‘সিনেমায় এখন নেতৃত্ব নেই। আমি তো আবার সিনেমা বানানোর জন্য প্রস্তুত। আমার কাছে প্ল্যান নিয়ে আসতে হবে। বছর দুয়েক আগে একবার বাংলাদেশে এসেছিলাম তখনও রেডি ছিলাম, এখনও সিনেমা বানানোর জন্য রেডি আছি।’ কথাগুলো একসময়কার জাঁদরেল প্রযোজক নেতা ওয়াহিদ সাদিকের, যিনি কিংবদন্তী অভিনেত্রী শাবানার স্বামী।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান এসএস প্রোডাকশন’র কর্ণধার তিনি। এহতেশাম, এ জে মিন্টু, আমজাদ হোসেন, সুভাষ দত্ত, আজিজুর রহমান, মতিন রহমানদের মতো কিংবদন্তী নির্মাতারা এ প্রোডাকশনের ছবি বানিয়ে নিজেদের সমৃদ্ধ করেছেন। প্রায় ২০ বছর যাবত মার্কিন মুলুকের নিউ জার্সিতে শাবানা ও সন্তানদের নিয়ে ওয়াহিদ সাদিক স্থায়ী হয়েছেন। দু’এক বছর পরপর বাংলাদেশে বেড়াতে আসেন। এবারও এসেছেন গত ডিসেম্বরের শেষের দিকে। সঙ্গে নিয়ে এসেছেন শাবানাকেও।
আবারও চলচ্চিত্র প্রযোজনা নিয়ে এই প্রযোজক বলেন, মেধাবী, শিক্ষিত এবং ভালো কাজ জানা পরিচালক আমার কাছে এসে ছবি বানানোর কথা বলে না, তাই আমারও ছবি বানানো হয় না। সিনেমা বানিয়ে যে আমার অনেক লাভ করতে হবে এমনটা নয়, যেটা বিনিয়োগ করবো সেটা উঠে আসলেই হবে।
গত সপ্তাহে এক সন্ধ্যায় তার বারিধারার বাসায় সিনেমার একাল-সেকাল নিয়ে ওয়াহিদ সাদিক চ্যানেল আই অনলাইনকে এসব কথাগুলো বলেন।
তিনি বলেন, বলিউডে টাক মাথা নিয়ে ছবি হচ্ছে, এসিড দগ্ধ নারীকে নিয়ে ছবি হচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশে এখন যেসব সিনেমা হচ্ছে সেখানে খুব বেশি বৈচিত্র নেই। কামাল আহমেদকে দিয়ে আগে ছবি বানিয়েছিলাম ‘গরীবের বউ’, আমজাদ হোসেনের ‘ভাত দে’ এগুলোতে কতো সুন্দর গল্প ছিল। আমার এখনও মনে আছে ‘গরীবের বউ’ ছবির জন্য শ্রেষ্ঠ প্রযোজক হয়েছিলাম। এরপর ‘দুই পয়সার আলতা’, ‘সখিনার যুদ্ধ’, ‘রাঙা ভাবি’, ‘সবুজ সাথী’, ‘নাজমা’র মতো হিট ছবি বানিয়েছি।
সেই সময়ের সিনেমার বাজারের কথা উদাহরণ টেনে ওয়াহিদ সাদিক বলেন, তৎকালীন এসএস প্রডাকশনের খুব নামডাক ছিল। এ প্রতিষ্ঠান থেকে পঞ্চাশটির মতো ছবি বানিয়েছি। কোনো খারাপ ছবি বানাইনি। এ প্রোডাকশনের ছবি দিয়ে সুভাস দত্ত, আমজাদ হোসেন, মতিন রহমান পরিচালক হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছেন। এতো পরিমাণে ব্যবসা করেছি যে ওই আমলে সুভাস দত্তকে গোপীবাগে ফ্ল্যাট কিনে দিয়েছি, ১০ লাখ টাকা পারিশ্রমিক দিয়েছি। কেনই বা দেব না? নির্মাতা এতো বড় মাপের পরিচালক ছিল যে, নায়ক-নায়িকার মতো পরিচালকের নামেও ছবি চলতো।
ওয়াহিদ সাদিক বলেন, যৌথ প্রযোজনায় প্রথম ছবি বানিয়েছিলাম ‘স্বামী কেন আসামী’। বাংলাদেশ থেকে জসিম-শাবানা। ভারত থেকে চাংকি পাণ্ডে ও ঋতুপর্ণা ছিল। তখন আমি প্রযোজক সমিতির প্রেসিডেন্ট ছিলাম। পশ্চিমবঙ্গের অশোক ধানুকাকে নিয়ে (প্রযোজক, এসকে ফিল্মস) যৌথভাবে ছবিটি বানিয়েছিলাম। তখন সে ক্যাসেটের ব্যবসা করতো, ছবি বানাতো না। ওই সময়ে অশোক ধানুকা মাত্র ১৯ লাখ টাকা স্বামী কেন আসামী’তে লগ্নী করেছিল। ছবি বানানোর পর শুধু কলকাতায় সে ছবি ব্যবসা করেছিল তিনকোটি টাকা। আর বাংলাদেশে থেকেও তিন কোটির বেশি তুলেছিলাম আমি। ওই সাফল্যে উৎসাহিত হয়ে বানিয়েছিলাম ‘মেয়েরাও মানুষ’। শারদ কাপুর-ঋতুপর্ণা, মান্না-মৌসুমীকে নিয়ে আমার প্রোডাকশনের সর্বশেষ ছবি ছবি ‘স্বামী ছিনতাই’ (১৯৯৮)। এ ছবিটি খুব বেশি ব্যবসা হলেও লাভের পুরো টাকা পাইনি। কারণ, চলে গিয়েছিলাম আমেরিকায়।
ওয়াহিদ সাদিক আরও বলেন, সিনেমা বানানোর জন্য রেডি থাকলেও আরেকটা বিষয় আমাকে ভাবায়। সিনেমা বানিয়ে চালাবো কোথায়? শুনেছি সিনেমা নাকি একশ’র নিচে নেমে এসেছে। যখন আমি ছবি বানাতাম সিনেমা হল ছিল ১৬০০। এখন দেশে মানুষ ১৭ কোটি অথচ সেই তুলনায় সিনেমা নেই। আমার মনে হয়, ১৭ কোটি মানুষের জন্য কমপক্ষে ১৭০০ সিনেমা হল দরকার। সিনেমা বাড়লে সন্ত্রাসবাদ, জঙ্গিবাদ কমে আসবে। যোগ্য একজন মানুষকে দেখি না, যিনি প্রধানমন্ত্রীর কাছে গিয়ে সমস্যাগুলো জানাবেন। ঠিকভাবে নেতৃত্ব দিয়ে জানাতে পারলে প্রধানমন্ত্রী সব সমস্যার সমাধান করে দেবেন।
বছর দুয়েক আগে ওয়াহিদ সাদিক যখন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলেন, সিনেমার প্রসঙ্গে কথা বলার সময় প্রধানমন্ত্রী তাকে বলেছিলেন সমস্যা সমাধানের জন্য আছেন। কিন্তু আমার কাছে সিনেমার সমস্যাগুলো নিয়ে আসে না! যোগ করে বলেন ওয়াহিদ সাদিক।
তিনি বলেন, আমাদের প্রধানমন্ত্রী পুরোপুরি সংস্কৃতি বান্ধব। একজন যোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে শুধু তার পর্যন্ত পৌঁছুতে হবে। ওয়াহিদ সাদিক বলেন, প্রযোজক পরিচয় গর্ববোধ করতাম। প্যাশনেটলি ভালোবাসতাম। আমার ভিজিটিং কার্ডে অন্য ব্যবসার পরিচয় ছিল না, শুধু ‘ফিল্ম প্রডিউসার’ ছিল। আগের মতো ভালো ভালো ছবি হোক। আমার খুব ইচ্ছে আবার ছবি বানাই।
রোমান রায়