ঢাকার চলচ্চিত্রের ওয়ান অ্যান্ড অনলি সুপার ষ্টার শাকিব খানের সাম্প্রতিক সফল তারকা পর্দা জুটি বুবলী। মাত্র আড়াই বছরের চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে শাকিব খানের পর্দা সঙ্গী হয়ে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার চলচ্চিত্রের আলোচিত তারকায় পরিণত হয়েছেন তিনি। শাকিব-বুবলী জুটি অভিনীত মুক্তি পাওয়া চারটি ছবিরই অবিশ্বাস্য সাফল্যের কল্যাণে তার এই লাইম লাইটে আসা। তাইতো অপু-মাহি যুগের পর বুবলীই এখন ঢালিউডের নাম্বার ওয়ান তারকা নায়িকা। চলতি সময়ের সফল তারকা বুবলী তার আগে এবং পরে আসা নায়িকাদের মধ্যে এখন স্পষ্ট ব্যবধানে এগিয়ে আছেন। আসন্ন ঈদেও তার দু’টি ছবি মুক্তি পাওয়ার কথা রয়েছে। ছবি দু’টি হলো ‘চিটাগাইঙ্গা পোয়া ও নোয়াখাইল্যা মাইয়া’ এবং ‘সুপার হিরো’। তবে উত্তম আকাশ পরিচালিত চিটাগাইঙ্গা পোয়া ও নোয়াখাইল্যা মাইয়া ছবির মুক্তি এখন পর্যন্ত নিশ্চিত। আর ঈদের আগেই যদি ‘সুপার হিরো’ ছবিটি সেন্সর সনদ পায়, তবে শেষ মুহুর্তে আশিকুর রহমান পরিচালিত এই ছবিটিও মুক্তি পেতে পারে। দু’টি ছবিতেই বুবলীর পর্দা জুটি শাকিব খান। চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারে মুক্তি পাওয়া কিংবা মুক্তি প্রতীক্ষিত ছবির কল্যাণে বুবলী যেমন আলোচিত, তেমনি তিব্বত বিউটি সোপ এর বিজ্ঞাপনচিত্রে অসাধারণ পর্দা উপস্থিতি দেখিয়ে মডেল হিসেবেও এই সুন্দরী-তরুণী তারকা এখন দারুণভাবে আলোচিত। সব মিলিয়ে তাই ঢাকার চলচ্চিত্রে এখন চলছে বুবলী বন্দনা। বিনোদন বিচিত্রার এবারের ঈদ সংখ্যার প্রচ্ছদ কন্যা তাই বুবলী। তাকে নিয়ে লিখেছেন অর্ণব আদিত্য।
শুরুতেই বিজ্ঞাপনচিত্র প্রসঙ্গ। তিব্বত বিউটি সোপ এর বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেল হওয়া প্রসঙ্গে গ্ল্যামার গার্ল বুবলী বিনোদন বিচিত্রাকে বলেন, ‘আমার শোবিজ ক্যারিয়ারে এবারই প্রথম মডেল হওয়া। ক্যারিয়ারের শুরু থেকে অনেক অফারই পেয়েছি। কিন্তু বিজ্ঞাপনচিত্রের স্ক্রীপ্ট প্রোডাকট মেকার এসব মিলিয়ে ব্যাটে বলে না হওয়ার কারণে এতোদিন মডেলিং করা হয়নি। তিব্বত বিউটি সোপ এর বিজ্ঞাপনচিত্রটির স্ক্রীপ্ট, প্রোডাকট ভ্যালু, মেকার, লোকেশন আর আমার চরিত্র- সব কিছু পছন্দ হওয়ায় প্রথম বিজ্ঞাপনচিত্র হিসেবে এটিকে বেছে নেওয়া। আমার মনে হয়েছিল এতে মডেল হলে আমার পর্দা ইমেজ আরো স্পষ্ট হবে।’ বিজ্ঞাপনচিত্রটি প্রচার শুরু হওয়ার পর দর্শক প্রতিক্রিয়া কেমন পেয়েছেন? কিম্বা আপনার নিজের অনুভূতি কেমন? একগাল হেসে বুবলী বলেন, “দারুণ প্রতিক্রিয়া। আমার দর্শক-ভক্তরা তো খুবই প্রশংসা করেছেন। শোবিজের গুণীজনরাও আমাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন। সবার কাছ থেকেই আমি ইতিবাচক প্রতিক্রিয়া পেয়েছি। আর আমার অনুভূতি? এক কথায়- অসাধারণ। দারুণ এক ভালোলাগার অনুভূতি। নিজের ডেব্যু বিজ্ঞাপনচিত্র হিসেবে এতোদিন আমি মনে মনে এমন একটি বিজ্ঞাপনচিত্রের জন্যে অপেক্ষা করছিলাম। সব মিলিয়ে দুর্দান্ত এক ভালো লাগার অনুভূতি আমার মধ্যে কাজ করছে।” পরবর্তী বিজ্ঞাপনটিত্র? বুবলী বলেন, “পরবর্তী বিজ্ঞাপনচিত্র কোনটি হবে- তা এখনো ঠিক হয়নি। বেশ কিছু অফার আছে। কিন্তু কোনটাই এখন পর্যন্ত ফাইনাল করিনি। ঈদের পর হয়তো সুখবর দিতে পারবো।” মেধাবী ও সুন্দরী তারকা বুবলীর কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল- ভালো মানের বিজ্ঞাপনচিত্র কোন শোবিজ তারকার তারকাখ্যাতিকে আর শক্ত অবস্থানে দাঁড় করায় কিনা? তিনি বলেন, “অবশ্যই। আমি তো তাই-ই মনে করি। আমার ক্ষেত্রেও তাই ঘটেছে। আমি মনে করি ভালো মানের বিজ্ঞাপনচিত্রে মডেলিংয়ের সুবাদে খুব দ্রুত দর্শক-ভক্তদের কাছে যাওয়া যায়। তাদের প্রতিক্রিয়াটাও খুব তাড়াতাড়িই আসে।”
ঢাকার চলচ্চিত্রের নায়িকা হিসেবে তারকাভিযানে নামার আগে সুন্দরী-স্মার্ট গার্ল বুবলী ছিলেন স্যাটেলাইট টেলিভিশন বাংলাভিশনের নিউজ প্রেজেন্টার। নায়িকা হওয়ার আগেও তিনি তারকা ছিলেন- একজন জনপ্রিয় নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে। তার বোন দেশের অন্যতম জনপ্রিয় গায়িকা নাজনীন মিমি। তারকা বড় বোনের তারকা বোন এখন বুবলী। তিনি জানান, পরিবারের কেউ-ই চাননি- তাদের প্রিয় বুবলী চলচ্চিত্রের নায়িকা হোক। সবাই চেয়েছেন পড়াশোনার পাশাপাশি নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবেই তিনি কাজ করুন। এরপর প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা গ্রহণ শেষে কোন জব কিংবা বিজনেস করুক। বুবলী বর্তমানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এম.বি.এ করছেন। এর আগে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বি.বি.এ সম্পন্ন করেছেন। বুবলী বলেন, “নিউজ প্রেজেন্টার থেকে আমিই প্রথম সরাসরি চলচ্চিত্রের নায়িকা হয়েছি। আমি নিউজ প্রেজেন্টার হিসেবে অলরেডি স্টাবলিশ ছিলাম। তাই পরিবারের সবার অমত সত্ত্বেও আমি একটা রিস্ক নিয়েছিলাম চলচ্চিত্রের নায়িকা হয়ে।” তো আপনি কী মনে করেন সেই রিস্কই আপনাকে একজন সাকসেস ফুল ফিল্মস্টার হতে সাহায্য করেছে? বুবলী বলেন, “তা বলা যায়। আমি যদি ওই সময় রিস্ক না নিতাম, তাহলে হয়তো আমি ফিল্মস্টার বুবলী হতে পারতাম না। এক্ষেত্রে আমি আমার নির্মাতা, কো-আর্টিস্ট, আমার দর্শক-ভক্তদের ধন্যবাদ দিতে চাই। আমার রিস্ক সাকসেস-এ পরিণত হওয়ার ক্ষেত্রে এদের অবদান সবার আগে।” আপনার পরিবারের লোকজন কী এখন তাদের নেতিবাচক ধারণা থেকে সরে এসেছেন? এমন প্রশ্নের উত্তরে বুবলী বলেন, “এখন তারা এনজয় করেন তাদের বুবলী তারকা। হয়তো আগের নেতিবাচক মনোভাব এখন আর তাদের নেই। কিন্তু তাদের মধ্যে কিছুটা আফসোস রয়েই গেছে। যাই হোক, এটি এখন আর কোন ব্যাপার না। যেহেতু আমি এখন চলচ্চিত্রের নায়িকা, তাই নিজের অভিনয় প্রতিভা দিয়ে চলচ্চিত্রের সেবা করাটাই এখন আমার মূল লক্ষ্য।”
ঢাকার চলচ্চিত্রে বুবলীই একমাত্র নায়িকা, যার ক্যারিয়ারের প্রথম দু’টি ছবিই এক ঈদে মুক্তি পায়। পরের বছরের ঈদেও একসাথে দুটি ছবি মুক্তি পায়। প্রথম বছর মুক্তি পায়, “বসগিরি” ও “শ্যুটার”। দ্বিতীয় বছরের ঈদে মুক্তি পায় “রংবাজ” ও “অহংকার”। এটি একজন আগুয়ান তারকার জন্যে রেকর্ডও বটে। সবগুলো ছবিরই নায়ক শাকিব খান। আর ছবিগুলোও ছিল ব্যবসা সফল। তাই আগুয়ান তারকা থেকে বুবলী এখন ঢাকার চলচ্চিত্রের প্রতিষ্ঠিত তারকা। বর্তমানে তিনি অভিনয় করছেন “ক্যাপ্টেন খান”, “আমার স্বপ্ন আমার দেশ”, “প্রিয়তমা” নামের আরও তিনটি ছবিতে। এগুলোর নায়কও শাকিব খান। অর্থাৎ চলচ্চিত্র ক্যারিয়ারের মাত্র আড়াই বছরে বুবলী অভিনীত ছবির সংখ্যা নয়। আর নয় ছবিতেই তার নায়ক সুপারস্টার শাকিব খান। এবারের ঈদে মুক্তি প্রতীক্ষিত দুই ছবি সম্পর্কে জানতে চাইলে বুবলী বলেন, উত্তম দা দারুণ কমেডি গল্প নিয়ে নির্মাণ করেছেন চিটাগাইঙ্গা পোয়া ও নোয়াখাইল্যা মাইয়া ছবিটি। এটি তারকাবহুল জমজমাট একটি ছবি। আর সুপার হিরো হলো একটি সুপার অ্যাকশন মুভি। দু’টি ছবি সম্পূর্ণ দুই ঘরানার। আমার বিশ্বাস- দু’টি ছবিই দর্শকের কাছে বিপুলভাবে সমাদৃত হবে।” বুবলীর কাছে সর্বশেষ প্রশ্ন ছিল-কো-আটিস্ট হিসেবে সুপারস্টার শাকিব খান আপনার জন্যে কতটা হেল্পফুল? বুবলী বলেন, “আমি যখন একটি অফট্র্যাক প্রফেশন থেকে চলচ্চিত্রে আসি, তখন সুপারস্টার শাকিব খানের সঙ্গে কাজ করাটা একজন নতুন শিল্পী হিসেবে আমার জন্যে চ্যালেঞ্জিং ছিল। কেননা ছবির সাফল্যের ক্রেডিট চলে যায় সুপারস্টারের দখলে। কিন্তু ছবি ফেইল করলে সেই দায়ভার চাপে নতুন শিল্পীর কাঁধে। কিন্তু আমাদের ছবিগুলো টানা ব্যবসা সফল হওয়ার কারণে আমি সেই চ্যালেঞ্জ পার করতে সক্ষম হয়েছি। তবে হ্যা, একজন সুপারস্টার একা আর্টিস্ট একজন নতুন তারকার জন্যে সাপোর্টিং ভূমিকা রাখে।”