রাষ্ট্রপতির ৫৫তম বিয়ে বার্ষিকী আজ

প্রতিটি পুরুষের সাফল্যের পেছনে অধ্যবসায়, কর্মনিষ্ঠা ও একাগ্রতা যেমন থাকতে হয়, তেমনি আড়ালে থাকতে হয় একজন প্রেরণাময়ী নারী। কাজী নজরুল ইসলাম যেমনটি বলেছেন, ‘কোনকালে একা হয়নি তো জয়ী পুরুষের তরবারি/ সাহস দিয়েছে প্রেরণা দিয়েছে বিজয়ালক্ষ্মী নারী’।
কিশোরগঞ্জ জেলার হাওরবেষ্টিত উপজেলা মিঠামইনের প্রত্যন্ত গ্রাম কামালপুর থেকে উঠে আসা একজন আবদুল হামিদের সাফল্যের ক্ষেত্রেও আড়াল থেকে তাকে সুন্দরের অভিযাত্রায় এগিয়ে নিয়েছেন তেমনি একজন অসম্ভব মমতাময়ী প্রেরণাদাত্রী নারী, যার নাম বেগম রাশিদা হামিদ।
আজকের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের ৫৫ বছরের দাম্পত্য জীবনের সবচেয়ে কাছের মানুষ রাশিদা খানমের প্রেরণা ও সহযোগিতাই এই জননেতাকে রাষ্ট্রের শীর্ষ পর্যায়ে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বড় ভূমিকা রেখেছে বলে স্বয়ং আবদুল হামিদও অকপটে স্বীকার করেন।
হাওরের প্রবেশদ্বার করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ গ্রামের এক সম্ভ্রান্ত পরিবারের মেয়ে রাশিদা খানম। পরিবারের তীব্র বাধা পেরিয়ে ১৯৬৪ সালে ওই হাওর-তরুণের মন কেড়ে নেন রাশিদা খানম। আকাশ ছোঁয়ার স্বপ্নে শক্তি আর সাহস জোগাতে নেপথ্য থেকে অনুপ্রেরণা দিতে থাকেন এই মহিয়সী নারী।
সেই থেকে গল্পের শুরু। গ্রামের একজন সাধারণ ঘরের অতি সাধারণ তরুণী হয়েও নিজের শ্রম-মেধা আর মননের মিথস্ক্রিয়ায় একজন ভালবাসার মানুষকে অভীষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছে দিতে অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন রাশিদা খানম। রাজনীতির মাঠে তদানীন্তন স্বৈর-শাসক আইয়ূব খানের বিরুদ্ধে ছাত্র আন্দোলনকে বেগবান করতে গিয়ে যে মানুষটি সেই তরুণ বয়সেই ঘর ছেড়ে বহির্মুখী বোহেমিয়ান জীবন বেছে নিয়েছিলেন, ছন্নছাড়া সেই মানুষটিকে ভালবেসে তার মঙ্গলের জন্য যিনি দিন-রাত শ্রম, মেধা আর মননকে বিনিয়োগ করেছেন, তিনিই এ দেশের ইতিহাসের দ্বিতীয় মেয়াদের প্রথম রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদের প্রাণপ্রিয় সহধর্মিনী বেগম রাশিদা হামিদ।
এই সফল দম্পতির আজ (৪ অক্টোবর) ৫৫তম বিয়ে বার্ষিকী। জীবনের দীর্ঘ ৫৫টি বছর সুখে-দুখে, রাজনৈতিক দুঃসময় ও দুর্বিপাকে একসাথে কাটিয়ে এসেছেন জীবনের অধিকাংশ সময়। এরমধ্যে তারা হয়েছেন তিনপুত্র ও এক কন্যার গর্বিত জনক-জননী। মাঠের রাজনীতি করতে গিয়ে আজকের রাষ্ট্রপতি কখনোই ঘর-সংসার কিংবা স্ত্রী-পুত্রের খবর রাখতে পারেননি অথবা একান্ত প্রয়োজনেও পরিবারের সদস্যদের সময় দিতে পারেননি। তিনি সব-সময় থেকেছেন গণমানুষের সাথে। মানুষই যেন তার কাছে সব, মানুষের ঘরই যেন তার ঘর, তার সংসার।
জনমানুষের সাথে মিশতে গিয়ে আবদুল হামিদ ভুলে যেতেন নিজের ঘরের কথা, সংসারের কথা, এমনকি স্ত্রী-পুত্রের কথাও। এসব নিয়ে কোনদিনও অনুযোগ কিংবা অভিমান প্রকাশ করেননি স্ত্রী রাশিদা খানম। সব দুঃখ, নৈরাশ্য ও বঞ্চনাকে মেনে নিয়ে তিনি আবদুল হামিদের পাশে অনেকটা নেপথ্য অভিভাবকের মতোই দায়িত্ব পালন করেছেন।
করিমগঞ্জ উপজেলার জাফরাবাদ গ্রামের মৃত আব্দুল হালিম খানের চার ছেলে আর দুই মেয়ের মধ্যে রাশিদা সবার বড়। বাড়ির পাশের মাছিমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পঞ্চম শ্রেণি পাস করার পর ১৯৬৩ সালে এসভি সরকারি বিদ্যালয় থেকে এসএসসি পাস করেন। এরপর কিশোরগঞ্জের গুরুদয়াল কলেজে ভর্তি হন। এ সময় পরিচয় হয় কামালপুরের সেই সম্ভাবনাময় তরুণ গুরুদয়াল কলেজ ছাত্র সংসদের তৎকালীন জিএস মো. আবদুল হামিদের সঙ্গে। পরিচয় থেকে প্রেম। তারপর বিয়ে। এইচএসসি পাস করার আগেই আবদুল হামিদের সঙ্গে পরিণয়সূত্রে আবদ্ধ হন তিনি।
তবে তাদের বিয়েটা এত সহজ ছিল না। রাজনীতি করা বোহেমিয়ান ছেলের সঙ্গে কিছুতেই বিয়ে দিতে রাজি ছিলেন না তার মামা-খালারা। কিন্তু আবদুল হামিদ আর রাশিদার মন যে সবার অন্তরালে বাঁধা পড়ে গেছে একে অন্যের প্রেমের বন্ধনে। এ বন্ধন ছিন্ন করার ক্ষমতা কারোরই নেই। তাদের অকৃত্রিম প্রেমের বন্ধন ছিন্ন করার জন্য রাশিদার পরিবার থেকে অনেক চেষ্টা ছিল বটে, কিন্তু তরুণী রাশিদার প্রেমের প্রগাঢ়তার কাছে পরিবারের সব চেষ্টাই শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়ে যায়। তাই এক সময় উভয় পরিবারের সম্মতির মধ্য দিয়ে এই প্রেমিকযুগলের অবিচ্ছিন্ন প্রেম সামাজিকভাবে চূড়ান্ত পরিণতি লাভ করে।
প্রেমিক-প্রেমিকা থেকে তারা হয়ে ওঠেন আদর্শ স্বামী-স্ত্রী। রাশিদার মাতামহ সেই সময়কার পাকিস্তান জাতীয় পরিষদের সদস্য মাওলানা সাইদুর রহমানের হস্তক্ষেপে ও মধ্যস্থতায় ১৯৬৪ সালে ৪ অক্টোবর এই প্রেমিকযুগল বিয়ের পিঁড়িতে বসেন। সময়ের হিসেবে আজ তাদের ৫৫তম বিয়ে বার্ষিকী।
রাশিদা হামিদ বলেন, এসএসসি পাস করার পর বিয়ে! মামা বিয়ের বিষয়ে মত বদলে ফেলতে পারেন। এজন্য তাড়াহুড়ো করে বিয়ে হয়ে যায়। স্বামী রাজনীতি করেন। কিশোরগঞ্জে একটি ছোট বাসায় থাকতাম। গ্রামের বাড়ি থেকে ছোট ছোট অনেক দেবর আর ভাগ্নে বাসায় থেকে লেখাপড়া করে। তাদের কেউ পঞ্চম শ্রেণিতে পড়ে, কেউবা ষষ্ঠ শ্রেণিতে। সারাদিন বাসায় লোকজন লেগেই থাকত। তাদের চা-নাশতা দেয়া, পরিবারের লোকজনের জন্য রান্না, খাওয়ানো সব আমাকে সামলাতে হতো।
‘বিয়ের পর হঠাৎ করে এমন অবস্থায় পড়লাম, কোনো অবসর ছিল না। নিজের দিকে খেয়াল রাখার সুযোগ ছিল না। টানাপোড়েনের সংসার। দিনেদিনে সংসার বড় হতে থাকে। ছন্দপতন ঘটে নিজের লেখাপড়ায়। তারপরও হতোদ্যম না হয়ে চেষ্টা চালিয়ে যেতে থাকি। গভীর রাতে একটু একটু করে পড়ি। এভাবে এইচএসসি পাস করি। স্বামী আর বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে নিজের জীবন নিয়ে কোনো চিন্তার সুযোগ পাইনি। তবে আমার স্বামী মানুষকে ভালোবাসেন। তিনি অতিশয় সহজিয়া ও সৎ রাজনীতিক। এজন্য একদিন সে ভালো করবে- এমন বিশ্বাস ছিল আমার’- এই প্রতিবেদকের সাথে একান্ত আলাপচারিতায় এমনটিই বলছিলেন, দেশের টানা দু’বারের রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের স্ত্রী রাশিদা হামিদ।
স্বামীর দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে জেল-জুলুম, হুলিয়া আর নির্যাতনের বর্ণনা দিতে গিয়ে রাশিদা হামিদ বলেন, ৫২’র ভাষা আন্দোলন, ৬৬’র শিক্ষা আন্দোলন, ছয়দফা, আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলা, সর্বোপরি ১৯৬৯ সালের গণ-আন্দোলন আর একাত্তরে মহান মুক্তিযুদ্ধে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন আবদুল হামিদ। মুক্তিযুদ্ধের সময় মিঠামইনে গ্রামে গ্রামে পালিয়ে বেড়াতে হয় রাশিদাকে। ডাকাতরা কেড়ে নেয় সবকিছু।
এমন কঠিন পরিস্থিতিতে সন্তানদের মুখে সময়মতো খাবার তুলে দিতে পারেননি। মেলেনি প্রয়োজনীয় কাপড়। তবে থামেনি তার জীবন-সংগ্রাম। আবদুল হামিদকে রাজনীতির কারণে বারবার জেলে যেতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর ১৯৭৬ সালে গ্রেফতার করা হয় আবদুল হামিদকে। দুই বছর পর তাকে জেল থেকে বের করে আনেন রাশিদা হামিদ।
রাশিদা হামিদের ছোট ভাই আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অধ্যক্ষ ডা. আ. ন. ম. নৌশাদ খান বলেন, ধৈর্য আর সহিষ্ণুতার চরম পরীক্ষা দিয়ে আমার বোন রাশিদা আপা এদেশের হাজারো নারীর আইডলে পরিণত হওয়ার যোগ্যতা অর্জন করেছেন। কঠিন পরিস্থিতিতে অবিচল থেকে স্বামীকে পেছনে থেকে প্রেরণা দিয়ে মর্যাদার আসনে তুলে এনেছেন তিনি। আপার জন্য আমাদেরও গর্বে বুক ভরে যায়।
রাষ্ট্রপতির ছোট ভাই মুক্তিযোদ্ধা অধ্যক্ষ আবদুল হক নুরু বলেন, বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সেনাবাহিনী বড় ভাই আবদুল হামিদকে কিশোরগঞ্জের বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায়। সেই সময়কার তাঁর শিক্ষক গুরুদয়াল কলেজের অধ্যক্ষ ওয়াসীম উদ্দীন আহম্মদকে দিয়ে রাতে আবদুল হামিদকে বাসা থেকে ডেকে বের করা হয়। সকালে ভাবী রাশিদা হামিদ জানতে পারেন, তার স্বামীকে আর্মিরা ধরে নিয়ে গেছে। কিশোরগঞ্জ জেল থেকে তাকে পাঠানো হয় ময়মনসিংহ কারাগারে। পরে আবদুল হামিদকে নেয়া হয় রাজশাহী ও কুষ্টিয়া কারাগারে।
কুষ্টিয়া কারাগারে থাকার সময় এক পর্যায়ে আবদুল হামিদ অসুস্থ হয়ে পড়লে তাঁকে ঢাকার পিজি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ওই সময় ভাবী রাশিদা খানম স্বামীকে দেখতে ঘুরে বেড়ান দেশের বিভিন্ন কারাগারে। একদিকে পরিবার আরেক দিকে সংসার। দুই দিকই সামলাতে হয় তাকে। হাসপাতালে ভর্তির পর রাশিদা হামিদ আদালতে রিট করেন।
রাষ্ট্রপতির জ্যেষ্ঠপুত্র বর্তমান সংসদ সদস্য রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক বলেন, বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের মতোই আমার মা মানুষের পাশে থেকে সারাজীবন পরিবার, এলাকাবাসী ও আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী ও সাধারণ সমর্থকদের সেবা করেছেন। মমতাময়ী একজন মায়ের যে চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য থাকা দরকার আমার মায়ের মধ্যে তা পরিপূর্ণভাবেই রয়েছে। তখন আমি ছোট হলেও মায়ের সেই স্নেহপূর্ণ স্মৃতির কথা আজও জ্বলজ্বল করে। আব্বার কারাবাসকালীন চরম দুর্দিনেও তিনি আমাদেরকে বাবার অভাব বুঝতে দেননি। সেই মায়ের সন্তান হতে পেরে আমি নিজেও গর্ববোধ করি। প্রকৃত মায়ের আদর দিয়ে তিনি আমাদের এতগুলো ভাই-বোনকে বড় করেছেন। তিনি একজন মহান শিক্ষক। তার কাছ থেকে আমরা জীবনের পাঠ নিয়েছি।
পরিবারের সদস্যরা জানান, তখন ১৯৮১ সাল। দেশের রাষ্ট্রপতি সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান। তার পিএস ছিলেন রাশিদা হামিদের মামা কর্নেল এ ওয়াই এম মাহফুজুর রহমান। তাকে দিয়ে আবদুল হামিদ ও রাশিদা হামিদকে ক্যান্টনমেন্টের বাসায় ডেকে পাঠান জিয়াউর রহমান। তাকে প্রস্তাব দেয়া হয় আওয়ামী লীগ বাদ দিয়ে তার মন্ত্রিপরিষদে যোগ দিতে। কিন্তু রাশিদা হামিদ ও তার স্বামী আবদুল হামিদ সেই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেন। এজন্য অনেক অত্যাচার সহ্য করতে হয় তাদের।
রাষ্ট্রপতির কণিষ্ঠপুত্র রাসেল আহমেদ তুহিন বলেন, আম্মা আমাদের পরিবারের সকল সদস্যদের কাছে আদর্শের জীবন্ত প্রতীক। আব্বা রাজনীতির বাইরে পরিবারের খোঁজ নিতে পারতেন না। সবকিছু সামলাতে হয়েছে আম্মাকে। আম্মার কাছে থেকে শুনেছি, পঁচাত্তরে জাতির জনককে হত্যার পর গোটা পরিবারকে কঠিন সময় পার করতে হয়।
পরিবারের উপার্জনক্ষম কেউ ছিল না। চরম অবস্থায় বাধ্য হয়ে ভরণ-পোষণের জন্য আম্মা পরিবারের সবাইকে নিয়ে আশুগঞ্জে মামার বাসায় চলে আসেন। আমরা ছয় মাস সেখানে ছিলাম। আব্বা জেলে থাকার সময় ১৫ দিন পরপর আম্মা আমাদের নিয়ে আব্বাকে দেখতে যেতেন। আইনি বিষয়গুলো নিজেই খোজঁ-খবর নিতেন।
আব্বাকে রাজশাহী জেলে নেয়ার পর আম্মার জন্য আরও কঠিন হয়ে পড়ে। এমন সময় গেছে টাকার অভাবে আমাদের একমাত্র ছোট বোনটি অসুস্থ হয়ে পড়লেও তার চিকিৎসা করাতে পারেননি। তারপরও আম্মা কোনো কিছুর বিনিময়ে কোনো আপস করেননি। অবিচল থেকে আব্বাকে সাহস জোগাতেন।
কুষ্টিয়া জেল থেকে আব্বাকে অসুস্থ অবস্থায় পিজি হাসপাতালে ভর্তি করার পর আম্মা হাইকোর্টে রিট করেন। সেই সময়কার প্রধান বিচারপতি আব্দুস সাত্তারের সঙ্গে দেখা করে বিনাবিচারে আটক করে রাখা আব্বার মুক্তির জন্য তার সহযোগিতা চান।
মাকে নিয়ে গর্বিত তিন ছেলে এমপি রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক, রাসেল আহমেদ তুহিন ও রিয়াদ আহমেদ তুষার এবং একমাত্র মেয়ে স্বর্ণা হামিদ। তারা জানান, প্রচণ্ড অভাব-অনটনের মধ্যেও কোনোকিছু অপূর্ণ রাখেননি তাদের প্রিয় আম্মাজান। আবদুল হামিদের মতোই সাধারণ ও সহজিয়া জীবনে অভ্যস্ত বেগম রাশিদা হামিদ। আবদুল হামিদ স্পিকার হওয়ার আগ পর্যন্ত কিশোরগঞ্জ শহরে তিনি প্রতিষ্ঠা করেন সান রাইজ কিন্ডারগার্টেন নামক একটি স্কুল। সেই স্কুলের প্রধান শিক্ষক হিসেবে কর্মরত ছিলেন রাশিদা হামিদ।
দেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭২ সালে গুরুদয়াল সরকারি কলেজ থেকে স্নাতক পাস করেন রাশিদা হামিদ। বর্তমানে রাশিদা হামিদ বাবার নামে প্রতিষ্ঠিত আবদুল হালিম খান ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান। তিনি একজন শিক্ষানুরাগী। প্রতি বছর এ ফাউন্ডেশন কৃতী শিক্ষার্থীদের অনুদান প্রদান করেন। এই প্রতিষ্ঠান থেকেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল। তার পরিবারের সদস্যরা এটি পরিচালনা করে থাকেন।
আবদুল হালিম খান ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক আনোয়ার হোসেন বাচ্চু জানান, রাশিদা আপা একজন আদর্শ নারী। তার মতো মহিয়সী নারীকে পেয়ে ফাউন্ডেশনের সবাই গর্বিত ও আনন্দিত। প্রচণ্ড ব্যস্ততার মধ্যেও তিনি সব প্রয়োজনে ছুটে আসেন ফাউন্ডেশন ও কলেজের নানা কাজে। প্রায় প্রতি সপ্তাহে তিনি সবার খোঁজ-খবর নেন। তিনি আমদের আদর্শ ও নীতিবান হতে শিখিয়েছেন।
এলাকার সবার প্রিয় আপা রাশিদা হামিদ বলেন, স্বামী আবদুল হামিদ জাতীয় সংসদে সাতবার এমপি হয়েছেন। সংসদে বিরোধীদলীয় উপনেতা, ডেপুটি স্পিকার, স্পিকার, অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি ও পরপর দু’বার রাষ্ট্রপতি নির্বাচিত হয়েছেন। এটা আমার জন্য অনেক গর্বের। কারণ আমাদের প্রেমের বিয়েতে পরিবারের কোনো কোনো সদস্যদের বিরোধীতা ছিল। পরে তারা সবাই আমাদের দু’জনার সম্পর্কের গভীরতা উপলব্ধি করে শেষ পর্যন্ত আমাদের বিয়েটা মেনে নেন।
সেই থেকে দু’জন একসাথে, একপথে দীর্ঘ ৫৫টি বছর পার করে এসেছি। স্বামীর সার্বক্ষণিক সঙ্গী হিসেবে যতটুকু পেরেছি স্বামীকে শক্তি-সাহস ও প্রেরণা যুগিয়েছি। বঙ্গভবনে থাকলেও আমার মন পড়ে থাকে গ্রামে। গ্রামীণ পরিবেশের সেই কোলাহল, সাধারণ মানুষজনের আন্তরিকতা ও শিশুদের মুখরতা আমাকে আজও টানে। আমি মনে করি সততা-ত্যাগ, জনসম্পৃক্ততা আর মানুষের ভালোবাসাই আবদুল হামিদকে আজকের পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
তিনি আরও বলেন, তিনি এখনও সেই আগের মতোই আছেন। সংসার জীবন শুরু করেছিলাম এক কঠিন ও প্রতিকূল পরিস্থিতিতে। তখন রাত দেড়টা-দুটার আগে ঘুমাতে পারতাম না। সবাই ঘুমিয়ে গেলে বই নিয়ে পড়তে বসতাম। এভাবেই অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। এখনও রাত দুটার আগে ঘুমাতে পারি না।
তিনি হাসতে হাসতে বলেন, আবদুল হামিদকে কতটা ভালোবাসি তা কেবল আমিই জানি। ওকে কলেজ জীবন থেকেই ভালোবাসি, কারণ সে মানুষকে ভালোবাসে। কারও ক্ষতি করে না। তার সততা নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। এখনও বঙ্গভবনে লুঙ্গি পরে এলাকার কোন সাধারণ মানুষ এলে তিনি সঙ্গে সঙ্গে লাফ দিয়ে উঠে পড়েন। এ কারণেই এ মানুষটিকে এতবেশি ভালোবাসি, শ্রদ্ধা করি।
কিশোরগঞ্জনিউজ.কম