যে দেশে দশ মাস বয়সী কন্যা সন্তান ধর্ষিত হয়,যে দেশে নারী বঞ্চিত হয় তার পিতার সম্পত্তি থেকে, যে দেশে কোন স্থানে নারীর পোশাকের স্বাধীনতা চলাফেরার স্বাধীনতা নেই, ন্যূনতম নিরাপত্তা নাই।যেখানে আশেপাশের মানুষেরা নারীকে তার ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে লজ্জা দিয়ে পৈশাচিক আনন্দ পায়, কর্ম ক্ষেত্রে প্রতিনিয়ত হাজারো অমানুষের অবিচার সহ্য করে দিনের পর দিন অতিবাহিত করতে হয় সে দেশে নারী দিবস বিলাসিতা ছাড়া আর কিছুই নয়। যেখানে পুরুষ নারীকে তার সমকক্ষ ভাবার কথা চিন্তাও করতে পারেনা সমমর্যাদা প্রদান তো দূরে থাক, যেখানে যোগ্য নারীরা সুযোগ পায়না অথচ অসৎ অযোগ্য নারীদের প্রমোটকারী পুরুষের সংখ্যা দিন দিন বেড়ে যায়। নারীর সাথে নানাভাবে অবিচার করে কারো শাস্তিও হয় না আইনের চোখে, নারীর সাথে যা হয় সেটাই নাকি তার প্রাপ্য এমনটাই জন্মের পর থেকে সমাজ আর পরিবার তাকে বুঝিয়ে দেয়। নারীকে দমিয়ে রাখার সময় সবাই ধর্মীয় বিশেষজ্ঞ বনে যান, নারীর ব্যক্তি স্বাধীনতা নাকি থাকে স্বামীর হাতে নিজের পিতার পরিচয় চাপা দিয়ে আর্থিক ও সামাজিক ভাবে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি কে বিয়ে করে অমুক ভাবি তমুক ভাবি নামে নিজেকে পরিচিত করে আত্মতুষ্টিতে ভোগেন অনেক নারী তারা আবার শিক্ষিত ও। প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিকে বিয়ে করার জন্য ব্যক্তিত্বহীনের মত হুমড়ি খেয়ে পড়েন অনেক নারী। নারী বড় আত্মঘাতী ,নির্বোধ ও বটে। যোগ্য নারীর পা ধরে নিচে টানতে থাকে আরো ১০০ অযোগ্য নারী। পারস্পরিক সহযোগিতা ভালোবাসার সহমর্মিতা অন্তত বাঙালি নারী সমাজের মধ্যে নাই।নিজে নারী হয়ে অন্য নারীর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে কুৎসা রটনা খুবই স্বাভাবিক বিষয় ।এই বাঙালি সমাজে যে কোন বিপদে পড়লে দুই পুরুষ এক হয়ে যায় কিন্তু দুই নারী এক হতে পারেনা। বেশিরভাগ নারী তার ভালোবাসা উপচে দেয় ভুল পুরুষের প্রতি আবার নিজের ব্যক্তি স্বার্থ হাসিলের জন্য ভালো মনের অধিকারী পুরুষ গুলোকে ঠকিয়ে যায়, কি আজব শেষ পর্যন্ত কিছুই পায় না। পিতা কিংবা স্বামী বা অন্য কোন উত্তরাধিকার সূত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণ নারীরা আবার এই নারী দিবসের বিরোধিতা করেন কারণ মধ্যবিত্ত পরিবার থেকে লড়াই করতে করতে সাফল্যের শীর্ষে ওঠা নারীদের এই যে নির্মম যাত্রা সে যাত্রার ইতিহাস সে যাত্রার স্বাদ তারা পান নাই। নারী বড়ই অবুঝ । সমাজে প্রতিষ্ঠিত নারীরা কিন্তু পিছিয়ে পড়া নারীদের জন্য ক্রমাগত কাজ করছে সেটাও এই সমাজে অকল্পনীয় শুধু নিজের ঢোল পেটাতে ব্যস্ত, পুরুষতন্ত্রের সফল ধারক-বাহক তারা।সর্বোচ্চ শিক্ষিত হয়েও হিংসা জিনিসটা এখনো উচ্চ শিক্ষিত নারীদের মধ্যে রয়ে গেছে, মন মানসিকতার প্রশস্ততা এখনো আশা করা যায় না। নারী দিবসের আয়োজন করে যে অফিস গুলো ,অ্যাওয়ার্ড দেয় যে প্রতিষ্ঠানগুলো সেখানে যে সারা বছর কত নারী নানা রকম হ্যারাসমেন্টের শিকার হয় তার খবর কজন রাখে? এই দেশে ১০০ মিটার রাস্তা অতিক্রম করতে গেলে একটা মেয়েকে আশপাশের ১০০ পুরুষের কাছ থেকে কত রকম বাজে ইঙ্গিত সহ্য করে সে একশ মিটার অতিক্রম করতে হয় সে খবরই বা কয়জন রাখে? কেউ কেউ নিজের যোগ্যতায় নিজের অক্লান্ত পরিশ্রমে উপরে উঠতে চাইলেই পরিবার বা চারপাশ থেকে শুনতে হয় দরকার নেই বিয়ে করো কিংবা হুম জানি তো কিভাবে উপরে উঠছে.. ব্যক্তিত্বশালী প্রজ্ঞাবান জ্ঞানী যোগ্য ও মাথা উঁচু করে বেঁচে থাকা মেয়েমানুষদের প্রতি এই সমাজের অনেক ভয় তাই পথে পথে আটকানোর নানা রকম চেষ্টা চলতেই থাকে এবং এটা চলতে থাকবেই.. যাইহোক ভারতীয় উপমহাদেশে বসে নারী দিবস নিয়ে কথা বলা অন্তত আমার শোভা পায় না বিশেষ করে বাঙালি সমাজের এই নারী দিবস অন্তত আমার জন্য না। শুভ হোক প্রহসন আর হাস্যরসাত্মকের এই নারী দিবস।
রেহনুমা মোস্তফা
এমফিল গবেষক
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়