যখন ক্ষমতায় এসেছিলেন ‘রিপাবলিক অব সিঙ্গাপুর’ এর, তখন জনগণের মাথাপিছু বাৎসরিক আয় ছিলো মাত্র ৫০০ মার্কিন ডলার। সেখান থেকে লি কুয়ান ইউ এর প্রধানমন্ত্রীত্বের শেষ বছর ১৯৯০-এ তা দাঁড়ায় সাড়ে ১৪ হাজার মার্কিন ডলারে, প্রায় ২,৮০০% উন্নতি! বর্তমানে সিঙ্গাপুরের মাথাপিছু আয় প্রায় ৫৩ হাজার মার্কিন ডলার (প্রায় ৪৫ লক্ষ বাংলাদেশি টাকা)। বিশ্বে সম্ভবত সিঙ্গাপুরই একমাত্র দেশ, যার একটি গোটা প্রজন্ম নিজ দেশকে তৃতীয় বিশ্ব থেকে প্রথম বিশ্বে উন্নীত হতে দেখেছে চর্মচক্ষে। আজকের লেখাটি দেশ বদলে দেওয়া সেই নেতাকে নিয়েই।
চিনা বংশোদ্ভূত বাবা লি চিন কুন ও মা চুয়া জিম নিওর ঘর আলো করে ১৯২৩ সালের ১৬ সেপ্টেম্বর জন্ম নেন লি। তেমন আহামরি ছিলো না অর্থনৈতিক অবস্থা। বাবা-মায়ের সূত্রে ‘মঙ্গলয়েড-ইংরেজ’ হিসেবেই একরকম বেড়ে ওঠেন লি, ইংরেজিই ছিলো তার প্রথম ভাষা। পড়াশোনায় ছিলেন দারুণ। লন্ডন স্কুল অব ইকোনমিক্সে অর্থনীতিতে স্নাতক করবার পর ক্যাম্ব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনেও প্রথম শ্রেণীতে স্নাতক পাস করেন তিনি, হলেন ব্যারিস্টার।
দেশে এসে কয়েক বছর আইন-ব্যবসা করে ১৯৫৪ সালে খুললেন রাজনৈতিক দল পিপলস অ্যাকশন পার্টি। ১৯৫৭ সালে মালয়েশিয়ার সাথে ফেডারেশন গঠন করে ব্রিটিশ ঔপনিবেশিক শাসন থেকে স্বাধীনতা পায় সিঙ্গাপুর। তার ঠিক দুই বছর বাদে নির্বাচনে জিতে সিঙ্গাপুরের প্রধানমন্ত্রীও বনে যান লি। আদর্শিক কারণে ১৯৬৫ সালে মালয়েশিয়ার সাথে দুঃখজনক বিচ্ছেদের পর লি হাতে পেলেন ভংগুর এক স্বাধীন-সার্বভৌম সিঙ্গাপুর। সেই থেকে শুরু। শক্ত হাতে প্রধানমন্ত্রী হয়ে দেশ বয়ে চললেন ১৯৯০ অবধি।
দেশটি একেবারেই ছোট, মাত্র ৭১২ বর্গ কিলোমিটার। নেই প্রাকৃতিক সম্পদও। কিন্তু লির চোখে উচ্চাকাংক্ষার কমতি ছিলো না। শুরুতেই তাই হাত দিলেন পরিকল্পিত নগরায়ন আর উন্নত অবকাঠামো বিনির্মাণে। ‘হাউজিং এন্ড ডেভেলপমেন্ট বোর্ড’ গঠন করে লি কুয়ান ইউ সর্বপ্রথম সিঙ্গাপুরবাসী প্রত্যেকের জন্য সরকারি আবাসন নিশ্চিত করেন। তার ধারণা ছিলো, এ শহরে যখন কেউ একটি বাড়ির মালিক হবে, শহরটির ব্যাপারে দায়িত্ব ও মমত্ববোধ তার আরো বেশি করে সৃষ্টি হবে, যা এগিয়ে নেবে সিঙ্গাপুরকে। দেশ গড়ার কাজে শুরুতেই যে জিনিসটি দরকার তা হলো জাতিগত ঐক্য। কিন্তু সিঙ্গাপুর ছিলো নানা ধর্ম-বর্ণ-জাতির দেশ। সংখ্যাগরিষ্ঠ চীনা বংশোদ্ভূতের সাথে বৃহৎ সংখ্যক মালয় ও ভারতীয়। এদের মাঝে দাঙ্গা-ফ্যাসাদ লেগেই থাকতো। ক্ষমতা নেওয়ার কয়েক বছরের মাথায় এ সমস্যার সমাধান করে ফেললেন লি। সরকারি আবাসনের ক্ষেত্রে কোটা পদ্ধতি আরোপ করে সম্প্রদায়সমূহের মাঝে বৈষম্য কমালেন তিনি। সেই সাথে যেকোনো রকম অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিকারী উসকানির বিরুদ্ধে রাখলেন কঠোর আইন ও কঠোরতর প্রয়োগ।
আলমগীর কবির