ঘটিয়ে ফেলতে পারে।

তবে তোমার সাথে মিশতে মিশতে আমি একটা জিনিস বুঝে গেছি। তোমাকে ছাড়া আমার চলবে না। তুমি নিশ্চয়ই খেয়াল করেছো, এখন আমি সব ড্রেসই তোমার পছন্দে পরি। তোমার পছন্দেই খাই। এটা কিভাবে হলো, জানি না। কিন্তু হয়ে গেছে।
তোমাকে আমি গভীরভাবে ভালোবেসে ফেলেছি!
এখন তোমার ইচ্ছাই আমার ইচ্ছা। এর বাইরে কিছুই নেই।

আমার মাকে তোমার কথা বলেছি।
উনি তোমাকে দেখতে চেয়েছেন। আমি অবশ্য একটা সমস্যার কথা বলেছি। বাচ্চা একটা মেয়ে। জানিনা, আসবে কিনা! তারপরও মা তোমাকে দেখতে খুবই আগ্রহী!
রান্না করে বসে থাকবেন আমাদের জন্য।
দুপুরে একসাথে খাবেন বলে।

যদি তুমি না করো, তাহলে অয়ন ভাই হয়েই থাকতে চাই আর কিছু নয়। আর যদি দয়া করে যেতে রাজি হও, তাহলে এখন থেকেই ভাইয়া বাদ এবং আপনি বাদ। এসব শর্তের কোন একটা না মানলেও পারমানেন্টলি ভাই হয়ে যাবো!
অন্য আর কিছু নয়।

তুমি কি যাবে আমার সাথে?

অয়ন

দুপুর বারোটা। পান্থপথে বসুন্ধরা শপিং মলে বাইরের সিঁড়িতে দেখা হলো।
সেই উজ্জ্বল আলো ছড়ানো হাসি নিশার মুখে। একটা কাল রঙের লং ড্রেস পরে আছে।
কাল ড্রেস এ ওকে আরও বেশি সুন্দর লাগছে!
অয়ন শুধু বললো,
: পথে অসুবিধা হয়নি তো?
: নাহ্! কই, কি একটা দেবেন বলেছিলেন!
আমি তো চিন্তায় অস্থির! আগেই বলে দিলে কি হয়! অযথা টেনশন! একটু অনুযোগের সুরে বললো নিশা।
অয়ন একটু নার্ভাস ভাবে প্যান্টের পকেট থেকে একটা খাম বের করে নিশার হাতে দিলো।
বললো,
: এটার ভেতরে একটা চিঠি আছে। এখনই পড়তে হবে তোমাকে!
নিশা সম্মতি সূচক মাথা নেড়ে ধীরে ধীরে খামটা খুলে পড়া শুরু করলো।
সিঁড়ির উপর বসে মাথা নিচু করে পড়ছে নিশা।
এদিকে অয়নের চেহারা টেনশনে নীল হয়ে গেছে।
পড়া শেষ করে অয়নের দিকে তাকালো নিশা।
তার চোখ জলে ভরে গেছে।
অয়নের হাত ধরে উঠে দাঁড়ালো। অস্ফুট কন্ঠে বললো,
: চলো! তোমার বাসায় যাবো!
এখন অয়নের চোখেও জল।
দুজনেই সিঁড়ি বেয়ে নামতে থাকলো।
আবদুল জাববার খান