চলতি বছর স্থানীয় বাজারে এসি বিক্রিতে রেকর্ড করেছে ইলেকট্রনিক্স জায়ান্ট ওয়ালটন। ২০১৮ সালের তুলনায় চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে আগস্ট পর্যন্ত প্রায় ১২২ শতাংশ বেশি এসি বিক্রি হয়েছে। ২২ শতাংশ মার্কেট শেয়ার নিয়ে দেশের এসি বাজারে এখন শীর্ষে ওয়ালটন। এ অবস্থায় পণ্য গবেষণা ও উন্নয়ন, বিক্রয়োত্তর সেবা এবং উৎপাদন বৃদ্ধিতে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে ওয়ালটন।
এসি বিক্রির এই অর্জন উপলক্ষে শনিবার ৩১ আগস্ট রাজধানীর ওয়ালটন করপোরেট অফিসে আয়োজন করা হয় ‘অ্যাচিভমেন্ট সেলিব্রেশন প্রোগ্রাম’। বর্ণাঢ্য এ আয়োজনে কাটা হয় বিশাল কেক। উন্মুক্ত করা হয় রিভারাইন প্রো এবং ক্রিস্টালাইন সিরিজের ১.৫ এবং ২ টনের নতুন ৬ মডেলের এসি। পাশাপাশি এসি বিক্রিতে বিশেষ অবদান রাখায় ওয়ালটন প্লাজা সেলস অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট, ওয়ালটন ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্ক এবং মার্সেল ডিস্ট্রিবিউটর নেটওয়ার্কের ২৩ জন কর্মকর্তা ও ২০টি বিক্রয় প্রতিষ্ঠানকে পুরস্কৃত করা হয়। নতুন মডেলের এসি উন্মোচনের পর পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেন ওয়ালটন হাই-টেক ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের চেয়ারম্যান এস এম নূরুল আলম রেজভী, ভাইস চেয়ারম্যান এস এম শামসুল আলম এবং পরিচালক এস এম মাহবুবুল আলম। এ সময় উপস্থিত ছিলেন চিফ টেকনিক্যাল অফিসার ই এম ইয়াং, ইন্টারন্যাশনাল বিজনেস ইউনিটের (আইবিইউ) প্রেসিডেন্ট এডওয়ার্ড কিম, এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ইভা রিজওয়ানা, এমদাদুল হক সরকার, নজরুল ইসলাম সরকার, এস এম জাহিদ হাসান, হুমায়ুন কবীর, তানভীর রহমান, উদয় হাকিম, সিরাজুল ইসলাম, মোহাম্মদ রায়হান, আমিন খান, ড. মো. সাখাওয়াত হোসেন, ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডিরেক্টর ফিরোজ আলম ও শাহজাদা সেলিম, অপারেটিভ ডিরেক্টর রবিউল আলম ভুঁইয়া, ওয়ালটন এসির চিফ অপারেটিং অফিসার (সিওও) প্রকৌশলী ইসহাক রনি, অ্যাডিশনাল অপারেটিভ ডিরেক্টর খোন্দকার শাহরিয়ার মুরশিদ, ডেপুটি অপারেটিভ ডিরেক্টর মফিজুর রহমান, ওয়ালটন এসির গবেষণা ও উন্নয়ণ বিভাগের প্রধান সন্দীপ বিশ্বাস, প্রোডাক্ট ম্যানেজার জাহিদুল ইসলাম প্রমুখ।
ওয়ালটন এসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. তানভীর রহমান বলেন, এ বছর দেশের বাজারে যে পরিমাণ এসি বিক্রির টার্গেট ছিল ওয়ালটনের; আগস্ট পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার প্রায় ৭৫ শতাংশ বিক্রি হয়েছে। দেশের বাজারের পাশাপাশি এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্য ও আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে ওয়ালটন এসি। সম্প্রতি দক্ষিণ কোরিয়ার ব্র্যান্ড হুন্দাই এর সঙ্গে এসি সরবরাহের চুক্তি হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি সংযোজন এবং গবেষণা ও উন্নয়নে ব্যাপক বিনিয়োগ করা হচ্ছে। বাড়ানো হচ্ছে উৎপাদন লাইন।
তার মতে, ওয়ালটন এসির বিক্রয় বৃদ্ধিতে বেশকিছু বিষয় উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রেখেছে। যার মধ্যে রয়েছে সর্বাধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ইনভার্টার, আয়োনাইজার ও আইওটি বেজড স্মার্ট এসির উৎপাদন। ইনভার্টার এসির কম্প্রেসরে ১০ বছরের গ্যারান্টি, ৬ মাসের রিপ্লেসমেন্ট গ্যারান্টি সুবিধা, একচেঞ্জ অফারে যেকোনো ব্র্যান্ডের এসি বদলে ওয়ালটনের নতুন এসি ক্রয়ের সুযোগ, ফ্রি ইন্সটলেশন এবং ডিজিটাল ক্যাম্পেইনের আওতায় ১ বছরের বিদ্যুৎ বিল ফ্রি অথবা সর্বোচ্চ ১ লাখ টাকার ক্যাশ ভাউচার পাওয়ার সুযোগ প্রদান।
ওয়ালটন এসির চিফ অপারেটিং অফিসার প্রকৌশলী ইসহাক রনি জানান, দেশের বাজারে ওয়ালটনের রয়েছে ভেনচুরি, রিভারাইন, রিভারাইন প্রো এবং ক্রিস্টালাইন সিরিজের এক, দেড় এবং দুই টনের বিভিন্ন মডেলের স্প্লিট এসি। এর মধ্যে রয়েছে ব্যাপক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী আইওটি বেজড স্মার্ট ইনভার্টার, টুইন ফোল্ড ইনভার্টার, ফিক্সড স্পিড আয়োনাইজার। ইনভার্টার প্রযুক্তির ওয়ালটন এসি ৬০ শতাংশ পর্যন্ত বিদ্যুৎ সাশ্রয় করে। আয়োনাইজার প্রযুক্তি রুমের বাতাস রাখে ধুলো-ময়লা ও ব্যাকটেরিয়ামুক্ত। এসির দীর্ঘস্থায়ীত্বের জন্য কনডেন্সারে ব্যবহার করা হয়েছে মরিচারোধক গোল্ডেন কালার ফিন প্রযুক্তি। কম্প্রেসারের অ্যাকুইরেসি এবং কুলিং সিস্টেমে নিশ্চিত করা হয়েছে সর্বোচ্চ পারফেকশন। কম্প্রেসারে বিল্ট-ইন অটোমেটিক ভোল্টেজ প্রোটেকশন সিস্টেম থাকায় বিদ্যুৎ প্রবাহের বিচ্যুতি বা তারতম্যেও ওয়ালটন এসির ক¤েপ্রসারের ক্ষতি হয় না। ওয়ালটন এসিতে ব্যবহার করা হয়েছে বিশ্বস্বীকৃত সম্পূর্ণ পরিবেশবান্ধব আর৪১০এ রেফ্রিজারেন্ট। রয়েছে টার্বো কুলিং মোড, যা রুমের তাপমাত্রা দ্রুত কমিয়ে রুমকে ঠান্ডা করে।
নতুন মডেলের আইওটি বেজড স্মার্ট এসি প্রসঙ্গে ওয়ালটনের ডেপুটি অপারেটিভ ডিরেক্টর মফিজুর রহমান জানান, এসিতে প্রতিদিন বা মাসিক বিল আসছে কত? ভোল্টেজ লো না হাই? কম্প্রেসর কি ওভারলোডে চলছে? ওয়ালটনের স্মার্ট এসিতে এসবের উত্তর জানা যায় সহজেই। গ্রাহক বিশ্বের যেকোনো প্রান্তে বসে মুঠোফোনের মাধ্যমে এসি পরিচালনা করতে পারেন। ‘ভয়েস কন্ট্রোল’ বা ‘অ্যামাজন ইকো’র মাধ্যমে রিমোট কন্ট্রোল ছাড়াই ওয়ালটন স্মার্ট এসির শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বাড়ানো, কমানো, চালু বা বন্ধ করা যায়।
স্পিট এসি ছাড়াও ৪ ও ৫ টনের সিলিং ও ক্যাসেট টাইপ এসিও উৎপাদন এবং বাজারজাত করছে ওয়ালটন। পাশাপাশি, শিল্প-কারখানা, করপোরেট প্রতিষ্ঠান, শপিং মল, হাসপাতাল, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান, আবাসিক ভবনসহ মাঝারি ও বড় আকারের স্থাপনার জন্য ১৭ এবং ২৫ টনের ভিআরএফ (ভেরিয়্যাবল রেফ্রিজারেন্ট ফ্লো) এসি তৈরি করছে ওয়ালটন।
অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ওয়ালটনের প্রতিটি এসি আন্তর্জাতিক মানের টেস্টিং ল্যাব নাসদাত-ইউটিএস থেকে মান নিশ্চিত হওয়ার পর বাজারজাতকরা হয়। গ্রাহক পর্যায়ে দ্রুত ও সর্বোত্তম বিক্রয়োত্তর সেবা পৌঁছে দিতে ওয়ালটনের রয়েছে আইএসও সনদপ্রাপ্ত সার্ভিস ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম। এর আওতায় সারা দেশে রয়েছে ৭০টিরও বেশি সার্ভিস সেন্টার। সেখানে নিয়োজিত আছেন আড়াই হাজারের বেশি প্রকৌশলী ও টেকনিশিয়ান।
এসি বিক্রিতে বিশেষ অবদান রাখার জন্য ‘অ্যাচিভমেন্ট সেলিব্রেশন প্রোগ্রাম’ এ পুরস্কারপ্রাপ্তদের হাতে ক্রেস্ট ও সনদ তুলে দেয়া হয়। এরপর মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান এবং র্যাফেল ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
অঞ্জন দাস