স্বনামধন্য চিকিৎসক অধ্যাপক ডা. এবিএম আবদুল্লাহ করোনা ভাইরাস নিয়ে সবাইকে সতর্ক থাকতে বলেন এবং তা প্রতিরোধকল্পে যথাযথ ব্যবস্থাপনাও রাখতে পরামর্শ দেন। প্রতিরোধে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি এবং আক্রান্ত রোগীর তাৎক্ষণিক সুচিকিৎসা সুযোগ নিশ্চিত করতে হবে। এ ব্যাপারে কোনো অবহেলা বা ত্রুটি যাতে না হয়, সেদিকে ব্যবস্থাপনা-সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিশেষ যত্নবান হতে হবে।
দেশে ও দেশের বাইরে সুযোগসন্ধানী একটি মহল অন্যান্য বিষয়ের মতো এই করোনা ভাইরাস নিয়েও গুজব ছড়াচ্ছে। তাছাড়া সোশ্যাল মিডিয়ায় নামে-বেনামে যে যার ইচ্ছামতো লিখে, অধিকাংশ মানুষ আবার যাচাই-বাছাই না করেই সেগুলো বিশ্বাস করেন। ফলে বিভ্রান্তি বাড়ে, আতঙ্কের সুযোগ তৈরি হয়, যা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। এ ব্যাপারেও সতর্ক থাকতে হবে।
অযথা আতঙ্কের উদ্রেক না করে প্রতিরোধের ব্যাপারে প্রত্যেককেই সচেতন হতে হবে এবং অন্যকে সচেতন করতে হবে। যেসব দেশে করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রয়েছে, সেই সব দেশ থেকে আগত সবারই ১৪ দিন নিজ নিজ বাসায় কোয়ারেন্টাইনে থাকতে হবে। এ ক্ষেত্রে তারা এয়ারপোর্ট থেকে বাসায় যাওয়ার পথে গাড়িতে মাস্ক পরবেন। সম্ভব হলে নিজস্ব পরিবহন ব্যবহার করবেন এবং পরিবহনের জানালা খোলা রাখবেন, জনসমাগমে যাওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত।
কোয়ারেন্টাইন মানে হলো, তিনি নিজে ঘরের বাইরে যাবেন না, আবার বাড়িতে অন্য কারো সঙ্গে মিশবেন না, এক কথায় নিজে নিজেকেই অন্যদের থেকে পৃথক করে রাখবেন। ঝুঁকিতে থাকা অন্যরা ঘরের বাইরে যাওয়া অত্যাবশ্যক হলে নাক-মুখ ঢাকতে মাস্ক ব্যবহার করবেন। আক্রান্ত ব্যক্তি হাঁচি-কাশি দিলে টিস্যু ব্যবহার করবেন এবং সেই টিস্যু পুড়িয়ে ফেলতে হবে, যাতে সেখান থেকে ভাইরাস না ছড়ায়। কেউ যদি রুমাল ব্যবহার করেন, তাহলে সেই রুমাল ও হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে নেবেন। ভালোভাবে হাত না ধুলে সেখান থেকে ভাইরাস ছড়াবে। তাই সব সময় সাবান দিয়ে অন্তত ২০ সেকেন্ড ধরে দুই হাত ধুয়ে নেবেন অথবা হ্যান্ড স্যানিটাইজার ব্যবহার করা যায়। অপরিষ্কার হাতে নাক, মুখ ও চোখ স্পর্শ করবেন না। বাইরে থেকে ঘরে ঢুকে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে তারপর অন্য কিছু ধরবেন। কারণ এই হাত দিয়ে যা কিছু ধরা হবে সেখানেই ভাইরাস থেকে যেতে পারে। টেবিল, চেয়ার, দরজার হাতল, কিবোর্ডে ভাইরাস থেকে যেতে পারে। সেখান থেকে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই এগুলো পরিষ্কার রাখতে হবে। খাবার ভালোভাবে সিদ্ধ করে খাওয়া দরকার। ডিম পোচ করে না খেয়ে ভালোভাবে ভাজি করে খাওয়া উচিত। ফলমূল ভালো করে ধুয়ে খেতে হবে, কোনো সবজি দিয়ে সালাদ করার আগে সেগুলো ভালোভাবে ধুয়ে নিতে হবে। অনেকের গৃহপালিত পশু-পাখি থাকে। কোনো পশু-পাখি অসুস্থ হয়ে পড়লে বা রোগাক্রান্ত মনে হলে সেটিকে সরিয়ে নিতে হবে। সেই প্রাণীকে কেউ স্পর্শ করলে ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।
এখন ঋতুর পরিবর্তন হচ্ছে। এমন সময়ে অনেকের জ্বর-হাঁচি-কাশি হয়। অনেকের জ্বর-জ্বর ভাব লাগে। সাধারণ জ্বর-হাঁচি-কাশি আমাদের দেশে স্বাভাবিক। সাধারণ ঠান্ডা লাগলে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার ভয় নেই। এর জন্য পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন নেই। যেহেতু এখন পর্যন্ত আমাদের দেশে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত কাউকে শনাক্ত করা হয়নি, তাই আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তবে যারা দেশের বাইরে থেকে আসছেন, তাদের এমন শারীরিক অসুস্থতা (জ্বর, কাশি, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি) দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং করোনা পরীক্ষার প্রয়োজন পড়বে।
ভয়ের পরিবর্তে মানুষ যদি অধিকতর সচেতন থাকে, তাহলে করোনা ভাইরাস প্রতিরোধ করা কঠিন কিছু নয়। যদি এটি একজন থেকে আরেকজনের মধ্যে সংক্রমণের সুযোগ না পায়, তাহলে তা ছড়াবে না। আবার দ্রুত সময়ের মধ্যে শনাক্ত করা গেলে ব্যবস্থাপনার কাজ অনেক সহজ হয়ে যায়। নতুন এই করোনা ভাইরাসের জন্য এখনো কোনো টিকা বা চিকিত্সা উদ্ভাবিত না হলেও আনুষঙ্গিক অন্যান্য চিকিত্সাব্যবস্থাপনার মাধ্যমে মৃত্যু ঠেকানো সম্ভব।
আলমগীর কবির