বস্তুনিষ্ঠ ও সুস্হধারার সৃজনশীল বিনোদন শিল্প মাধ্যম হিসাবে আমাদের টেলিভিশন নাটক/ অনুষ্ঠান বিশ্বব্যাপী বাংলা ভাষাভাষী মানুষের কাছে বহুযুগ ধরে ব্যাপক সমাদৃত ও প্রশংসিত।
আর এই অনুষ্ঠান নির্মাণ শিল্পের সাথে আমরা যারা জড়িত তারা প্রত্যেকেই সামাজিক ন্যুনতম একটা দায়বদ্ধতা হৃদয়ে ধারন করি- যার ফলে টেলিভিশন নাটক/ অনুষ্ঠান সমুহে হাসি, কান্না, আনন্দ, বেদনা, হাস্যরসের মাঝেও প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে সামাজিক শিষ্টাচার, মননশীলতা, শিক্ষনীয় – গঠনমুলক বক্তব্য কমবেশী কিছু একটা থাকে।
টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ শিল্পে আমরা যারা বিনিয়োগ করি তারা শুধুমাত্র মুনাফা লাভের জন্যই এ কাজটি করি না, আমি মনে প্রাণে বিশ্বাস করি আমরা সবাই রুচিশীল, মানবিক মুল্যবোধ, সামাজিক শিষ্টাচার এবং সৃজনশীল মানসিকতা অন্তরে ধারন করে সুস্থধারার বিনোদন দর্শকদের উপহার দেয়ার সংকল্প নিয়ে এই মিডিয়াতে কাজ করি এবং দর্শকরা তা স্বপরিবারে উপভোগ করে। কিন্তু ইদানীং ওয়েব সিরিজের নামে নির্মীত যেসব ভিডিওচিত্র আমরা দেখছি সেসব নিয়ে কিছু বলতেও ঘৃণা ও লজ্জা হয়।
টাকা উপার্জনের অনেক মাধ্যম আছে, আমাদের শতবছরের ঐতিহ্যে লালিত কৃষ্টি কালচারকে কলুষিত করে এ রকম নোংড়া বাণিজ্য কেন করতে হবে ? যারা করছেন তারা নিশ্চয়ই এর পিছনে কোন না কোন যুক্তি দাড় করিয়ে রেখেছেন কারন যে চুরি করে, যে ডাকাতি করে, যে নৈতিকতা বিবর্জিত কাজ করে সেও অবশ্যই তার কাজের স্বপক্ষে একটা যুক্তি দাড় করিয়ে নেয়- এর সার্বজনীন গ্রহনযোগ্যতা থাকুক বা না থাকুক।
ডিজিটাল যুগে visual media তে যে যা খুশি করুক সেটার যৌক্তিকতা – বৈধতা দেখার জন্য দেশের প্রচলিত আইন আছে- সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর আছে।
কিন্তু আমার কথা হলো টেলিভিশন মিডিয়ার পরিচয়ে পরিচিত ও প্রতিষ্ঠিত কোন নাট্যকার, নির্মাতা, শিল্পী, কলাকুশলী, বিনিয়োগকারী যখন এসব বিকৃত রুচির অশ্লীল ও নোংড়া কার্যকলাপে নিজেকে সম্পৃক্ত করে তখন তার দায় এবং প্রভাব মুক্ত আমরা থাকতে পারি না- কালিমা মুক্ত থাকার কোন সুযোগ নেই।
সামাজিক, প্রাকৃতিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বহুবিধ বিপর্যয়, মহামারী, দুর্যোগ পৃথিবীতে আসে এবং একটা পর্যায়ে সবকিছু আবার ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু মানুষের মানবিক মুল্যবোধের যদি অবক্ষয় হয় তা ফিরিয়ে আনা কঠিন।
তাই আমাদের সামাজিক ও মানবিক মুল্যবোধের অন্যতম ধারক বাহক আমাদের শিল্প-সংস্কৃতিকে সুরক্ষিত রাখার জন্য এখন সিরিয়াসলি ভাবতে হবে – তাদেরকে আমরা টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ শিল্পের সাথে সম্পৃক্ত কোন মানুষ ভাববো কি ভাববো না। যদি না ভাবি, যদি আমরা এই অপসংস্কৃতির বিকাশ থেকে নিজেদেরকে দায়মুক্ত রাখতে চাই, যদি আমরা আমাদের এই সৃজনশীল বিনোদন মাধ্যমটিকে অসভ্যতার হিংস্র থাবার আঁচড়ে ক্ষত বিক্ষত হতে দিতে না চাই, তাহলে এখনই আমাদেরকে সঠিক সিদ্ধান্তে আসতে হবে।
অন্যান্য সংগঠন এ বিষয়ে কি ভাবছে সেদিকে না তাকিয়ে আমরা টেলিপ্যাব এর সদস্যবৃন্দ যারা টেলিভিশন অনুষ্ঠান নির্মাণ শিল্পের সবচেয়ে বড় স্টেক হোল্ডার- আমাদেরকেই উদ্যোগ নিতে হবে। আমি আমাদের সংগঠনের প্রেসিডেন্ট, সেক্রেটারী ও নেতৃবৃন্দকে অনুরোধ করবো আমাদের সকল সদস্যদের ব্যক্তিগত ও পারিবারিক মান সম্মান এবং সামাজিক অবস্থান সমুন্নত রাখতে এ বিষয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নিবেন।
মনোয়ার পাঠান, নাট্য প্রযোজক