দুই বাংলার জনপ্রিয় অভিনেত্রী শ্বেতার পৈত্রিক নিবাস বাংলাদেশে!

স্টার জলসায় প্রচারিত জনপ্রিয় সিরিয়াল সিঁদুর খেলায় সিমন্তী কিংবা ভালোবাসা.কমের মিঠি চরিত্রের সুহাসিনী মিষ্টি চেহেরার অধিকারিনী অভিনেত্রী শ্বেতা। কলকাতায় ভীষণ জনপ্রিয় এই অভিনেত্রী। পাশাপাশি এপার বাংলায়ও তার ভক্তের সংখ্যা কম নেই। জন্মসূত্রে ভারতীয় নাগরিক হলেও তার পৈত্রিক নিবাস বাংলাদেশেই। হয়তো সেটা অনেকের কাছেই অজানা। বাংলাদেশের রংপুরে তার বাবা, ঠাকুরদাদার আদিনিবাস। অভিনেত্রী শ্বেতার জন্মস্থান দার্জিলিং-এ।
সপ্তম শ্রেণী’তে পড়া অবস্থায় তিনি প্রথম ক্যামেরায় দাঁড়িয়েছিলেন। তার প্রথম কাজ ছিলো স্টার জলসায় সেই সময়ের জনপ্রিয় টিভি সিরিয়াল ‘সিঁদুর খেলা’। এরপর একে একে তিনি কাজ করেন স্টার জলসায় ‘ভালোবাসা.কম’, জি-বাংলায় ‘তুমি রবে নীরবে’ ‘ঝাড়োয়ার ঝুমকো’, কার্লাস বাংলায় ‘কনক কাঁকন’। শ্বেতার সাবলীল অভিনয় সকল দর্শকদের বিশেষ করে মহিলা দর্শকদের কাছে বেশ জনপ্রিয়তা অর্জন করে নেয়।
বাংলা টিভি সিরিয়াল ছাড়াও তিনি ‘জয় কানা হে লাল কি’ নামে একটি হিন্দি সিরিয়ালে কাজ করেছেন। জনপ্রিয় এই অভিনেত্রীর সাথে আলাপনে জানা অজানা অনেক কথাই উঠে এলো। পাঠকদের জন্য সেই কথপোকথনের চুম্বক অংশ তুলে ধরা হলোঃ-
বাংলাদেশে আসা হয়?
শ্বেতাঃ আসা হবে না কেন! প্রায় আসা হয়। মা ভাবছে একবারে চলে আসতে। বাংলাদেশে যেহুতু আমার বাবার সম্পত্তি দার্জিলিং থেকে বেশি। যেগুলো আমার বড় বাবারা মানে বাবার বড় ভাইরা দেখাশোনা করে। বাবা ব্যবসা করার জন্য বাংলাদেশ থেকে মাকে নিয়ে দার্জিলিং গিয়েছিল। এরপর ওখানেই আমার আর বড় দিদি ও ছোট ভাই এর জন্ম। বাবা মারা যাবার পর আমরা দার্জিলিং থেকে কোলকাতা যাই।
ভারতীয় চ্যানেলগুলো বাংলাদেশে সম্প্রচারের কারণে সহজেই এদেশের মানুষ আপনার কাজগুলো দেখতে পারেন। এ দেশের দর্শকদের সম্পর্কে কতোটা ধারণা আপনার?
শ্বেতাঃ একবার হয়েছে কি দমদম টাবিন রোড থেকে গাড়ি করে বাসায় ফিরছিলাম হঠাৎ মাঝরাস্তায় ডাইভার গাড়ি ব্রেক করলো, আমি তো রেগেই গিয়েছিলাম। তখন সে বললো ছোট দিদি ১০ মিনিট ধরে লক্ষ্য করছি কে যেন গাড়ির পিছনে দৌড়াচ্ছে। তারপর আমি একটু ভয় পেলাম। যেহেতু জামাইবাবু রাজনীতি করে, তাই ভাবলাম কোন শত্রু হবে কিনা। এরপর ডাইভার নেমে লোকটিকে বললো সমস্যা কি আপনার? লোকটি বললো, দাদা আপনার পায়ে ধরি আমি বাংলাদেশের খুলনা থেকে এসেছি। শ্বেতা দিদির সাথে একটা সেলফি তুলবো তাকে কাছ থেকে একবার দেখবো! আমার বউ তার অনেক বড় ভক্ত। তারপর আমি একটু সাহস পেলাম গাড়ি থেকে নামার পর দেখি সে হাপ্পাছে। এতটা রাস্তা দৌড়েছে। এসে বললো দিদি আমার বিশ্বাসই হচ্ছে না আমি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি। স্বপ্ন মনে হচ্ছে। এরপর পাশের এক রেস্টুরেন্ট নিয়ে গিয়ে তাকে বিরিয়ানী খাওয়ালাম। তার সাথে সেলফি তোলা হল। এভাবে আমাকে দর্শক ভালবাসে সেদিনই বুঝেছিলাম।
বাংলাদেশের সিনেমা বা নাটক দেখা হয় আপনার?
শ্বেতাঃ বাংলাদেশের দুটি মুভি দেখেছি। একটি দেখে চোখে জল চলে এসেছিল সেটি আনন্দ অশ্রু। এছাড়া কদিন আগে শ্রাবন্তী দিদির যদি একদিন মুভি দেখেছি। ভাল লেগেছে।
বাংলাদেশের কোন অভিনয় শিল্পীর অভিনয় আপনার কাছে ভালো লাগে?
শ্বেতাঃ অভিনেতা রাজ্জাক। উনার একটি মুভি দেখেছিলাম অনেক ভাল অভিনয়। এছাড়া জয়া আহসান দিদির বিসর্জন মুভি ভাল লেগেছে। সে ভাল অভিনয় করে।
বাংলাদেশের নাটক বা সিনেমায় অভিনয়ের জন্য কখনো কোনো প্রস্তাব পেয়েছিলেন?
শ্বেতাঃ আমার বোনের প্রোডাকশন মানে ব্লুজ এর বাহিরে কখনো কাজ করা হয়নি আর করবোও না। সুতরাং বাংলাদেশে আমার কাজ করা হবে না। তবুও ক’দিন পর পর বাংলাদেশ থেকে অনেক নাটক ও মুভির অফার আসে।
হিন্দি সিরিয়ালে আপনার দেখা পেয়েছি, হিন্দি সিনেমায় কি পাবো?
শ্বেতাঃ হিন্দি সিরিয়াল জয় কানা হে লাল কি তে কাজ করা হয়েছে ডালি চরিত্রে। যেটা স্টার ভারত এ প্রচার হতো। এরপর অনেক মুভি ও হিন্দি সিরিয়াল অফার আসে মুম্বাই থেকে। কিন্তু বাহিরের প্রোডাকশনে কাজ করবো না। এজন্য অন্য সিরিয়ালগুলো করা হয়নি। আর মুভির জন্য শর্ট ড্রেস পড়তে হয় যেটা আমি কখনোই পারবো না। এছাড়া অনেক সময় ঘনিষ্ঠ কোন দৃশ্য থাকে যেমন হিরোকে জড়িয়ে ধরা এসব আমাকে দিয়ে সম্ভব নয়। এজন্য মুভির জন্য আমি না। সিরিয়ালে আছি, বেশ ভাল আছি।
অভিনয়টা কি পেশা নাকি নেশা?
শ্বেতাঃ কিছুটা নেশা বলতে পারেন। অভিনয়টা আমার জীবনে পেশা হোক এটা আমি চাই না। সেই জন্য চলছে পড়াশোনা। আর বর্তমানে আমি পড়াশোনা নিয়ে একটু ব্যস্ত রয়েছি।
বর্তমানে কি কি কাজ নিয়ে ব্যস্ত আছেন?
শ্বেতাঃ টিভিতে আমার আরো দুটি সিরিয়াল যাবে যেগুলোর কাজ প্রায় শেষ, একটা স্বর্গ হতে অন্যটা প্রতিশোধ এর সাত পাঁক (নাম পরিবর্তন হতে পারে)। এছাড়া হিন্দি সিরিয়াল নাগিন ৬ এর ফিরতে পারি…
অভিনেত্রী শ্বেতা।
অভিনয়ের পাশাপাশি সামাজিক কর্মকাণ্ডে নিজেকে জড়িত রেখেছেন। সেটা নিয়ে কিছু বলুন?
শ্বেতাঃ বাবা মারা যাওয়ার আগে কোলকাতায় সম্পর্ক নামে একটি আশ্রম তৈরি করেছিল অনাথ বাচ্চাদের জন্য। সেটি আমার বড় বোন রুজিরা দিদিই দেখাশোনা করতো কিন্তু এবার প্রথমবারের মত দিদি দার্জিলিং থেকে সংসদ সদস্য (তৃণমূল কংগ্রেস) হয়েছে। সুতরাং অনেক দায়িত্ব ওর উপর, এ কারণে সম্পর্ক আশ্রম মা আর আমিই দেখাশোনা করি। দিদির প্রোডাকশন স্নেহাশীষ চক্রবর্তী দেখাশোনা করে। এই চলছে।
বাংলাদেশ নাকি কলকাতা কোনটা বেশী ভালোবাসেন?
শ্বেতাঃ বাংলাদেশকে প্রচুর ভালবাসি…আর পশ্চিমবঙ্গের সাথে বাংলাদেশ এর কোন অমিল দেখি না। সব এক। তাই যখন বাংলাদেশে আসি, মনে হয় না যে দেশের বাহিরে আছি। তবে ঢাকার ট্রাফিক জ্যাম কে অনেক বিরক্ত লাগে। আর রংপুর এলে একটু সমস্যা হয় রাস্তাগুলো মাটির বর্ষায় অনেক কাঁদা হয়।
অঞ্জন দাস